shono
Advertisement
Chupacabra

রাতের অন্ধকারে চুষে খায় রক্ত! আতঙ্কের আর এক নাম চুপাকাব্রা

রহস্যময় এই প্রাণীকে ঘিরে শোনা যায় হাড়হিম সব মিথ।
Published By: Biswadip DeyPosted: 08:16 PM Aug 31, 2024Updated: 10:41 AM Sep 01, 2024

বিশ্বদীপ দে: অন্ধকার রাত। শুনশান পৃথিবীর বুকে কার পদচারণা! ঝলসে উঠছে তার জ্বলজ্বলে লাল চোখ। ঝকঝকে দাঁত। তীক্ষ্ণ নখ। গরু-ছাগলদের গলায় দাঁত ফুটিয়ে তাদের একেবারে রক্তশূন্য করে ফেলে মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এই মনস্টারই চুপাকাব্রা। সারা পৃথিবীর রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে যার আবেদন গত কয়েক দশকে ক্রমবর্ধমান। বিংশ শতাব্দীর আটের দশকের শেষ। কিংবা নয়ের দশকের শুরুর বছরগুলো। প্রায়ই কেউ না কেউ দেখতে পেত তাকে। তবে সম্ভবত পুয়ের্তো রিকোয় প্রথমবার দেখা মিলেছিল চুপাকাব্রার। সেই শুরু। লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণপশ্চিম আমেরিকার লোকগাথা হয়ে উঠেছে চুপাকাব্রা। এমনকী অনেক দূরে, চিনেও কেউ কেউ দাবি করলেন তাঁরা চুপাক্যাকাকে দেখেছেন। কেউ বলেন, এরা চারপেয়ে। আবার দুপেয়ে বলেও তাদের দাবি করেছেন কেউ কেউ।

Advertisement

কিন্তু কী অর্থ এই 'চুপাকাব্রা'র? আসলে এটি একটি স্প্যানিশ শব্দ। যার অর্থ 'ছাগলখেকো'। মোক্ষম নামকরণ সন্দেহ নেই। তবে সেই অর্থ ছাগল তো মানুষও ভক্ষণ করে। কিন্তু চুপাকাব্রার বিষয়টা অন্য। তারা চরিত্রে আস্ত ভ্যাম্পায়ার। রাতের অন্ধকারে গবাদি পশুর স্রেফ রক্ত চুষে খাওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের দেখতে পাওয়ার পরই দেখা যেত মাটিতে পড়ে রয়েছে নিরীহ জীবটির নিষ্প্রাণ রক্তহীন ফ্যাকাশে শরীর।

 

[আরও পড়ুন: গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধ’! বিজেপিশাসিত হরিয়ানায় পিটিয়ে ‘খুন’ বাংলার শ্রমিককে]

কিন্তু... এই সব মনস্টারদের ঘিরে যতই গল্পের মুচমুচে সোনালি আভা থাকুক, আজকের পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা শক্ত। তাই টি-শার্ট, কফি মাগে ছবি থাকলেও, রক্তমাংসের চুপাকাব্রাকে ঘিরে সন্দেহের বাতাবরণ যে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে ইয়েতি কিংবা বিগ ফুট অথবা লকনেস মনস্টারদের মতো এরা কিন্তু অদৃশ্য থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রাণীকে চুপাকাব্রা বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়, এরা কোনও রহস্যময় প্রজাতির প্রাণী নয়। বরং বিশ্রী চামড়ার অসুখে ভোগা কোয়োতে (মার্কিন শিয়াল), কুকুর কিংবা কুকুর ও কোয়োতের সংকর। অসুখে ভুগে গায়ের লোম উঠে গিয়ে চামড়া কুঁচকে যাওয়ার ফলে ওইরকম অদ্ভুত চেহারা ধারণ করেছে। মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ব্য়ারি ওকোনারের মতে, ''আমার মনে হয় না এই নিয়ে আর কোনও ব্যাখ্যার প্রয়োজনও আছে বলে।'' একই মত বন্যপ্রাণ-অসুখ বিশেষজ্ঞ কেভিন কিলেরও। একটি পচাগলা 'চুপাকাব্রার শব' দেখে তিনি বলছেন, ''দেখলেই বোঝা যায় ওটা একটা কোয়োতেই। আমি জঙ্গলে ওটাকে ঘুরতে দেখলেও চুপাকাব্রা বলে ভাবতাম না। তবে অন্য কোনও লোক দেখলে সেটা ভাবতেই পারে।''

 

যদি সেটাই হয়, তাহলে গবাদি পশুকেই তারা বেছে নেয় কেন? আসলে অসুখে ভুগে তাদের শরীরে এমন এক অস্বস্তি কাজ করে স্বাভাবিক শিকার ধরার ক্ষমতাই হ্রাস পেতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে গরু-ছাগল জাতীয় নিরীহ প্রাণীকে আক্রমণ করাই তাদের পক্ষে শ্রেয়।

কিন্তু এমনটাই একমাত্র মত নয়। পোর্টল্যান্ডে অবস্থিত 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রিপ্টোজুওলজি মিউজিয়ামে'র কর্তা লোরেন কোলম্যান বলছেন, ''যুক্তিগুলো ভালো। কিন্তু এমন মনে করার কোনও কারণ নেই, এর সাহায্যে চুপাকাব্রার পুরো মিথটাকে ব্য়াখ্যা করা সম্ভব।'' তাঁর মতে, প্রথমে চুপাকাব্রাকে দ্বিপদী প্রাণী হিসেবেই বলা হচ্ছিল। তিনপেয়ে, ছোট লোমে ঢাকা রহস্যময় প্রাণী হিসেবেও এর বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু নতুন সহস্রাব্দে এসে মূলত চারপেয়ে থিওরিটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। হতেই পারে রোগগ্রস্ত কোয়েতে বা কুকুর জাতীয় প্রাণীদের লোকে চুপাক্যাব্রা বলে ভুল করছে। কিন্তু এর আড়ালে থেকে যেতেই পারে সত্যিকারের চুপাকাব্রা!
আসলে মানুষের মনের মধ্যে থাকে রোমাঞ্চের প্রতি অদম্য আকর্ষণ। যা থেকে তৈরি হতে থাকে নিটোল সব মিথ। আর এহেন মিথই তৈরি করে স্কটল্যান্ডের লকনেস মনস্টার কিংবা হিমালয়ের তুষারঝড়ের ভিতরে হেঁটে যাওয়া ইয়েতির মিথ। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর রুকুকে মনে পড়ে? যে বিশ্বাস করত অরণ্যদেব সত্যি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক সত্যি, ডাকু গন্ডারিয়া সত্যি। মানুষের মনের মধ্যে থাকা সেই চিরকিশোরই বিশ্বাস করে চুপাকাব্রাও সত্যি। সেই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরতে চায় সে।

[আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে শ্রেয়ার প্রতিবাদ, পিছিয়ে দিলেন কলকাতার কনসার্ট]

চুপাকাব্রা নিয়ে আরও ব্যাখ্যা রয়েছে অবিশ্বাসীদের। বিজ্ঞানীদের গুপ্ত পরীক্ষায় জিনগত পরিবর্তন ঘটানো কুকুর জাতীয় প্রাণীরা এমন চেহারাপ্রাপ্ত হয় এমনটাও দাবি করেন কেউ কেউ। আবার কন্সপিরেসি থিয়োরিস্টরা এর মধ্যে এলিয়েনের 'ভূত'ও দেখেন বটে। তাঁদের এক অংশের দাবি এই সব চুপাকাব্রা আসলে পৃথিবীতে আসা ভিনগ্রহীদের পরিত্যক্ত পোষ্য!
তবে রক্তমাংসের চুপাকাব্রা আছে না নেই, এই তর্ক সব সময়ই ভূত আছে না নেই জাতীয় তর্কের চেহারা নেয়। কাজেই তা নিয়ে আলোচনা কখনওই থেমে থাকবে না। কিন্তু শেষ করার আগে একদম অন্য একটি দিকের উল্লেখ করা যেতেই পারে। কেবল দেওয়ালে ঝোলানো রহস্যময় ছবি বা কফি মাগ-টি-শার্টের ছবি হয়ে নয়। আমেরিকার বহু অংশে চুপাকাব্রা হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের প্রতীকও! ১৯৯৬ সালে মেক্সিকোয় সেই প্রদেশের সরকারি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেয় একদল প্রতিবাদী। তারা আস্ত চুপাকাব্রা সেজে প্রতিবাদে নেমেছিল! রহস্যময় প্রাণীর গল্পগাছা থেকে এভাবেই ধীরে ধীরে প্রতিবাদের মুখও হয়ে উঠেছে এই মনস্টার। সে সত্যিই থাকুক বা না থাকুক, প্রতিবাদের ভাষ্য তাকে নির্মাণ করে নিয়েছে নিজের মতো। ফলে তার অমরত্ব নিয়ে আর সংশয় থাকা উচিত নয়।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • গরু-ছাগলদের গলায় দাঁত ফুটিয়ে তাদের একেবারে রক্তশূন্য করে ফেলে মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মনস্টারই চুপাকাব্রা।
  • সারা পৃথিবীর রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে যার আবেদন গত কয়েক দশকে ক্রমবর্ধমান।
  • রক্তমাংসের চুপাকাব্রা আছে না নেই, এই তর্ক সব সময়ই ভূত আছে না নেই জাতীয় তর্কের চেহারা নেয়।
Advertisement