সৈকত মাইতি, তমলুক: একটা সময় জন্মগত প্রতিবন্ধী শিশুকন্যার মৃত্যু কামনায় দু’দিন তার মুখে সামান্যতম জলটুকুও দেওয়া হয়নি। শনিবার তমলুক লোক আদালতে তাঁকেই দেখা গেল বিচারকের ভূমিকায়। হাত নেই, তাই পা দিয়েই সই করলেন কোর্ট অর্ডারে। তমলুকের পূর্বনখা এলাকার বাসিন্দা দিব্যাঙ্গ পার্বতী। বাবা নিরঞ্জন জানা। চার বোন ও এক ভাই। জন্ম থেকে দুই হাত ছিল না। তাই স্বাভাবিকভাবেই অভাবের সংসারে এমন মেয়ের মুখ দেখতে চাইছিল না কেউ। মৃত্যু কামনা করে নবজাতকের মুখে টানা দু’দিন ধরে জল পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। কিন্তু পার্বতী হাজার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বেড়ে উঠে এখন দৃষ্টান্ত।
২০১১-তে চেন্নাইয়ে প্যারা অলিম্পিকে সাঁতারে বাংলার হয়ে সোনা ও রুপোর পদক পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ট্রেলারিং প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে অক্টোপ্যাড বাজিয়ে বর্তমানে একজন পেশাদার শিল্পীও। সেই তিনি শনিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বছরের শেষ লোক আদালতে বিচারকের ভূমিকায়। একদিনেই কয়েকশো মামলার নিষ্পত্তি করলেন শ্যামবর্ণের জন্মগত প্রতিবন্ধী তমলুকের পার্বতী। পা দিয়েই সই করলেন কোর্ট অর্ডারে। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব সুদীপা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একজন দিব্যাঙ্গ মহিলা সমাজের কাছে যাতে প্রেরণা হয়ে উঠতে পারেন সেই প্রয়াসে আমাদের এই সিদ্ধান্ত। শারীরিক কিংবা মানসিক যে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা কখনওই যে বেড়ে ওঠার জন্য বাধা হয়ে উঠতে পারে না সেই বার্তা দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
লড়াকু পার্বতীর এই ভূমিকায় উল্লসিত মা কিশোরী জানা। তিনি বলেন, ‘‘জন্ম থেকে ওর দুই হাত না থাকায় সকলের ঘৃণার পাত্র হয়ে পড়েছিল পার্বতী। কিন্তু একমাত্র আমি সাহস হারাইনি। আজ এমন মেয়ের জন্য আমি গর্বিত।’’
