সুব্রত বিশ্বাস, সোনারপুর: 'যা হারিয়েছে তা ফিরে পাওয়া যায় না,' তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে গূঢ় অর্থে এ কথা কার্যকর হতে পারে। তবে সর্বত্র নয়। তিলে তিলে জমানো জীবনের সর্বস্ব মুহূর্তের ভুলে হারিয়ে ফেলে, আবার তা ফিরে পেলেন ৭৪ বছর বয়সি বৃদ্ধা। সৌজন্যে সোনারপুর রেল পুলিশ থানা। পুলিশের তৎপরতায় হারানো সর্বস্ব ফিরে পেয়ে ঈশ্বরকে বারবার ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি বৃদ্ধা পরিচারিকা।
পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধার নাম গীতা হালদার। সল্টলেকে লোকের বাড়িতে পরিচালিকার কাজ করেন। প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জমিয়ে ছিলেন এক লক্ষ ২৭ হাজার টাকা। সেই সঞ্চিত অর্থ ও সোনার বালা সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দিতে শুক্রবার টাকা নিয়ে পৌঁছে ছিলেন মথুরাপুরে। মথুরাপুরে বাড়ি হলেও তিনি সল্টলেক এলাকায় বাবুর বাড়িতেই থাকতেন। শুক্রবার মথুরাপুরের বাড়িতে তিনি এলেও এক মেয়ে সেখানে পৌঁছায়নি। ফলে বণ্টণ করা হয়নি সেই টাকা। টাকা নিয়ে পুনরায় ফিরে যাচ্ছিল কলকাতার সল্টলেকে। ফেরার পথে ট্রেনেই খোয়া যায় ব্যাগটি।
[আরও পড়ুন: কোর কমিটির বৈঠকে দিলীপ সাক্ষাৎ এড়ালেন শুভেন্দু, উপনির্বাচনে ১২ প্রার্থীর নাম যাচ্ছে দিল্লিতে]
এর পর রাত ন’টার সময় সোনারপুর রেল পুলিশ থানায় এসে বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি তিনি জানান। জীবনের সব সঞ্চয় এভাবে খুইয়ে তিনি পুলিশের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোনারপুর রেল পুলিশ এর পর বৃদ্ধার ব্যাগ উদ্ধারে তল্লাশিতে নামেন। তল্লাশি চালানোর সময় ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সিটের উপর সন্দহজনকভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি ব্যাগ। সেই ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় এক লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ওর দুটি সোনার বালা। রেল পুলিশের আধিকারিকেরা উদ্ধার হওয়া সেই ব্যাগ বৃদ্ধার হাতে তুলে দেন। খোওয়া যাওয়া সর্বস্ব এভাবে ফিরে পেয়ে আপ্লুত বৃদ্ধা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভ্রান্তি বিলাসের জন্য নিজের চল্লিশ বছরে তিল তিল করে জমানো অর্থ যে এভাবে ফেরত পাবেন, তা অনুমানও করতে পারেননি বৃদ্ধা। তিনি ধন্যবাদ জানান পুলিশ কর্তাদের।
[আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ কাণ্ডে ৮৮ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ, অভিযুক্ত প্রোমোটার-সহ ৬ জন]
এদিকে ব্যাগ উদ্ধারের পর পুলিশের অনুমান, কোনও যাত্রী ভুল করে নিজের ব্যাগের সঙ্গে বৃদ্ধার ব্যাগ নিয়ে নেমে যান। পরে বুঝতে পারেন সেই ব্যাগ তাঁর নয়। ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে সেই ব্যাগ স্টেশনের সিটে ফেলে চলে যান যাত্রী। ব্যাগে যে নগদ লক্ষাধিক টাকা আর সোনার বালা রয়েছে, তা খুলেও দেখেনি সেই অজ্ঞাতপরিচয় যাত্রী। যার জেরেই নিজের দীর্ঘ বছরের সঞ্চয় ফেরত পেলেন বৃদ্ধা।