shono
Advertisement

অমলেট, সিদ্ধ ডিম না পোচ, কোনটা খাওয়া বেশি উপকারী? জানালেন বিশেষজ্ঞ

'সানডে হো ইয়া মনডে', পুষ্টিগুণ জেনেই সাধের ডিম খান।
Posted: 07:37 PM Jul 04, 2023Updated: 07:37 PM Jul 04, 2023

লাল কুসুম-সাদা কুসুম, দিশি মুরগি-পোল্ট্রি মুরগির ডিম নিয়ে প্রত্যেকের মনগড়া মন্তব্য শোনা যায়। কিন্তু পুষ্টির বিচারে বিজ্ঞান কী বলে? ডায়াটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায় শোনালেন সে কথাই।

Advertisement

সবচেয়ে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবারের লিস্টের প্রথমেই রয়েছে ডিম। এটা খেতে ভালবাসে না এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই হাতেগোনা। ডিমের জয়জয়কার কিন্তু সর্বত্র। কিন্তু এখন বাজারে নানা রকম ডিম পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে সবই কি এক, না কি আছে ফারাক?

কেন খাবারের মহারানি?
‘সানডে হো ইয়া মনডে, রোজ খাও আন্ডে’ এই চলতি প্রবাদটি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এই কথাটির গুরুত্বও যথেষ্টই। এতদিন ডিম খেয়ে এসেছেন খেতে ভাল লাগে বলে। সিদ্ধ হোক কি ওমলেট, সবেতেই ডিম খুবই সুস্বাদু। কিন্তু শুধু স্বাদ নয়, এবার থেকে ডিম খান ডিম খেলে কী কী উপকার পাবেন সেটা যথার্থভাবে জেনে।

ডিমে এনার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি মতো। আবার কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রামের মতো, প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম। এছাড়া একটি ডিমে ফসফরাস ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ১.২৯ মিলিগ্রাম উপস্থিত। এই সব কিছুর সমন্বয়ে ডিম সত্যিই পুষ্টি বল।

যেভাবে খেলে ভাল
ডিমের পুষ্টিগুণ সর্বাধিক পাওয়ার জন্য অমলেট নয়, সিদ্ধ ডিম বা পোচ হল আদর্শ। কারণ অধিক তাপমাত্রায় ডিমের প্রোটিন ও ভিটামিনগুলি নষ্ট হতে থাকে। এছাড়া অমলেট মানে তাতে যোগ হয় অতিরিক্ত তেল যা সর্বোপরি ক্যালোরি ভ্যালু বাড়িয়ে দেয়।

ডিমের আবার রং-বেরং!
বাজারে ডিম কিনতে গিয়েও আজকাল বেশ বিচলিত হতে হয়। কারণ লাল-সাদা-সবুজ, ছোট-বড়, দামি-সস্তা ইত্যাদি নানা প্রকারের ডিম রয়েছে। ডিমের আবার এত প্রকার-আকার! অনেকেই ধন্ধে পড়েন।

প্রকৃতপক্ষে ডিমের রঙের ফারাক মুরগির প্রজাতির উপর নির্ভরশীল। যেমন— হোয়াইট লেগহর্ন মুরগি সব সময় সাদা ডিম দেবে। আবার, প্লিমাউথ রক জাতের মুরগি সব সময় ব্রাউন কালারের ডিম দিবে। ডিমের রং প্রধানত কেমন হবে তা মুরগির দেহে বিদ্যমান প্রকট রঞ্জক পদার্থের উপর নির্ভরশীল। যেমন, ব্রাউন খোলসের ডিমে প্রোটোপরফাইরিন ৯ (protoporphyrin IX) নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে বলেই এই ডিমের খোলসের রং ব্রাউন। আর সাদা ডিমের খোলসে কোনও রঞ্জক পদার্থ থাকে না সেজন্যই খোলসের রং সাদা।

[আরও পড়ুন: কতটা ঘি আপনার শিশুর জন্য নিরাপদ? জেনে রাখুন গুরুত্বপূ্র্ণ তথ্য]

তাহলে কি পুষ্টিগুণে সব একই?
পুষ্টিমানের বিষয়টা আপনি যে মুরগির ডিম খাচ্ছেন তার স্বাস্থ্যের উপর অনেকটা নির্ভর করে। যেমন, মুরগি যদি প্রচুর সূর্যালোকে থাকে তাহলে সেই মুরগির ডিমে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বেশি থাকবে। এছাড়াও মুরগিকে যদি ওমেগা ফ্যাট সমৃদ্ধ খাদ্য দেন তাহলে সেই মুরগির ডিমেও ওমেগা ফ্যাট বেশি থাকবে।

মুরগির ডিম এবং হাঁসের ডিম উভয়ই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর, তবে তাদের পুষ্টিতে কিছু পার্থক্য আছে।
হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে বড় হয় এবং মোটা খোসা থাকে। এতে মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি চর্বি ও প্রোটিন থাকে। যেসব মানুষ তাঁদের খাদ্যে উচ্চ প্রোটিন খুঁজছেন, তাঁদের জন্য হাঁসের ডিম একটি উপযুক্ত পছন্দ হতে পারে। হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি ভিটামিন এবং খনিজও উপস্থিত। যার মধ্যে রয়েছে আয়রন, বি ১২, বি৯ এবং কোলিন। তবে অনেকের হাঁসের ডিমে অ্যালার্জি হতে পারে, তাই ডিম খাওয়ার আগে অ্যালার্জি সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

মুরগির ডিমে সাধারণত হাঁসের ডিমের তুলনায় চর্বি এবং ক্যালোরি কম থাকে। যারা ওজন বা ফ্যাট কমানোর চেষ্টা করছেন তাঁদের জন্য মুরগির ডিম ভাল। এছাড়া মুরগির ডিম সস্তা ও সহজলভ্য। তবে অনেকের হাঁসের ডিমে অ্যালার্জি হতে পারে, তাই ডিম খাওয়ার আগে অ্যালার্জি সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

কোয়েলের ডিম বেশি ভাল
ডিমের মধ্যে একমাত্র কোয়েলের ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা চল্লিশ বছরের পর মুরগির ডিম খেতে নিষেধ করেন। নিয়মিত মুরগির ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটা দেশি মুরগি কিংবা ফার্মের মুরগির ডিম হলেও খুব একটা তফাত নেই। কোয়েলের ডিমে রিবোফ্লাভিন রয়েছে। এটি ভিটামিন বি-২। যা দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উপকারী। ভিটামিন বি-২ সহ অন্যান্য বি শ্রেণির ভিটামিন উপাদানগুলো লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতায় কাজ করে। এ ডিমে রয়েছে সেলেনিয়াম খনিজ। উপাদানটি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। সেলেনিয়ামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহকোষ ক্ষয় রোধে কাজ করে এবং এই ডিমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। তবে কোয়েল পাখির ডিমে অ‌্যালার্জেন কম্পাউন্ডগুলির মাত্রা বেশি, তাই খাওয়ার আগে অ‌্যালার্জি সম্পর্কে যাচাই করে নেওয়াই ভাল।

হলুদ কুসুম না কি ছাই কুসুম
হলুদ বা লালচে হলুদ ডিমের কুসুম মানেই পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, আর ছাই রঙের কুসুমে পুষ্টিগুণ নেই এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। পোল্ট্রির মুরগি বেশিভাগ সময়তেই কৃত্রিম খাবার গ্রহণ করে থাকে, তাই এর ডিমের কুসুমের বর্ণ ছাই বা হালকা হলুদ হয়, এবং প্রোটিনের তুলনায় ফ্যাটের মাত্রাও বেশ বেশি। অপরদিকে দিশি মুরগি সর্বদাই প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ার ফলে এতে প্রোটিন বেশি ও ফ্যাট কম পোল্ট্রির তুলনায়, এবং এর কুসুমের রং লালচে হলুদ রঙের হয়।
এছাড়া ডিম সিদ্ধ হওয়ার সময়ে কতক্ষণ ধরে এবং কত উষ্ণতায় তা সিদ্ধ হচ্ছে তার উপরের অনেক সময় ডিমের কুসুমের রং পরিবর্তন হতে পারে। তাই কুসুমের রঙের পরিবর্তন আমরা
সিদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রেই বেশি বুঝতে পারি, পোচ এর ক্ষেত্রে খুব বেশি নয়।

ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যায়
এই নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আজও মতপার্থক্য আছে। তবে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের নতুন গবেষণায় ডায়াবেটিক বা হার্টের অসুখে ডিমের সাদা অংশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলেই বলা হয়েছে। তবে ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম-সহ বেশ কিছু মিনারেলস অধিক পরিমাণে থাকায় সপ্তাহে তিন দিনের বেশি ডিমের কুসুম খাওয়া উচিত নয়।

[আরও পড়ুন: লহমার ‘বিয়ে বিভ্রাট’! বিপাকে পড়লেন আবির-পরম, গন্ডগোলের ভিডিও দেখুন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement