বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: পেটে ব্যথা, পায়খানা, বমি, সঙ্গে জ্বর। এই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মৃত্যু হল কিশোরের। নদিয়ার (Nadia) কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লকের ভীমপুর থানার অন্তর্গত জলকর মথুরাপুর গ্রামের ঘটনায় অসুস্থ আরও ৩০ জন। তাদের মধ্যে ১২জনকে কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। হাসপাতলে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে রয়েছে সাড়ে চার বছর বয়সে একজন শিশু।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম শুভদীপ হালদার, বয়স ১২ বছর। শুক্রবার সন্ধের পর থেকে শুভদীপের পায়খানা, বমি এবং অসহ্য পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়। সেইসঙ্গে রাতের দিকে জ্বর আসে। রাতে তাকে কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কল্যাণী (Kalyani) জেএনএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এই স্থানান্তরের সময় পথেই শুভদীপের মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা দয়াময়ী বিশ্বাস, শংকরী বিশ্বাসরা জানিয়েছেন, ”যারাই আক্রান্ত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের পেটে অসহ্য যন্ত্রণা,পায়খানা,বমি। সেইসঙ্গে কয়েকজনের জ্বর রয়েছে। আমরা ট্যাপ কলের জল খেয়ে থাকি। সেই জল থেকেই এই ধরনের ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।” মৃত শুভদীপ হালদারের আত্মীয় পম্পা মাঝি জানিয়েছেন, ”শুভদীপের পায়খানা বমি হচ্ছিল এবং সেইসঙ্গে গায়ে জ্বর ছিল। শুক্রবার রাতে শুভদীপের মৃত্যু হয়।”
[আরও পড়ুন: পছন্দসই ব্লক সভাপতি না পেলে দল ছাড়ার হুমকি, বর্ধমানের নেতাকে বহিষ্কার করল TMC]
স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনায় গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত। স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসিয়ে আক্রান্ত মানুষদের ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পানীয় জল থেকেই এই ধরনের ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে স্বাস্থ্যদপ্তরের লোকজন জানতে পেরেছেন। আক্রান্তদের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, তাদের বাড়িতে যে ট্যাপকল রয়েছে, সেই জল পান করেই তাদের ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লক মেডিকেল অফিসার বিশ্বজিৎ মজুমদার শনিবার জানিয়েছেন, ”শুক্রবার রাত থেকেই ওই গ্রামের কয়েকজন মানুষের মধ্যে ডায়রিয়ার (Diarrhoea) প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ১১ জনকে কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। আক্রান্তদের মলের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জল থেকেই এই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে মনে করায় জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও খাবার থেকে কোনও বিষক্রিয়া হয়েছে কিনা, সেই সন্দেহে যে বাড়িতে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, সেই বাড়ির খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: TMCP’র সভায় কর্পোরেটের ছোঁয়া, বাড়তি গুরুত্ব উত্তরবঙ্গকে]
আপাতত ঠিক করা হয়েছে, আগামী ৭দিন ওই গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প থাকবে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই গ্রামের মানুষদের ট্যাপ কলের জল পান করতে বারণ করা হয়েছে। আপাতত তাদের ‘সজলধারা’ প্রকল্পের জল পান করতে বলা হয়েছে। অসুস্থ যে কোনও শিশু বা কিশোরকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভরতি করা হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জন বাদে বাকিরা নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন। তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।