shono
Advertisement

বাংলাদেশের দীর্ঘতম জঙ্গিদমন অভিযান, অব্যাহত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’

৮৫ ঘণ্টা কেটে গেলেও চলছে অভিযান। The post বাংলাদেশের দীর্ঘতম জঙ্গিদমন অভিযান, অব্যাহত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:28 AM Mar 27, 2017Updated: 04:43 PM Dec 26, 2019

সুকুমার সরকার, ঢাকা: সোমবার চতুর্থ দিনে গড়াল সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জঙ্গি ডেরা আতিয়া মহলে সেনা-সহ অন্য বাহিনীর অভিযান। সিলেটের শিববাড়ি আতিয়া মহলের জঙ্গি ডেরায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান সোমবার দুপুরেও অব্যাহত। ৮৫ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখন ওই এলাকা জঙ্গিমুক্ত করা যায়নি। সেনা-সহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে আতিয়া মহল। সূত্রের খবর অনুযায়ী আজই জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হবে। সারাদিনই চলবে দেওয়াল ভাঙ্গা ও জঙ্গি দমনের কাজ। তবে চূড়ান্তভাবে বিকেলের পর সেনাসদস্যরা সেখানে প্রবেশ করতে পারে।

Advertisement

আজও বন্ধ আছে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ রোড। রবিবার বিকেলে বিফ্রিংয়ের পর সন্ধ্যার মধ্যেই মিডিয়া কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয় শিববাড়ির তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকার বাইরে। ১৪৪ ধারার আওতায় থাকা এ এলাকার বাসিন্দাদেরও আর বাড়ির বাইরে যেতে দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জীবিকার টানে সকালে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরাও ফিরতে পারেননি বাড়িতে। রাত আড়াইটা থেকে শুরু হয় আগের মতোই গুলিযুদ্ধ। সকাল সাড়ে সাড়ে ১১টা অবধি একটানা গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট সিলেটে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে। শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান শুরু করে। শনিবার সন্ধ্যায় দু’দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা-সহ ৬ জন নিহত এবং আরও ৪৪ জন আহত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী জঙ্গিবিরোধী অভিযান। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, “অভিযানে ভাল ঝুঁকি রয়েছে। ভিতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বেশ কৌশলী। তারা প্রচুর গোলা-বারুদ মজুদ করে রেখেছে। ফলে বলা যাচ্ছে না, কখন অভিযান শেষ হবে।”

রবিবার জঙ্গিদের অজ্ঞান করতে চেতনানাশক ব্যবহার করা হয়। আসেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে অভিযান চলছে। গত শুক্রবার ভোর থেকে এই অভিযান শুরু হয়। শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’ ঘনবসতি এলাকায়। তাই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অভিযানে নেমেছেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা। এখন পর্যন্ত আতিয়া মহল থেকে ৭৯ জন সাধারণ নাগরিককে জীবিত বের করে আনতে পারাটাই অভিযানের বড় সফলতা।

সোমবার ভোর থেকে চতুর্থ দিনের মতো অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনী। অভিযান শুরুর পর ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ভারী গুলিবর্ষণ ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। এটি চলে একটানা ৭টা পর্যন্ত। তারপর সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। মাঝে কিছুটা সময় কোনও শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে সকাল সোয়া ৯টার পর থেকে আবারও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। রবিবার গভীর রাতেও তিন দফা গোলাগুলি চলে। কড়া নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আতিয়া মহলের চতুর্দিকে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুলিশ। কাউকে সেখানে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। রবিবার বিকেলে সেনা অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়। ভেতরে এখনও এক বা একাধিক জঙ্গি থাকতে পারে। জঙ্গিরা ভবনের নিচের ফ্লোরে আইডি লাগিয়ে রেখেছে। ভবনের ভিতরে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ছড়ানো রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি গোয়েন্দা ইউনিট প্রথম আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়। পরে তারা ‘রেকি’ করে বুঝতে পারে এখানে অভিযান চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট ও র‍্যাবও সেখানে যায়। তারাও বুঝতে পারে জঙ্গিদের কাছে প্রচুর বিস্ফোরক রয়েছে। পরে ২৪ মার্চ রাতে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোকে অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী কমান্ডো দল। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে বাসিন্দাদের বের করে নিয়ে আসে তারা। পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে আতিয়া মহলের ছাদে যায় সেনা কমান্ডোরা। কমান্ডোরা পাঁচ তলায় গিয়ে চারতলা ব্লক করে দিয়েছে। এরপর পাঁচতলার বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। আগে থেকেই সেনা কমান্ডোরা দেখতে পান, ভিতরে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ আইইডি লাগানো রয়েছে। তাই নিচ দিয়ে না গিয়ে বাইরে থেকে গ্রিল কেটে ‘হোল’ তৈরি করে ভিতর থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। সেনার এই কৌশলের মোকাবিলা করার জন্য জঙ্গিরা প্রস্তুত ছিল না। জঙ্গিরা বিস্ফোরক বোঝাই আত্মঘাতী জ্যাকেট পরে ও ভারী-অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্যারা কমান্ডোর উপর হামলার চেষ্টা করছে। তবে সেনা সদস্যরা কেউ হতাহত হননি। জঙ্গিরা ভবনের বিভিন্ন স্থানে আইইডি, বিস্ফোরক রেখেছে। শনিবার এই অভিযান চলার সময় বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য-সহ ৫০ জনেরও বেশি।

The post বাংলাদেশের দীর্ঘতম জঙ্গিদমন অভিযান, অব্যাহত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement