জিনিয়া সরকার: অবাধ মিলনের পর গর্ভনিরোধক বড়ি খেয়ে ঘটে যায় চরম বিপদ৷ পরিণতি কখনও মৃত্যু বা পরবর্তী সময় সন্তানধারণে সমস্যা৷ বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত– আনওয়ান্টেড প্রেগন্যান্সির মোকাবিলায় কোন পথে হাঁটবেন?
এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন:
বিবাহিত, অবিবাহিত কিংবা সন্তান আছে– যে কোনও অবস্থায় কোনও প্রোটেকশন ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুললে সন্তান আসার সম্ভাবনা বেশি৷ সে ক্ষেত্রে সন্তান না আনার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তাই হল এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন৷
কী কী পদ্ধতি:
• বিবাহিত মহিলা, সন্তান আছে অথবা সন্তান একবার নষ্ট করেছেন- এই অবস্থায় কেউ যদি এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন চান, সেক্ষেত্রে ভাল কাজ দেয় কপার-টি৷ কপার-টি থাকলে ৩-১০ বছর পর্যন্ত নিরাপদ থাকা যায়৷ প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ শতাংশই এড়ানো যায়৷ বিশেষজ্ঞর কথায় এই ধরনের কন্ট্রাসেপশনের সাফল্যের হার লাইগেশন অর্থাৎ বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশনের সমান৷
• অবিবাহিত হলে কন্ট্রাসেপশনের জন্য কপার-টি ব্যবহারের অনুমতি নেই৷ এক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা গর্ভরোধক বড়ি বা এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল৷ ১.৫ মিলিগ্রাম মাত্রার এই ট্যাবলেট দেওয়া হয়৷ কোনও প্রোটেকশন ছাড়া মিলিত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই ধরনের ট্যাবলেট খেয়ে নিতে হবে৷ যত তাড়াতাড়ি খাবেন, ওষুধের কাজ তত ভাল হবে৷ মিলিত হওয়ার ৬-১২ ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে নিলে উপকার বেশি৷ দেরি যত হবে, তত ওষুধের কাজ কম হবে৷ তাই কোনও সুরক্ষা না নিয়ে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার কথা মনে করলে এই ধরনের কন্ট্রাসেপশন পিল সঙ্গে রাখা উচিত৷
• তবে সবচেয়ে নিরাপদ সুরক্ষা হল কন্ডোম৷ এতে প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না৷ এডস জাতীয় রোগের হাত থেকেও নিরাপদ থাকা সম্ভব৷ একের বেশি পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলে কন্ডোমই শ্রেয়৷ এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলে ভরসা নয়৷
এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলে ক্ষতি!
অসুরক্ষিতভাবে মিলিত হওয়ার পর এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেয়ে নিলেই সন্তান হবে না বা প্রেগন্যান্সি এলেও তা নষ্ট হয়ে যাবে- এই ধারণা ভুল৷ এক্ষেত্রে মিলনের পর ডিম্বাণু নিষিক্ত হবে, ভ্রূণ তৈরিও হবে৷ ভ্রূণ যে জায়গায় থাকে, তার নাম এন্ডোমেট্রিয়াম৷ এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল এই এন্ডোমেট্রিয়াম তৈরি হতে দেয় না৷ ফলে ভ্রূণ থাকার জায়গা পায় না (আউট অফ ফেজ এন্ড্রোমেট্রিয়াম)৷ এই পিল ব্যবহারে আরও একটি সমস্যা হল তা ফ্যালোপিয়ান টিউবের সঞ্চালন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷ ফলে নিষিক্ত ডিম্বাণু টিউবে আটকে সেখানেই বাড়তে শুরু করে৷ এর পর টিউবের মধ্যেই সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়ে পেটের ভিতরে ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়৷ অতিরিক্ত পেটের যন্ত্রণা হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়৷ এই অপারেশনের নাম একটোপিক প্রেগন্যান্সি অপারেশন৷ এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সন্তান আসার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়, নানা দুর্ঘটনাও ঘটে৷ অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল ভালর চেয়ে খারাপ করে বেশি৷
প্রেগন্যান্ট বুঝবেন কীভাবে?
অসুরক্ষিতভাবে মিলনের পর নিজে থেকেই সচেতন হন৷ ঋতুস্রাবের সময় ৫-৭ দিন পিছিয়ে গেলেই অবশ্যই প্রেগকলার টেস্ট করে নিন৷ প্রয়োজনে ইউরিন টেস্ট করে দেখে নিন৷ সময় পিছিয়ে গেলে সাতদিন অন্তর অন্তর টেস্ট করে দেখা উচিত প্রেগন্যান্সি এসেছে কি না! ঋতুস্রাব সঠিক সময়ে না হলে, টেস্ট করে যদি কিছু না-ও পাওয়া যায়, তাহলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ গা বমি ভাব, মাথা ঘোরা, কিছু খেতে ইচ্ছা না করা প্রেগন্যান্সির লক্ষণ৷ অনেক ক্ষেত্রেই কোনও লক্ষণ না-ও দেখা দিতে পারে৷
ওষুধ দিয়ে গর্ভপাত নয়:
ওষুধের মাধ্যমে গর্ভপাত করানো হয়- এই প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা দেবেন না৷ বিশেষজ্ঞের মতামত, এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া উচিত৷ এই ধরনের ওষুধ অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে গর্ভস্থ শিশুর প্রাণনাশের চেষ্টা করে৷ যা বিপদ আরও বাড়ায়৷ সন্তান পেটের মধ্যে নষ্ট হয়ে তা প্রাকৃতিক নিয়মে বেরিয়ে এলে ক্ষতি কম৷ কিন্তু ওষুধ খেয়ে সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা করলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সন্তান নষ্ট হয়ে আর বেরতে পারে না, ইউটেরাসের মধ্যেই রয়ে যায়৷ এতে বিপদ আরও বাড়ে৷ রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷
তাই ওষুধ দিয়ে গর্ভপাত করতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিন৷ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট ওষুধ খেতে হবে৷ নিজে নিজে কিনে এই ওষুধ ব্যবহার করবেন না৷ ওষুধ খেয়ে গর্ভপাতে পরবর্তীকালে প্রেগন্যান্ট হতে অনেক সমস্যা হয়৷
আনওয়ান্টেড? ভরসা এমভিএ!
পরিকল্পনা ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অনেকেই গর্ভপাত করার কথা ভাবেন৷ অ্যাবরশনের জন্য আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি হল এমভিএ (ম্যানুয়াল ভ্যাকুয়াম অ্যাসপিরেশন)৷ এই পদ্ধতিতে প্রেগন্যান্সি নষ্ট করলে সমস্ত দিক সুরক্ষিত থাকে৷ ভবিষ্যতে সন্তান হতে কোনও সমস্যা হয় না৷ গর্ভপাতের অন্য পদ্ধতিতে যে কষ্ট, তার চেয়ে এই পদ্ধতিতে কষ্ট অনেক কম হয়৷ এই পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণ কম হয়, জরায়ুর ভিতরে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে৷ প্রেগন্যান্সির ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে চাইলে সবচেয়ে ভাল উপায় এমভিএ৷ সার্জারি বা এমভিএ করার পর ৭-১০দিন যৌনসঙ্গম করা যাবে না৷ ওষুধ খেতে হবে৷ একমাস পর ঋতুস্রাব শুরু হলে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো জরুরি৷
এমভিএ পদ্ধতির খরচ নির্ভর করে কোথায় অপারেশন করা হচ্ছে তার উপর৷ এই এমভিএ ইনস্ট্রুমেন্ট সমস্ত হাসপাতালে থাকে না৷ তাই গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নিন, এমভিএ পদ্ধতিতেই করা হবে কি না! একমাত্র এমভিএ-ই ডেকেয়ার সার্জারির মতো যে কোনও জায়গায় করা যেতে পারে৷ এর জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা লাগে না৷
আরও জানতে বিশিষ্ট গাইনোকলজিস্ট ডাক্তার দেবাশিষ দেবাংশীকে ফোন করুন এই নম্বরে- 8170059111। এছাড়া ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
The post অবাঞ্ছিত প্রেগন্যান্সির মোকাবিলা কোন পথে! appeared first on Sangbad Pratidin.