সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুরুটা যেমন চোখধাঁধানো ভাবে শুরু করেছিলেন ভিনেশ ফোগাট, শেষটা হল হৃদয় ভেঙে। প্যারিসে রূপকথা লেখা হল না ভারতের তারকা কুস্তিগিরের। বরং দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য অলিম্পিক থেকেই ছিটকে যেতে হল তাঁকে। গতকালই রুপো নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন ভিনেশ। এদিন ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যাওয়ায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হবে ভিনেশ ফোগাটকে। আকস্মিক এই খবরে তোলপাড় লোকসভা। ভিনেশ-ঝড় আছড়ে পড়েছে এই বঙ্গেও। রাজ্যের কুস্তি সংস্থার প্রেসিডেন্ট অসিত সাহা বলছেন, ''এর দায় কিন্তু নিতে হবে ইন্ডিয়ান অলিম্পিক সংস্থার কর্তাদেরও। দায়িত্ব নিতে হবে ভিনেশ ফোগাটের কোচকেও। মেয়েটার সমস্যা কী, সেটা তো ওরাই ভালো করে জানে। ফলে দায়িত্ব কিন্তু ওদের উপরেই বর্তায়।''
সূত্রের খবর, ভিনেশ ফোগাটের ওজন বেড়ে গিয়েছিল ২ কেজি। ওজন কমানোর মরিয়া চেষ্টা করে গিয়েছেন সারা রাত ধরে। জগিং করেছেন, স্কিপিং-সাইক্লিংও চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ওজন কমেনি। বর্তমান কুস্তির কোচ এবং প্রাক্তন কুস্তিগির নন্দন দেবনাথ বলছেন, ''গতকাল তিনটে লড়াই লড়তে হয়েছে ভিনেশকে। ফলে ভিনেশের ওজন, পাওয়ার, স্ট্রেন্থ কমাটাই স্বাভাবিক। দুর্বলতা কাটানোর জন্য কুস্তিগিরদের বলবর্ধক কিছু খেতেই হয়। পঞ্চাশ কেজি বিভাগে এবার অলিম্পিকে নেমেছিল ভিনেশ ফোগাট। ও আসলে ৫৩ কেজি বিভাগে লড়ে। কিন্তু তিন কেজি ওজন কমিয়ে নেমেছিল। ওজন ধরে রাখা খুবই কঠিন।''
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জয়শংকর, ডোভালের সঙ্গে বৈঠক অমিত শাহর, বড় পদক্ষেপের প্রস্তুতি?]
তিনি যোগ করেন, নিয়ম হল, প্রতিযোগিতায় নামার বেশ কিছুদিন আগেই প্রতিযোগীকে নির্দিষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে হয়, তিনি কোন ওজনের বিভাগে লড়বেন। এক্ষেত্রে ভিনেশ ৫০ কেজি ওজনের ইভেন্টে নাম দিয়েছিলেন। অতএব তাঁকে ওই ওজনই ধরে রাখতে হবে। তা রাখলে না পারলে তাঁকে বাতিল হতে হবে। এই নিয়মের গেরোতেই আটকে গেলেন ভিনেশ।
৫০ কেজি ফ্রিস্টাইল ভিনেশের ইভেন্ট নয়। দিল্লির রাজপথে আন্দোলনে নেমেছিলেন তিনি। বসতে হয়েছিল ধর্নায়। তার ফলে নামতে পারেননি অনুশীলনে, নামতে পারেননি ৫৩ কেজি বিভাগের ট্রায়ালেও। এদিকে অলিম্পিকের ৫৩ কেজি বিভাগে যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেন অন্তিম পাঙ্ঘাল। ভিনেশকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, অন্তিম পাঙ্ঘালকে ট্রায়ালে হারাতে পারলে তবেই ৫৩ কেজি বিভাগে নামতে পারবেন ভিনেশ। ট্রায়ালে অন্তিম পাঙ্ঘালের কাছে হার মানেন ভিনেশ। ফলে অন্য কোনও বিভাগ নয়, ৫০ কেজি বিভাগেই নামতে হয় ভিনেশ ফোগাটকে। তার পরই হৃদয়ভাঙার এই কাহিনি। কিন্তু ওজন বাড়ল কীভাবে? সারারাত ধরে চেষ্টা করেও কেন কমানো সম্ভব হল না ওজন? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে নন্দন দেবনাথ বলছেন, ''একদিনে পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন আমি কমাতে পারি। বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ওজন কমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। স্যালাড, টক দই, মধু জল, ইলেকট্রলের জল, নারকেলের জল খেয়ে ওজন কমাতাম। তার উপরে
শরীরে সোয়েটার জড়িয়ে, ওজন কমানোর জন্য একধরনের বিশেষ জ্যাকেট পড়ে থাকতাম। শরীর থেকে জল যাতে ঘামের মাধ্যমে বের করে দেওয়া যায়। যত দ্রুত ঘাম বের করে দেওয়া যাবে, শরীরের ওজনও কমানো সম্ভব হবে।''
তবে ভিনেশ ফোগাট এলিট কুস্তিগির। তাঁর নিজস্ব কোচ, নিউট্রিশানিস্ট রয়েছেন। ভিনেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতাও কম নয়। তবুও এই বিপর্যয় কীভাবে নেমে এল? কুস্তি কোচ শ্বেতা দুবে বলছেন, ''আরও একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। প্রশ্ন তো উঠবেই, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওজন এতটা বেড়ে গেল কীভাবে?''
ভিনেশ ফোগাটকে নিয়ে এখন একাধিক প্রশ্ন। প্যারিসে ঠিক কী হয়েছে, তা জানার জন্য মুখিয়ে গোটা দেশ। দেশবাসীর স্বপ্ন, এভাবে স্বপ্নের সলিল সমাধি হওয়ার জন্য একা কি ভিনেশই দায়ী? তাঁর কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, নিউট্রিশানিস্ট, কর্মকর্তারা কি দায় এড়াতে পারেন? ব্যর্থতার জন্য কলঙ্কের ছিটে পড়ে প্রতিযোগীর গায়েই। রেহাই পেয়ে যান পর্দার আড়ালে থাকা লোকজন। সেই ট্রাডিশন কি চলতেই থাকবে?