বোরিয়া মজুমদার, প্যারিস: ভারত বনাম জার্মানি অলিম্পিক ম্যাচের প্রিভিউ লিখতে বসেও মগজ থেকে কিছুতেই গ্রেট ব্রিটেন ম্যাচকে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে সতেরো মিনিটের মাথায় দশ জনে হয়ে যাওয়ার পর পিআর শ্রীজেশরা যে খেলাটা খেলেছেন, তাকে জীবনের ম্যাচ বললেও বোধহয় কম বলা হয়! মনে রাখা দরকার, অন্যায় ভাবে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল যাঁকে, সেই অমিত রোহিদাস ভারতের অন্যতম সেরা প্লেয়ার। তার পর ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যে লড়াইটা লড়ল ভারত, সেটা লোকে দেখেছে। স্তম্ভিত হয়েছে। কিন্তু ওই পরিস্থিতির জন্য ভারত আগেভাগে তৈরি ছিল।
অলিম্পিক অভিযানে যাওয়ার আগে শ্রীজেশ একবার কথায় কথায় বলেছিলেন যে, ভাগ্য-কপাল-নিয়তি এ সমস্তের উপর তাঁরা কিছু ছাড়তে চান না। ‘‘কোচ আমাদের সে ভাবেই তৈরি করেছেন। গোল খেয়ে গেলে কী করা উচিত, কেউ লাল কার্ড দেখলে কী করতে হবে, সব রকম পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিয়েই প্যারিস যাব আমরা,’’ বলেছিলেন শ্রীজেশ। ভারতীয় হকি কিংবদন্তির যে কথা অক্ষরে-অক্ষরে ফলে যেতে দেখা গেল ব্রিটেন ম্যাচে। দশ জনে হয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনের বিরুদ্ধে একজন নেতা দরকার ছিল ভারতের। সেখানে ভারত নেতা পেয়ে যায় একাধিক। সিনিয়র প্লেয়াররা প্রত্যেকে প্রাণের বাজি লাগিয়ে নেমে পড়েন দেশের সম্মানরক্ষায়। আর তাঁরাও না পারলে, তার পরেও ভারতীয় প্রাচীর ভেঙে ব্রিটেন ঢুকে পড়লে, ছিলেন শ্রীজেশ। যাঁকে দেখলে মনে হচ্ছে যেন শপথ নিয়ে ফেলেছেন, অলিম্পিক থেকে পদক না নিয়ে ফিরবেন না।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রাস্তায় বিরাট কোহলির ‘যমজ’! সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও]
প্রায়শই ভারতীয় অ্যাথলিটদের নিয়ে বলা হয় যে, তাঁদের যথেষ্ট মানসিক কাঠিন্য নেই। বলা হয়, ভারতীয়রা চাপ সামলাতে পারেন না। ব্রিটেনের পরেও সেটা বলা হবে কি না, জানার ইচ্ছে থাকল। অলিম্পিক কোয়ার্টার ফাইনালে দু’টো বিষয় উল্লেখ করা উচিত। প্রথমটা হল, টিমের হার না মানা জেদ। ভারতীয়রা যেন ঠিকই করে ফেলেছিলেন যে, পৃথিবী রসাতলে গেলেও তাঁরা ব্রিটেন ম্যাচ হেরে ফিরবেন না। এমনকী শুটআউটের সময় যখন ব্রিটেন গোলকিপার ‘ট্যাব’ নিয়ে ঢুকেছিলেন, যা পরে দেখতে পেয়ে ফেলে দেন রেফারি, হরমনপ্রীতরা মেজাজ হারাননি। গোটা ম্যাচে রেফারির একাধিক সিদ্ধান্ত ভারতের বিপক্ষে গিয়েছে। কিন্তু ভারতীয়রা অশান্ত হয়ে পড়েননি। যদিও হকি ইন্ডিয়া প্রধান দিলীপ তিরকে ফুঁসতে ফুঁসতে বলছিলেন, ‘‘ব্রিটেন ম্যাচটা আমাদের প্লেয়াররা অসামান্য খেলে জিতিয়ে দিল। কিন্তু তাই বলে রেফারিদের ভুলভ্রান্তি ছাড় পেতে পারে না। খুব খারাপ রেফারিং বললেও কম বলা হয়। লাল কার্ডটা হয় না। অলিম্পিকে এ রকম রেফারিং মানা যায় না।’’ দ্বিতীয়ত, শুটআউটের সময় ভারতীয়দের ঠান্ডা মনন। শ্রীজেশ ঐশ্বরিক খেলেছেন। কিন্তু কৃতিত্ব দিতে হবে শুটারদেরও। যাঁরা এতটুকু বিশ্বাসের অভাব না দেখিয়ে গোল করে দিয়েছেন।
প্রশ্ন একটাই। ভারত কি আরও দূর এগোতে পারবে? টোকিওর চেয়ে এগোতে পারবে? পদকের রং কি বদল হবে? যা খেলছে টিম, আশা কিন্তু করাই যায়।