শিলাজিৎ সরকার: পি ভি সিন্ধু, সাত্তিকসাইরাজ রাঙ্কিরেড্ডি-চিরাগ শেট্টিদের ব্যর্থতার মাঝে প্যারিসে উজ্জ্বল লক্ষ্য সেন। ভারতের প্রথম পুরুষ শাটলার হিসাবে অলিম্পিক পদক পাওয়ার থেকে একটা জয় দূরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এবার অবশ্য তাঁর সামনে দ্বিতীয় বাছাই ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনের চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের আগে প্যারিস থেকে ছেলেকে নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর প্রশ্নের জবাব দিলেন লক্ষ্যর বাবা তথা প্রথম কোচ ধীরেন্দ্রকুমার সেন।
প্রশ্ন: ভারতের প্রথম পুরুষ শাটলার হিসাবে অলিম্পিক সেমিফাইনালে উঠেছেন লক্ষ্য। আর প্যারিসে কোর্টের পাশে বসে সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন আপনি। এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতিটা কেমন?
ধীরেন্দ্র : বলে বোঝানো সম্ভব নয়। লক্ষ্য কোর্টে খেলছিল আর বাইরে আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছিল (হাসি)। সারা দেশের আশীর্বাদ এখন লক্ষ্যর সঙ্গে আছে। শেষ কয়েকটা ম্যাচ ও দারুণভাবে জিতেছে। কিন্তু ওর কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্যারিস থেকে পদক জিতে ফিরতে পারলে তবেই ওর লড়াই পূর্ণতা পাবে।
প্রশ্ন: এবার তো লক্ষ্যের প্রতিপক্ষ ভিক্টর অ্যাক্সেলসেন। গতবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। এবারের দ্বিতীয় বাছাই। সেমিফাইনালে কতটা কঠিন হবে লক্ষ্যর কাজটা?
ধীরেন্দ্র : ভিক্টর ভালো প্লেয়ার। খুবই ভালো। তবে অপরাজেয় নয়। এর আগেও লক্ষ্যের কাছে ভিক্টর হার মেনেছে। হতে পারে মুখোমুখি সাক্ষাতে লক্ষ্য পিছিয়ে আছে। কিন্তু একেবারেই জেতেনি, এমন তো নয়। ফলে কাল ভিক্টরই জিতবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। আসলে পুরোটাই নির্ভর করে নির্দিষ্ট দিনে আপনি কেমন পারফর্ম করছেন তার উপর। জোনাথন ক্রিস্টি, তিয়েন চেন চৌ-ও তো লক্ষ্যর থেকে রাঙ্কিংয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ওদেরও হারিয়েছে লক্ষ্য। ভিক্টরকেও না হারানোর কোনও কারণ নেই।
প্রশ্ন: কিন্তু লক্ষ্যর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বাছাই ভিক্টর যে ফেভারিট, সেটা নিয়ে তো তেমন দ্বিমত নেই।
ধীরেন্দ্র : অবশ্যই ভিক্টর ফেভারিট। র্যাঙ্কিং, অতীত সাক্ষাতের ফল– সবেতেই এগিয়ে। কিন্তু সেটাই লক্ষ্যর অ্যাডভান্টেজ। ও জানে, জেতার চাপটা ভিক্টরের বেশি। ফলে লক্ষ্য অনেক খোলা মনে নামতে পারবে। কারণ ওর হারানোর কিছু নেই। যেটুকু জিতবে, সেটুকুই লাভ। আর আমরাও লক্ষ্যকে জেতা নিয়ে কোনও চাপ দিচ্ছি না। এই নিয়ে কোনও আলোচনাই আমরা করছি না ওর সঙ্গে। বরং ও যাতে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে, আমরা সেটা নিশ্চিত করছি।
প্রশ্ন: লক্ষ্যর ‘স্বাভাবিক খেলা’ প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন করছি। ওঁর ছোটবেলা থেকে পেশাদার কেরিয়ার শুরুর দিকে আপনিই কোচ ছিলেন। এই যে সব আনঅর্থোডক্স শট লক্ষ্য খেলেন, সেগুলো কি ছোটবেলায় শিখেছেন? নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য এসব শট উদ্ভাবন করেছেন?
ধীরেন্দ্র : না। এমন শট আমি বা ওর বর্তমান কোচ বিমল কুমার স্যর যে হাতে ধরে শিখিয়েছি, এমন নয়। বরং ও খেলতে খেলতে নিজেই বুঝে গিয়েছে কখন কোন শটটা খেলতে হবে। সেই মতো কোর্টে এখন শট খেলে। আমরাও মাঝে মাঝে ওর শট দেখে অবাক হয়ে যাই। বিশেষত ওর পিঠের উপর দিয়ে হাত নিয়ে নো-লুক রিটার্নটা আমাদেরও চমকে দিয়েছিল। তবে এটাও বলব, হঠাৎ হঠাৎ এমন শট খেলাটাই প্রতিপক্ষের সঙ্গে লক্ষ্যর তফাত গড়ে দেয় এখন।
প্রশ্ন: শুনেছি, ছোটবেলায় লক্ষ্য আর ওঁর দাদা চিরাগ আপনার স্কুটার ঠেলে নিয়ে যেতেন। সত্যি নাকি? কেন করতেন ওঁরা এমন?
ধীরেন্দ্র : সত্যিই তাই। লক্ষ্য আর চিরাগ এটা করত গায়ের জোর বাড়ানোর জন্য। আলমোড়া তো পাহাড়ি এলাকা। ফলে চড়াইয়ে স্কুটার ঠেলে তুলতে অনেকটা শারীরিক শক্তি প্রয়োজন হয়। নিয়মিত এই কাজটা করায় ওদের শক্তি বেড়ে গিয়েছিল। তাছাড়া আমাদের বাড়ি থেকে রাস্তায় যেতে মোটামুটি দেড়শো সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হয়। লক্ষ্যদের ফিটনেস ঠিক রাখতে সেটাও সাহায্য করত।