shono
Advertisement
Asia Cup Archery

পুলিশের দেওয়া ধনুর্বাণে এশিয়ান তিরন্দাজিতে সোনা, ব্যাঙ্ককে 'মাড় ভাতের দম' দেখালেন জঙ্গলমহলের কন্যা

এশিয়া কাপ আর্চারির টিম ইভেন্টেও রুপো পেয়েছেন জঙ্গলমহলের বাসন্তী।
Published By: Subhajit MandalPosted: 12:40 AM Feb 24, 2025Updated: 12:40 AM Feb 24, 2025

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বছর সাতেক আগেকার কথা। গ্রামের এক কিশোরীকে স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ার বলেছিলেন, তোর তো খেলাধূলার প্রতি অনেক আগ্রহ। তাই তিরন্দাজি শিখতে পারিস। বরাবাজার থানা তিরন্দাজি শেখাবে। এই কথা শুনে আর পেছনে ফিরে তাকাননি সোনার মেয়ে বাসন্তী মাহাতো। পুরুলিয়ার বরাবাজারের রানসি গ্রামের ওই কিশোরী থানার তরফে দেওয়া ধনুর্বাণ হাতে তুলে নেন। তারপর একের পর এক 'লক্ষ্য'ভেদে এশিয়ান তিরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ আর্চারিতে সিনিয়র রিকার্ভে সোনার পদক। আন্তর্জাতিক স্তরে এই প্রথম সোনা ছিনিয়ে শুধু বনমহল পুরুলিয়াকে নয়, গোটা দেশকেও গর্বিত করল ওই সোনার মেয়ে।

Advertisement

চাইনিজ তাইপের ফং ইউ ঝু-র থেকে ৪-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও ৬-৪ ব্যবধানে তাকে হারিয়ে সোনা জিতে নেন জঙ্গলমহলের ওই কন্যা। সেই সঙ্গে টিম ইভেন্টেও রুপো পান তিনি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাসন্তী আমাদেরকেও গর্বিত করেছে। ওর সাফল্য অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তরফে আমরা ওই তরুণীকে সম্বর্ধনা জানাবো। "

তবে এই কাজটা সহজ ছিল না। এর জন্য কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি বনমহলের ওই কন্যাকে। ঘরে যে ছিল অভাব। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। কৃষক পরিবারের ওই মেয়ের খেলাধুলো জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া ছিল কার্যত বিলাসিতা। তাই দুই মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে বাবা শান্তিরাম, মা লক্ষ্মীরানী গতানুগতিক পড়াশুনোতে সাহায্য করে গেলেও খেলাধুলোর জন্য আলাদা করে কোনও কিছু ভাবেননি। কিন্তু ২০১৮ সালে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে বরাবাজার থানার তিরন্দাজি অ্যাকাডেমি 'লক্ষ্য' ওই ১৩ বছরের কিশোরী বাসন্তীর জীবনের মোড় যেন ঘুরিয়ে দেয়। বিনা খরচে ধনুক নিয়ে তিনি শিখতে থাকেন তিরন্দাজি। ফি দিন ৫ কিলোমিটার পথ ভেঙে অ্যাকাডেমিতে শিখতে আসতেন। লক্ষ্য, একাগ্রতা আর অধ্যবসায়ে তার একের পর এক 'লক্ষ্য'ভেদ। জেলা থেকে রাজ্য হয়ে জাতীয় স্তরের ঝুলিতে আসতে থাকে একের পর এক ব্রোঞ্জ, রুপো। আর ঠিক তখনই তার ওপর নজর পড়ে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার।

২০১৯ সালে সাই-এর সল্টলেক ক্যাম্পাসে উন্নত মানের প্রশিক্ষণ পেতে থাকেন তিনি। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েই একেবারে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯ বছরের এই তরুণী লেখাপড়াও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর ১৮ টি দেশের অ্যাথলিটদের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে দলগতভাবে তিরন্দাজিতে ব্রোঞ্জ পান। ওই বছরই চিনে আয়োজিত এশিয়ান ইয়ুথ আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতাতেও দুটি রুপোর পদক ছিনিয়ে নেন বাসন্তী। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে রবিবার রাতে বিমান ধরার আগে তিনি জানান, "এটা মাড় ভাতের দম। ভীষণ ভালো লাগছে। তবে আরও অনেক স্বপ্ন রয়েছে।"

এদিন মধ্য রাতেই বাসন্তী দিল্লিতে পৌঁছান। সোমবার সেখান থেকে বিমানে সল্টলেকে সাই ক্যাম্পে আসবেন। বাবা শান্তিরাম মাহাতোর কথায়, " গর্বে আমাদের বুকটা ভরে যাচ্ছে। কবে ও বাড়িতে আসবে সেই অপেক্ষায় আছি।" শুধু পরিবার-পরিজনাই নন। সোনার মেয়েকে ছুঁতে অপেক্ষায় বনমহলও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চাইনিজ তাইপের ফং ইউ ঝু-র থেকে ৪-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও ৬-৪ ব্যবধানে তাকে হারিয়ে সোনা জিতে নেন জঙ্গলমহলের ওই কন্যা।
  • সেই সঙ্গে টিম ইভেন্টেও রুপো পান তিনি।
  • পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাসন্তী আমাদেরকেও গর্বিত করেছে।"
Advertisement