shono
Advertisement

Breaking News

Tarunika Ghosh

ক্যানসার-কোমাকে হারিয়ে খেলার মাঠে জীবনের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন বাংলার তরুণিকা

পাঁচ মিটারের দূরের পর সবকিছু অন্ধকার লাগে তরুণিকার চোখে।
Published By: Arpan DasPosted: 01:53 PM Nov 21, 2025Updated: 03:37 PM Nov 21, 2025

প্রসূন বিশ্বাস: পাঁচ মিটারের দূরের পর সবকিছু অন্ধকার লাগে তাঁর চোখে। এমনকী খাতায় কলমে ২১ বছর বয়স হলেও ডাক্তাররা বলেন, তরুণিকা ঘোষের (Tarunika Ghosh) মনের বয়স এখনও ১২। তার উপর ক্যানসারের মতো দূরারোগ্য রোগকে জয় করেছেন কয়েক বছর হল। সেই রোগ তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল জন্মের ঠিক আঠারো মাস বয়সেই। এর উপর ভুল চিকিৎসায় প্রায় একমাসের উপর কোমায় থাকার পর স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ছিল বেশ কয়েকদিন। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যদি শোনা যায়, এই মেয়ে সর্বভারতীয় প্যারা অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতারে বাংলাকে একের পর এক মেডেল এনে দিচ্ছে। এখানেই কি শেষ? কয়েক মাস আগে গত অক্টোবরে ব্রিসবোর্নে এক আন্তর্জাতিক প্যারা অ্যাথলেটিক্সের হাঁটা প্রতিযোগিতায় বিশ্ব রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন বাংলার এই সোনার মেয়ে। তাহলে নিশ্চয় অবাক হতেই হয়?

Advertisement

ব্রিসবোর্ন ভার্চুস ওয়ার্ল্ড প্যারা অ্যাথলিট কম্পিটিশনের ১৫০০ মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় সে 'ভার্চুস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড' গড়ে হই চই ফেলে দিয়েছে। আগে যাঁর রেকর্ড ছিল তার থেকে ১২ সেকেন্ড কম সময় নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই বাংলায় ক'জনের কাছে পৌঁছেছে সেই খবর? গত বছর গোয়ায় জাতীয় স্তরে প্যারা সুইমিং কম্পিটিশনের ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে রুপো জিতে নজরে এসেছিলেন তরুণিকা। এই বছর হায়দরাবাদে একই প্রতিযোগিতায় সোনা জেতে সে। একই সঙ্গে ব্রিসবোর্নে রেকর্ড।

তাঁর যখন মাত্র আঠারো মাস বয়স তখন জুভেনাইল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা করা হলেও ক্রমশ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। কলকাতার ডাক্তাররা তাঁর ক্যানসার সন্দেহ করলে সেই সময় তাঁর বাবা সঞ্জয় ঘোষ ও মা সুবর্ণা ঘোষ তাঁকে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, ছোট্ট তরুণিকা আক্রান্ত অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়ায়। এটি একপ্রকার ব্লাড ক্যানসার। তখন সে তৃতীয় ধাপে আক্রান্ত ছিল। সেখানে বেশ কয়েক বছর কেমোথেরাপি চলে ছোট্ট তরুণিকার। ২০০৮ সালে যখন শেষ কেমোথেরাপি চলছিল, তখন আবার সংক্রমণের ফলে ৩২ দিন কোমায় চলে যায়। দেখা যায় যখন কোমা থেকে ফেরে ছোট্ট মেয়েটি, তখন সে বাবা-মা কাউকে চিনতে পারে না। একই সঙ্গে চোখের আশি শতাংশ খারাপ হয়ে যায়।

ছোট বেলা থেকেই যাঁর এত বাধা, কীভাবে সে জলের সঙ্গে আর ট্র্যাকের সঙ্গে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ল? একটি কর্পোরেট সংস্থায় উঁচু পদে চাকরি করা তাঁর বাবা সঞ্জয় ঘোষ। তিনি বলছিলেন, "মুম্বই থেকে ফিরে ওকে কলকাতায় এনে সুস্থ করছিলাম। কিন্তু ও কারও সঙ্গে কথা বলত না। বাড়ির থেকে বেড়াতে চাইত না। স্কুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশত না। ভয় পেত। একদিন আমাদের সুইমিং পুলে নিয়ে গেলাম। সেখানে দেখলাম সাঁতার কাটতে ভালোবাসছে। যখন সাঁতার শিখে গেল জলকেই বন্ধু বানিয়ে নিল। তারপর কম্পিটিশনে নামতে শুরু করল। গতবার জাতীয় প্যারা সুইমিংয়ে রুপো। এবার সোনা জিতেছে। গতবার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ওর গল্প শুনে খুব উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। আর ব্রিসবোর্ন ভার্চুস কম্পিটিশিন থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে আমরা ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেও বিশ্বরেকর্ড। এভাবে এগিয়ে যাক।"

প্যারা সুইমিংয়ে তরুণিকা ফ্রি স্টাইল ইভেন্টে নামেন। একই সঙ্গে হাঁটা প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেন। গতবার জাতীয় প্যারা সুইমিংয়ের ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে রুপো পাওয়ার পর ওর বাবা-মা কলকাতার পিজি হাসপাতালের স্পোর্টস মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা বলেন, তরুণিকার বাঁ দিকের হাত পা সবকিছু ঠিকভাবে কাজ করছে না। যারজন্য জলে গতি কমে যাচ্ছে ওর। তারপর থেকেই বাঁদিক সচল করার জন্য বিশেষ ফিজিওথেরাপি করা হয়। এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় হাতেনাতে। এত প্রতিবন্ধকতা সত্বেও তরুণিকার একটাই ইচ্ছে, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার। এদিন তিনি বলেন, "আমি এখন দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা করে অনুশীলন করি। দেশের হয়ে নামতে চাই। অলিম্পিকে যেতে চাই।" ওর কথা বলার মধ্যে একটা সারল্য খেলা করে যেন। ওর অভিভাবকদের চিন্তা ভালো কোচ না পাওয়ায়। সঞ্জয় বাবু আরও যোগ করেন, "স্বাভাবিক ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রশিক্ষক পাওয়া সহজ। কিন্তু বিশেষভাবে সক্ষম ক্রীড়াবিদদের জন্য কোচ পাওয়া খুব কঠিন। তবুও হাল ছাড়ছি না।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পাঁচ মিটারের দূরের পর সবকিছু অন্ধকার লাগে তাঁর চোখে।
  • এমনকী খাতায় কলমে ২১ বছর বয়স হলেও ডাক্তাররা বলেন, তরুণিকা ঘোষের মনের বয়স এখনও ১২।
  • তার উপর ক্যানসারের মতো দূরারোগ্য রোগকে জয় করেছেন কয়েক বছর হল।
Advertisement