সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) ‘অহংকার’ গুজরাটের ফানুস ফুটো হয়ে গেল। মোরবি সেতু কেলেঙ্কারির পর এবার পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস। আর যার জেরে বাতিল হয়ে গেল শেষ মুহূর্তে পঞ্চায়েত নিয়োগ কমিশনের পরীক্ষা। এই নিয়ে পরপর তিন বার বাতিল হয়ে গেল এই সরকারি চাকরির পরীক্ষা। মোট ২৯৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল রবিবার।
এভাবে পরপর প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিজেপিকে (BJP) নিশানা করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সুর চড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। বারবার নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা ডবল ইঞ্জিন সরকারের ‘ধুয়ো’ তোলেন। গুজরাটের ডবল ইঞ্জিন সরকার যে কতটা অন্তঃসারশূন্য সে ছবিটা এদিনের ঘটনায় ফের সামনে আনল। সে-কথাই উল্লেখ করে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের খোঁচা, “ডবল ইঞ্জিন সরকারের এত বড় কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে কবে সেন্ট্রাল টিম যাবে সেই অপেক্ষায় থাকব।”
আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন, “গুজরাটে প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন ফাঁস হয়ে যায়? কোটি কোটি তরুণের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।” চাপ যে বাড়ছে তা বুঝতে পেরেছে বিজেপি। তাই তো দলের রাজ্য-মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য স্বীকার করছেন, প্রশ্ন ফাঁস কোনওভাবেই কাম্য নয়। তবে রাজনীতির বেড়াজালে সেই বাংলাকে টানতেও হচ্ছে তাঁকে। শমীকের কথায়, “প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াটা কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু সেখানে ধরা পড়ছে। শাস্তি হচ্ছে। বাংলায় তো চাকরি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: ফের নামবদলের ‘রাজনীতি’ বিজেপির, এবার মধ্যপ্রদেশের হোশাঙ্গাবাদ হল নর্মদাপুরম]
রবিবার সকাল এগারোটায় নির্ধারিত ছিল পরীক্ষা। সাড়ে নয় লক্ষ পরীক্ষার্থীর ভাগ্য নির্ভর করছিল এই পরীক্ষার উপর। শূন্যপদ ছিল ১,১৮১। অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন নির্দিষ্ট কেন্দ্রে। তখনই জানা যায়, প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন উদ্ধারও হয়। তার পরই ‘পঞ্চায়েত সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড’ নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল করে।
গুজরাট পুলিশ মনে করছে, এই প্রশ্ন ফাঁসের পিছনে রয়েছে অনেক বড় চক্র। যার খোঁজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোচিং সেন্টারে অভিযান শুরু হয়েছে। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের। গুজরাট পঞ্চায়েত কর্মী নিয়োগ কমিশন বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। সেদিন কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য প্রার্থীদের যাতায়াত খরচ কমিশন বহন করবে। অ্যাডমিট কার্ড দেখিয়ে ট্রেনে এবং সরকারি বাসে যাতায়াত করা যাবে।
এই নিয়ে পরপর তিন বার বাতিল হয়ে গেল গুজরাটের জুনিয়র করণিক নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। প্রতি বারই অভিযোগ প্রশ্নপত্র ফাঁসের। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির। এই ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় হামেশাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকছে না। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বিশেষ যুব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিল রবিবারের প্রশ্ন ফাঁস।
অবিজেপি যে কোনও রাজ্যে সামান্যতম কোনও ঘটনা সামনে এলেই রে রে করে ওঠেন গেরুয়া নেতারা। কিন্তু, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় শিক্ষকদের চাকরি যাওয়া থেকে শুরু করে যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসে আকছার। এবার তো দুর্নীতির সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে খোদ নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের সাধের রাজ্য গুজরাট।