গোবিন্দ রায়: পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) জিতলে টাকাই টাকা, পাঁচ বছরের চাকরি। তাই টাকার জন্য এই লড়াই? গণনা কেন্দ্রের বাইরে ব্যালট পেপার ছড়াছড়ি সংক্রান্ত মামলায় এমনই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। অভিযোগ ছিল পঞ্চায়েত ভোট গণনার দিন রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রিটার্নিং অফিসারের সই করা ব্যালট পেপার। যা নিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামা তলব করেন। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রিটার্নিং অফিসার এবং বিডিও এজলাসে হাজিরা দেন। ব্যালট পেপারও আদালতে পেশ করেন রিটার্নিং অফিসার।
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, একটা-দু’টো নয়, শয়ে শয়ে প্রচুর ব্যালট পেপার বাইরে পড়েছিল। রিটার্নিং অফিসারের উদ্দেশ্যে বিচারপতির প্রশ্ন “আপনার সই করা ব্যালট পেপার কীভাবে বাইরে এল? আপনি এগুলো দেখেছেন? আপনি কাকে ইস্যু করেছিলেন? রিটার্নিং অফিসার উত্তরে জানান, “ভোটের দিন এগুলো বাইরে দিতে হয় প্রিসাইডিং অফিসারকে।” বিচারপতি জানান, “এটা যে অপব্যবহার হয়নি বা হবে না কি করে আপনি প্রমাণ করবেন?” রিটার্নিং অফিসারের দাবি, প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বাইরে ব্যালট বেরতে পারে। বিচারপতির পালটা প্রশ্ন, “রিটার্নিং অফিসারের কোনও দায়িত্ব নেই? এই বুথে ভয়ের পরিবেশ ছিল?” তেমন কোনও ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেই জানান রিটার্নিং অফিসার। প্রিসাইডিং অফিসারের নাম জানানোর কথা বলেন বিচারপতি। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ কোথায়, প্রশ্ন বিচারপতি সিনহার। এরপরই মামলাকারীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, কখন এই ঘটনা ঘটল? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, “গণনার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল। কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।” একথা শোনার পর রিটার্নিং অফিসারের উদ্দেশে বিচারপতির পালটা প্রশ্ন, “গণনার সময় বিরোধী দলের কোনও এজেন্ট ছিলেন না? কোন সময় গণনা শুরু হয়? কখন প্রার্থীদের এজেন্ট ঢুকেছিলেন? কখন বেরিয়েছেন? সমস্ত প্রার্থীদের এজেন্ট সে সময় উপস্থিত ছিলেন?”
[আরও পড়ুন: রাজ্যপালের দ্বারস্থ বিজেপির কেন্দ্রীয় দল, ‘সংবেদনশীলতা হারিয়েছে সরকার’, তোপ রবিশংকরের]
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্তকে প্রশ্ন করেন, “আগামী ১১ জুলাই ঘটনা ঘটেছিল। কমিশন কী করেছে? “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে বলেই দাবি কমিশনের। আইনজীবীর যুক্তি, “এটা ইলেকশন পিটিশন নয়। নির্বাচন শেষ হয়ে গিয়েছে। বিচারপতি এই এজলাসে যেটা বলছেন সেটা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জানিয়েছিলেন? অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।” এই অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন কী পদক্ষেপ নেওয়া হল, সে প্রশ্ন করেন বিচারপতি। কমিশনের তরফে জানানো হয়, “এই ঘটনা হয়তো সত্য। কিন্তু ১০০০ ব্যালটের মধ্যে ৪০০টি ব্যবহার করা হয় নি। যেটা রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফিরে আসে। সেখান থেকেই বাইরে বেরতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিশন। যেখানে ৪০০ ব্যালট পেপারে যেগুলি ব্যবহার করা হয়নি, সেগুলি হতে পারে।” নির্বাচনের গণনার পর ওই ব্যালট পেপারের কোন গুরুত্ব থাকে না বলেও জানিয়েছে কমিশন।
যুক্তি শুনে উষ্মাপ্রকাশ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতি সাফ জানান, “এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বা রাজ্য পুলিশ দিয়ে তদন্ত করা সম্ভব না। কারণ, এক্ষেত্রে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কমিশন নিতে পারে বলেই জানিয়েছে কমিশন। কীভাবে অশান্তি, মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সেটা কি অস্বীকার করতে পারবে কমিশন? একজন প্রার্থী ৫ বছর ধরে কাজ করার পর তাঁকে জিততে এভাবে অশান্তি পাকাতে হবে? আসলে প্রচুর টাকার লেনদেন। তাই ক্ষমতা দখলের জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রার্থীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কমিশন নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে এমনটা হয়েছে বা হচ্ছে?”
রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে আদালতে হলফনামা জমা দেওয়া হয়। ভিডিও ফুটেজ এবং সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেয়। কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্তের সঙ্গে বিচারপতির তীব্র বাদানুবাদ বেঁধে যায়। কমিশনের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, “আপনাদের অফিসার বলছেন যে ব্যালট পেপার রাস্তায় পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলোতে তাঁদের সই ছিল। তাহলে তা কেন অস্বীকার করতে চাইছে কমিশন?” বুথের ভিতর ও বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ রেজিষ্টার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। হাই কোর্টের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং রেজিষ্টার জেনারেলের বিশেষজ্ঞ টিম ভিডিও খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৬ জুলাই।