নব্যেন্দু হাজরা: লোকসভা ভোটে ৭৭ লক্ষ। বিধানসভায় ৩০ লক্ষ। পুরভোটে ভোটার পিছু আট টাকা। যে কোনও নির্বাচনের আগেই প্রার্থীদের প্রচারের খরচ বেঁধে দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শুধু আলাদা পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election 2023) ক্ষেত্রে। এই নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারের খরচ বেঁধে দেয় না কমিশন। কিন্তু কেন?
কমিশনের কর্তারা জানাচ্ছেন, আইনে নেই। স্থানীয় স্তরে ভোট। প্রচুর প্রার্থী। ছোট এলাকায় ভোট। তাই এর আর খরচ বাঁধা হয় না। এক আধিকারিকের কথায়, আসলে পঞ্চায়েত ভোটে তো বেশিরভাগই যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাঁরা ততটা উচ্চবিত্ত নন। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। তাই তাঁরা আর প্রচারে খরচ করার লক্ষ লক্ষ টাকা কোথায় পাবেন! কিন্তু বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শাসকদলের অধিকাংশ প্রার্থী ধনকুবের। ফলে প্রচারে তাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন। তাই খরচ একটা বেঁধে দেওয়া দরকার।
[আরও পড়ুন: দেওল পরিবারে বাঙালি বউমার গৃহপ্রবেশ, শ্বশুর সানি বললেন, ‘মেয়ে পেলাম’]
তবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের তরফে বিধিনিষেধ আরোপ করে দেওয়া হয়েছে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রচার কর্মসূচিতে কোনও বাইক মিছিল চলবে না। এছাড়া, জেলা পরিষদের নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রচারের জন্য একটি করে চার চাকার গাড়ির অনুমতি দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতে যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁরা চার চাকার গাড়ি নিয়ে প্রচার করতে পারবেন না। যখন কোনও রোড শো হবে, শুধুমাত্র চারটি গাড়িকেই প্রচারের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০০ মিটারের মধ্যে শুধুমাত্র একটি গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে। যদিও বিরোধীরা বলছে, আসলে প্রচারের ঊর্ধ্বসীমা না থাকার নিয়ম আসলে শাসকদলকেই সুবিধা করে দিচ্ছে। তাছাড়া কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছে তা মানছে ক’জন!
প্রায় ৪২ বছর ধরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন,”পঞ্চায়েতরাজ সারা বছর ধরে চলে। মানুষের মাঝেই প্রতিনিধিরা থাকেন। তাঁরা ঘরের লোক। শ্রমিক-কৃষকের প্রতিনিধি, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি, পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা হলেন গাছতলায় বসে মানুষের সমস্যা শোনার প্রতিনিধি। ফলে তাঁদের আবার আলাদা করে প্রচারে কী খরচ লাগবে! তাই হয়তো খরচের কোনও সীমা রাখা হয়নি।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, “বিরোধীদের পঞ্চায়েত মানেই আতঙ্ক, এটা দুর্ভাগ্যজনক। ৯৬-৯৮ শতাংশ মানুষ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। এক-দুই শতাংশের হয়তো সামান্য ভুলচুক হয়ে থাকতে পারে।” সিপিএম নেতা কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঊর্ধ্বসীমা থাকা উচিত। লাগামহীন খরচ কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল করে। এটা ঠিক, কমিশন যতই বেঁধে দিক, তা ছাপিয়ে যায় তারা। তবু একটা চাপ রাখা উচিত।’’