নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ভোটে তাঁরা যুযুধান। নির্বাচনী ময়দানে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে এসেও তাঁরা সকলে একসঙ্গে এক গাছের তলায়! একসঙ্গে বসে ভোট-তলার ছোলা-মুড়ি ভাগ করে খেলেন তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও নির্দল প্রার্থীরা। এমনই ছবি ধরা পড়ল বীরভূমের (Birbhum) মহম্মদবাজার ব্লকের দেউচায়। একই ছবি সিউড়ি (Suri) ১ ব্লকের কড়িধ্যা কানাইপুর সংসদে। যা দেখে ভোটারা আশাপ্রকাশ করলেন, একদিন পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
শনিবার শেষবেলায় কড়িধ্যা বরমহুলার বুথে মুখ বেঁধে ছাপ্পা দিতে দেখা গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা ব্যালট ভেঙে ফেলে, ব্যালট ফেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এমনই হিংসাত্মক ছবি ধরা পড়েছে। কিন্তু তার পাশেই কানাইপুর গ্রামেই অন্য ছবি। সেই গ্রামে তৃণমূল (TMC) থেকে মতি খান, বিজেপির কাঞ্চন মণ্ডল, কংগ্রেসের ইয়াদ আলি ও নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন প্রাক্তন তৃণমূল উপপ্রধান উজ্জ্বল সিং। শনিবার দিনভর সন্ত্রাসের আবহে পঞ্চায়েত ভোটের মাঝে এই বুথের ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন – কোনও হিংসা নেই, বুথ লুট নেই, ছাপ্পা নেই।
[আরও পড়ুন: কোটার পর দিল্লি, হস্টেলের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী আইআইটির ছাত্র]
অথচ ওই এলাকা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই (Panchayat Election) উত্তপ্ত হয়েছিল। কানাইপুরের ভাটিপাড়া থেকে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন দিলদার খান নামে একজন। সেসময় তোলপাড় কম হয়নি। কিন্তু তারপরে যেন আরও শান্ত হয়ে গিয়েছে এলাকা। ভোটার নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলেন, ”এমনিতে এলাকা শান্ত। কিন্তু গতবার একটু উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবে এবারে সকলের একজোট হওয়ার এই ছবি আমাদের আশ্বস্ত করেছে।” তৃণমূল প্রার্থী কাঞ্চন মণ্ডলের কথায়, ”আমরা উন্নয়ন করেছি, ভোট চেয়েছি। সেখানে ছাপ্পা মারতে যাব কেন?” অথচ যারা ছিলেন উন্নয়নের কারিগর, যেমন গত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উজ্জ্বল সিং, তিনি এবার তৃণমূল ছেড়েছেন। নির্দলের হয়ে লড়ছেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ জানে কারা উন্নয়ন করেছে, কারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারই ভিত্তিতে মানুষ ভোট দেবে। সেখানে লড়াই করে কী লাভ?
[আরও পড়ুন: প্রয়াত বার্সেলোনার প্রাক্তন খেলোয়াড় লুই সুয়ারেস, শোকে মুহ্যমান ফুটবল দুনিয়া]
একই কথা মহম্মদবাজারের দেউচা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থীরও। তৃণমূলের প্রার্থী জয়ন্তী বাউড়ি, বিজপির বিন্দু পাল। তাঁরা দু’জনেই বাহাদুরগঞ্জ সংসদ থেকে দুই দলের প্রার্থী। ভোটের দিনে গৌরাঙ্গিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই প্রার্থীকে পাশাপাশি বসে খোশ গল্প করতে দেখা গেল। যেন দু’জনেই একই মতের ও পথের লোক। তবে পাঁচ বছর আগে ডেউচা পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধান ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী জয়ন্তী বাউড়ি। তাঁরাও বললেন, লড়াই করে কী লাভ? মানুষ যাকে, যে দলকে মনে করবে তাকেই ভোট দেবে। দেউচা জুড়ে প্রস্তাবিত কয়লাখনি নিয়ে একদিকে উন্নয়নের প্রচার, অন্যদিকে বাকি দলের বিরোধিতা। যার প্রভাব ভোট বাজারে যুযুধান দুই প্রার্থীর মধ্যে আদৌ পড়েনি। যেটা গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে মডেল হয়ে রইল।