সুলয়া সিংহ: সেই বছর দুয়েক আগে পরিচালক দীপক মিশ্রর হাত ধরে ফুলেরা গ্রামে ঘুরতে গিয়ে সেই গ্রাম আর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ‘সচিবজি’ আর রিংকির সঙ্গে ফুলেরার জল ট্যাঙ্কের উপরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করি। কবে আসবে দ্বিতীয় সিজন। অবশেষে মুক্তির নির্ধারিত দিনের দু’দিন আগেই আমাজন প্রাইমে উঁকি দিল সিজন ২। ব্যস, চোখের নিমেষে শেষ আটটা এপিসোড। এবার কি মন কাড়ল?
এক কথায় উত্তর দিলে বলতে হয়, ‘হ্যাঁ’। গতবার ফুলেরার মজার মজার কাণ্ডকারখানাই এবার আরও গতি পেল। সেই সঙ্গে হালকা প্রেমের ছোঁয়া সিজন দেখার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিল। গতবার ঠিক যেখানে পরিচালক শেষ করেছিলেন, এবার সেখান থেকেই শুরুটা করলেন। গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে সচিব অভিষেক ত্রিপাঠী (জীতেন্দ্র কুমার)। কিন্তু এমবিএ দিয়ে মোটা অঙ্কের প্যাকেজের চাকরির স্বপ্ন এখনও দেখে সে। তাই সাময়িক আবেগের সঙ্গে ভেসে যেতে রাজি নয় সচিব। গতবার পরিচালক নতুন প্রেমকাহিনির হালকা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেও তা কিন্তু এবারের মূল বিষয় নয়। নিতান্তই গল্পের অংশমাত্র। আর এখানেই অত্যন্ত বাস্তববাদী হয়ে উঠেছে সিজনটি (Panchayat season 2)। পঞ্চায়েত সিরিজটির বিশেষত্ব হল, গোটা একটি কাহিনির মধ্যেও নানা ছোট ছোট কিস্সা থাকে। আর তাতেই গ্রামের পরিবেশ পরিস্থিতি, মানুষের মানসিকতা, স্বভাব-অভাব ইত্যাদি ফুটে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ছোটখাটো নানা ঘটনাগুলো কখনও নতুন করে ভাবাল, সচিবজি-কে কখনও তা হতাশ করল। আবার রিংকির একটা ছোট্ট মেসেজ একলা মন খারাপের রাতে ঠোঁটের কোণে হাসিও ফোটাল তার। ছোট ছোট বিষয়গুলিতে যত্ন নেওয়াতেই গ্রামীণ পরিবেশকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন পরিচালক। যেমন, গ্রামের দোকানে দুই ক্রেতার মধ্যে খৈনির কৌটো প্লাস্টিক নাকি স্টিলের, তা নিয়েও আলোচনা হয়। আবার গ্রামে নতুন কোনও অতিথি এলে স্থানীয়রা ঘুরে ঘুরে তাকে দেখতে থাকে, মাঠে গিয়ে শৌচ করা থেকে মন্দিরের বাইরে জুতো ‘চুরি’র মতো নানা ঘটনায় জমে উঠেছে পঞ্চায়েত সিজন ২।
[আরও পড়ুন: হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি খোয়ালেন পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা, ফেরাতে হবে বেতনও]
তবে এবার জীতু ওরফে সচিবজির থেকেও অভিনয়ের দিক থেকে এগিয়ে রাখতে হয় উপপ্রধান প্রহ্লাদ পাণ্ডে ওরফে ফৈজল মালিককে। স্পয়লার না করে শুধু বলে রাখা ভাল যে সিজনের শেষ পর্বে তাঁর দিক থেকে নজর ফেরানো যায়নি। এছাড়াও পঞ্চায়েত প্রধান ওরফে রঘুবীর যাদব ও সহায়ক চন্দন রায়ও জীতুকে টক্কর দিয়ে খানিকটা এগিয়েই গিয়েছেন। গতবারের মতো এবারও নজর কাড়েন নীনা গুপ্তাও। দর্শকদের কৌতূহলের পাত্রী রিংকি ওরফে সংভিকা, গ্রামের মেয়ে হিসেবে ভাল। তবে প্রধানকন্যা হওয়ায় গ্রামের অবিবাহিত মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও সে বাড়ির কোনও কাজই করে না। আর সচিবজি, তিনি অক্সিজেনের মতো। স্ক্রিনে বেশিক্ষণ না থাকলে শ্বাসকষ্ট হয় বইকী! তবে আরও কিছু গ্রামবাসীকে নতুন ভূমিকায় আনতেই পারতেন পরিচালক।
এবারের সিজন যেখানে শেষ হল, তা নিঃসন্দেহে দর্শকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিল। শেষ পর্বটি সিজনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে সম্পূর্ণ। সব শেষে একটা কথাই বলা, অত্যন্ত কম বাজেটে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ভাল কাজ দেখতে চাইলে এবারের ‘পঞ্চায়েত’ও মিস করবেন না।