সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: হাজার কড়া বার্তা, হুঁশিয়ারির পরও নির্দলের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটের লড়াই থেকে সরে আসেননি শাসকদলের ‘বিদ্রোহী’রা। কোথাও কোথাও প্রিয় বিধায়কদের ‘গুরু’ মেনে তৃণমূলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিন্ন করে বড়সড় সংখ্যায় প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন নির্দল (Inddependent)চিহ্নে। তবে বিদ্রোহে আর যা-ই হোক, গ্রামবাংলার ভোটে জনসমর্থন টানা যে একটু কঠিন, তা বেশ টের পেয়েছেন তাঁরা। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election) সেই নির্দল প্রার্থীদের ফলাফল খুব একটা আশাপ্রদ নয়।
‘বিদ্রোহী’ বিধায়কদের তালিকায় প্রথম নাম মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। আজ নয়, বহুদিন ধরেই তিনি ‘ঠোঁটকাটা’ বলে পরিচিত। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে থেকেই নানা সময়ে তাঁর আলটপকা মন্তব্যে দলের নেতানেত্রীরা যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেন। তবে তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পঞ্চায়েত ভোটের টিকট না পেয়ে নির্দলের হয়ে লড়েছেন। মঙ্গলবার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, ভরতপুর বিধানসভায় ভরতপুর থানা ও সালার থানা এলাকার মোট ১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে হুমায়ুন কবীর সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক আসনে খাতা খুলে নিজেদের অস্তিত্বটুকুই জানান দিতে পেরেছেন।
ভরতপুর (Bharatpur) বিধানসভা এলাকার ১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এবার হুমায়ুন কবীর সমষ্ঠিত নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেছে ভরতপুর ১ নং ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ১৯ জন পাশাপাশি এই ব্লকেই তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) জিতেছে ১০১ টি আসনে এবং ভরতপুর দুই নম্বর ব্লকে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ২৪ জন নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। পাশাপাশি ওই ব্লকেই ৭৯ জন তৃণমূল প্রার্থী জয়লাভ করেছে। এরপরও অবশ্য তাঁর দাবি, ”ফের প্রমাণ করে দিলাম অযোগ্যরাই যোগ্য,আগামী দিনে যারা নির্দলের টিকিটে জয়লাভ করেছে আমার বিধানসভা এলাকায়, তাঁদের নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাব।”
[আরও পডু়ন: ইসলাম নিয়ে ভারত গর্বিত! মুসলিম সম্মেলনে গিয়ে মন্তব্য অজিত ডোভালের]
দলের আরেক অভিমানী বিধায়ক, দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠ সৈনিক উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের আবদুল করিম চৌধুরী। যিনি একাধিকবার দলের প্রতি অসন্তোষের কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে সেখানে গিয়ে করিম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা করতে যেতে অস্বীকার করেন বিধায়ক। উলটে জানিয়েছিলেন, অভিষেকের জন্য লাল কার্পেট বিছানো আছে। তিনি যেন করিম চৌধুরী বাড়িতে যান দেখা করতে।
[আরও পডু়ন: হারের ভয়ে সিপিএম প্রার্থীর ব্যালট খেয়ে ফেললেন তৃণমূল প্রার্থী! শোরগোল হাবড়ায়]
এরপর যা হওয়ার তাই। করিম চৌধুরীর মনোনীত প্রার্থীরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট না পেয়ে সোজা নির্দল চিহ্নে দাঁড়িয়ে পড়েন। সকলের হয়ে প্রচারও করেছিলেন করিম চৌধুরী। এই তালিকায় ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী হামিদুল রহমানের মেয়েও। জেলা পরিষদ আসন থেকে তিনি নির্দল হয়ে লড়েছিলেন। কিন্তু এখানে নির্দলদের পারফরম্যান্স ভরতপুরের তুলনায় খানিকটা ভাল। ইসলামপুর ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩ টি আসনে দাঁড়িয়ে ১০টিতে জিতেছেন করিম ঘনিষ্ঠ নির্দল প্রার্থীরা। আগডিমখন্তি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২২ টির মধ্যে ১২টিতে জয় পেয়েছেন তাঁরা। আর মন্ত্রীকন্যাও পরাজিত। পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৩৯ টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই জয়ী নির্দল। এঁরা সকলেই করিম চৌধুরীর অনুগামী বলে খবর।