নব্যেন্দু হাজরা: যাত্রী নিরাপত্তায় সমস্ত যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক গাড়িতে প্যানিক বোতাম বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার। যাতে কোনও যাত্রী বিপদে পড়ে ওই বোতাম প্রেস করলে সেই খবর সরাসরি পৌঁছে যায় পরিবহণ দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে। সেখান থেকে লালবাজারে (Lalbazar)। আর খবর পেতেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ (Police)। কিন্তু এই প্যানিক বোতাম লাগিয়ে বেধেছে নয়া বিপত্তি। প্যানিক বোতামের প্যানিকে জেরবার পরিবহণ দপ্তরের কন্ট্রোলরুম।
নতুন যন্ত্র দেখে স্কুলের বাচ্চা থেকে বাসের যাত্রী যখন তখন এই বোতামে চাপ দিচ্ছেন। যার সংকেত ভেসে উঠছে কন্ট্রোলরুমে। অথচ তাঁরা বুঝতে পারছেন না আদৌ সেই গাড়িতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছে কি না! কারণ, পরিবহণ দপ্তরের এবং পুলিশের অধিকারিকরা একাধিকবার গাড়ি ট্র্যাক করে দেখেছেন, যেখান থেকে এই প্যানিক বোতাম টেপা হয়েছে, সেখানে আদৌ কিছু হয়নি। কৌতূহলবশত কেউ এই বোতাম প্রেস করেছেন। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পুলিশকে। এই দলে যেমন বাসের যাত্রী রয়েছেন, তেমনই স্কুলের পড়ুয়ারাও রয়েছে।
[আরও পড়ুন: কলকাতার মার্কিন দূতাবাসের সামনে আটক পাক মহিলা! ২৪ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ]
যাত্রী নিরাপত্তায় সমস্ত বাণিজ্যিক গাড়িতে ভেহিক্যাল লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেমও (VLTS) বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট করাতে গেলেই এই যন্ত্র বসাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্যানিক বোতামও। ভিএলটিএস বসালে কন্ট্রোলরুম থেকে গাড়ি গতিবিধি ট্র্যাক করা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী বাস, স্কুলবাস, পুলকার সব গাড়িতেই দু’মিটার অন্তর একটি করে বোতাম লাগাতে হয়েছে। বাসে দু’টি সিট অন্তর লাগানো হচ্ছে। মানে টাটা সুমোয় চারটি, বাসে সিট ক্যাপাসিটি অনুযায়ী কোনওটায় ৭টি কোনওটায় ৯টি, বড় বাসে আবার তার থেকেও বেশি।
পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, প্রথম দিকে এই যন্ত্রের দাম একটু বেশিই ছিল। ফলে গাড়ির মালিকরা তা লাগাচ্ছিলেন না। কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপে দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখন বাস-স্কুলবাসসহ সমস্ত যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক গাড়িতেই এই যন্ত্র বসেছে। পাশাপাশি লাগছে প্যানিক বোতামও। দিনে বেশ কয়েকবার পোদ্দার কোর্টে তৈরি হওয়া পরিবহণ দপ্তরের কন্ট্রোলরুমে এই বোতামের সংকেতও আসছে। তড়িঘড়ি গাড়ির মালিক এবং চালকের সঙ্গে ফোনে পুলিশ এবং দপ্তরের আধিকারিকরা যোগাযোগ করলে জানা যাচ্ছে, কৌতূহলবশত ওই বোতাম কেউ টিপে ফেলেছেন গাড়িতে। আদতে সেখানে কিছুই ঘটেনি। সপ্তাহে অন্তত গোটা পঞ্চাশেক কেস এরকম হচ্ছে বলেই খবর। তবে দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, যে কোনও নতুন জিনিসেই মানুষের আগ্রহ বা কৌতূহল থাকাটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। কিছুদিন গেলে আর কেউ এমনভাবে যখন-তখন প্যানিক বোতাম প্রেস করবেন না।
[আরও পড়ুন: চোখ মেলে তাকালেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রাইলস টিউবে খাওয়ানোর চেষ্টা]
পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধে্যই বিভিন্ন স্কুলের সামনে ক্যাম্প করেছি। সেখানে ভিএলটিএস যন্ত্র এবং প্যানিক বোতাম নিয়ে প্রচারও চালানো হয়েছে। সচেতনতা শিবির আগামী দিনেও হবে। স্কুলের বাচ্চারা হয়তো কেউ কেউ নতুন জিনিস দেখে হাত লাগিয়ে দিতে পারে। তবে আশা করি, ওদের বোঝানো হলে ঠিক করে তা আর করবে না।’’