সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে ২ বছর পর ফের বাংলাদেশের (Bangladesh) ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা ফিরল। দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মাপাড়ের জেলা শরিয়তপুরে বিলাসখান শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরানীর ২৭৮ বছরের পুরনো মন্দির প্রাঙ্গণে বসল মেলা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর এই মন্দিরে মেলা বসার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। তবে করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) কারণে গত দুই বছর এই ঐতিহ্যে ছেদ পড়েছিল। করোনা পরিস্থিতি এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসায় মন্দিরের প্রাঙ্গণে ফের বসেছে মেলা। উৎসবে মেতেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানে পূজার্চনায় বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনা করেছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান, শরিয়তপুর পৌরসভার ২ নন্বর ওয়ার্ডের বিলাসখান গ্রামে বাংলা ১১৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরানীর মন্দির। ওই মন্দিরের প্রাঙ্গণে প্রতিবছর পূজার্চনার পাশাপাশি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, পয়লা বৈশাখে মেলা বসে। গত শুক্রবার সকালে মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা উদ্বোধন করেন শরিয়তপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই। মেলা চলবে সোমবার পর্যন্ত।
[আরও পড়ুন: ‘পেট্রল আনতে বলেছিল মূল অভিযুক্ত লালন শেখের ভাগ্নে’, বিস্ফোরক বগটুই কাণ্ডে ধৃত টোটোচালক]
রমজানের কারণে এ বছর বিকেল পাঁচটার মধ্যে মেলা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম দিন পুণ্যার্থীরা কালীপুজো, মহাদেবপুজো ও শীতলাপুজো দিয়েছেন। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন খেলার আয়োজন। মাটির খেলনা, শোপিস, বাসনপত্র, গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। মেলায় আসা নীলিমা রানি জানান, বিয়ের পর থেকে তিনি প্রতি বছর এই মন্দিরে এসে পূজা দিয়ে পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন। মেলা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে বাড়িতে ফেরেন। শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরনীর মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ বণিক বলেন, অনেক রাজনৈতিক ও ভৌগলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ২৭৮ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর উৎসব ও মেলা হয়নি। এ বছর মানুষ প্রাণ খুলে পুজো-অর্চনায় যোগ দিচ্ছেন। শামিল হয়েছেন উৎসবে। জমে উঠেছে বাঙালির সংস্কৃতির মেলা। ইউএনও মনদীপ ঘরাইয়ের কথায়, ”মন্দিরটি অনেক পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী। এত পুরনো মন্দির সচরাচর দেখা যায় না। দুই বছর পর এলাকার মানুষ মন্দিরে উৎসবে মিলিত হয়েছে। রমজানে সংযমের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মেলার কার্যক্রম চলছে।”
[আরও পড়ুন: স্বামী জেলে, বসিরহাটে পরপুরুষের সঙ্গে লিভ ইন নৃত্যশিল্পীর, পরিণতি মর্মান্তিক]
বাংলাদেশে প্রতি বছর দু’দিন ধরে পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh)উদযাপিত হয়ে থাকে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ১৪ এপ্রিল এবং সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তিথি অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে থাকেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাংলা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে মেলা। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু মেলা চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টায় শুরু হয়ে এই মেলা চলছে রাত ৮টা পর্যন্ত।
মেলায় আগত শিশুদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই তাদের অভিভাবকেরাও। নাগরদোলায় উঠছেন কেউ কেউ। একপাশে চলছে পুতুল নাচ। অন্যদিকে বসেছে রং-বেরঙের মাটির পুতুল, হাতপাখা, তির-ধনুক, কাঁসার বাসনত্র, নকশিকাঁথা ও খাবারের দোকান। অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার বাংলা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলায় বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ বৈশাখী মেলার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। ফটক দিয়ে মেলায় প্রবেশ করে একটু এগোলেই বাঁ পাশেই চোখে পড়ে পুতুলনাচ। মেলার অন্যতম আকর্ষণ হারিয়ে যেতে বসা বায়োস্কোপ পোশাকের পাশাপাশি পুতুল, মাটি–শঙ্খ–কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র, হাতপাখা, কাগজের ফুল, মাটির টমটম, বেলুন বাঁশি, শতরঞ্জি, নকশিকাঁথা, তাঁতের কাপড়চোপড়, সুলার ফুল, নাগরদোলা, শুটার, ভূতের বাড়ি, সাম্পান নৌকা, চরকি, পুতুল ব্যাগ-সহ পাটের নানা জিনিস, মাশরুমের নানা খাবার, চটপটি-ফুচকা, বেতের শো পিসসহ নানা রকম জিনিস নজর কাড়ে নানা বয়সী দর্শনার্থীদের। আয়োজকেরা জানান, মেলায় মোট ১০০টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি স্টল ফ্রি। এবছর যৌথভাবে মেলার আয়োজন করেছে বাংলা অ্যাকাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন।