সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: শতবর্ষ প্রাচীন অযোধ্যা মামলার জট কেটে ভারতের ইতিহাসে নতুন একটা অধ্যায় লেখা হয়েছে শনিবারই। অযোধ্যার বিতর্কিত ভূমিতে রাম মন্দির তৈরিতে ছাড়পত্র দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। আলাদা ৫ একর জমিতে তৈরি হবে মসজিদও। এমন এক আইনি নির্দেশের পর সম্প্রীতির দেশে এখন খুশির জোয়ার। আর তাতে গা ভাসাতে বাদ যাচ্ছেন না কেউ। যে জায়গায় এমন এক বিতর্কের জন্ম, সেই অযোধ্যাই বোধহয় আজ সবচেয়ে বেশি আনন্দে ভাসছে। মন্দির তৈরির ভবিষ্যত আর খুব বেশি দূরে নেই, এই ভাবনাতেই এখন মশগুল অযোধ্যাবাসী। কারণ, মন্দির যে তাঁদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে।
ঐক্যবদ্ধ ভারতের একটা ছোট্ট সংস্করণ যেন আজকের অযোধ্যা। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনে সকলে স্বস্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ বিবাদ, দ্বন্দ্ব, বিতর্ক মিটে যাওয়া উদযাপন করতে সন্ধেবেলা সরযূ ঘাটের আরতির আয়োজন করেই অযোধ্যাবাসী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, নতুন করে আলো এসেছে তাঁদের জীবনে। আর রবিবার দিনভর দেখা গেল, অযোধ্যার রাস্তাঘাট একেবারে স্বাভাবিক। কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা নেই। নেই কারও প্রতি কোনও বীতরাগের বহিপ্রকাশ। রোজকার মতো পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকান, বাজার। গাড়ির গতি ছুটির দিনের মতো। রবিবারের দিন হওয়ায় বাড়তি ভিড়ও নেই। বাইপাস থেকে রাম মন্দির যাওয়ার রাস্তায় বেশ হেঁটেচলে, ইচ্ছেমতো কথা বলে বুঝে নেওয়া গেল পরিস্থিতি।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম নির্দেশে ৫ একর জমি কি গ্রহণ করা হবে? বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড]
নতুন মন্দির আসলে কী দেবে অযোধ্যাবাসীকে? শুধুই কি ইচ্ছেপূরণের আনন্দ বা ধর্মাচরণের মুক্ত দুয়ার? নাকি আরও কিছু? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা বলা হল কয়েকজনের সঙ্গে। আর বলে বোঝা গেল, নতুন মন্দির ঘিরে তাঁদের প্রকৃত স্বপ্ন আসলে অর্থনীতি বিকাশের। যে অর্থনীতির সুফল পাবেন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব অযোধ্যাবাসী। বাদ পড়বেন না কেউ। বৃদ্ধ দোকানদার থেকে শুরু করে ছাত্র, সকলেই একবাক্যে বলছেন, রাম মন্দির নতুন করে তৈরি হলে এখানকার চেহারাই পালটে যাবে। পর্যটন মানচিত্রে নতুন জায়গা হবে অযোধ্যার। শিল্প আসবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, অর্থনীতির বিস্তার ঘটবে। সেই সুদিনের দিকেই তাকিয়ে তাঁরা। বিশেষত যুব প্রজন্ম মন্দির ঘিরে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে।
[আরও পড়ুন: বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার পাশে কেন্দ্র, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা প্রধানমন্ত্রীর]
আর রইল বাকি সম্প্রীতির কথা। যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অশান্তির আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে ছিলেন, তাঁদেরই যেন জবাব দিয়ে অযোধ্যাবাসী বলছেন, কবে থেকেই তো তাঁরা মিলেমিশে রয়েছেন একই জায়গায়। কোথাও তো কোনও সমস্যা নেই। মসজিদ তৈরি হলে, হাত লাগাবেন সবাই। মন্দিরের ক্ষেত্রেও তাই। একজন তো বলেই ফেললেন, ‘যখনই এসবের মধ্যে রাজনীতি এসেছে, তখনই সব জটিল হয়ে গিয়েছে। যতক্ষণ রাজনীতি ছিল না, ততক্ষণ সব স্বাভাবিক ছিল।’ বোঝা গেল, রাজনীতির প্রভাবমুক্ত সমাজ জীবন হয়ত সত্যিই শান্তিদায়ক, ঐক্যবদ্ধ। যা এক করে রেখেছে ভারতকে, ভারতবাসীকে।
দেখুন ভিডিও:
The post মন্দির ঘিরে অর্থনীতি বিকাশের স্বপ্নে বুঁদ অযোধ্যাবাসী, শোনালেন আশার কথা appeared first on Sangbad Pratidin.