অভিরূপ দাস: যা কিছু নিষিদ্ধ, উদ্ভট তার প্রতি সহজাত আকর্ষণ। অশ্লীল, বীভৎসের প্রতিও তাই। লুকিয়ে নীল ছবি দেখা বা মর্মান্তিক দুর্ঘটনাস্থলে হামলে পড়া ভিড় এরই প্রমাণ। এবং আমজনতার বড় অংশের এই সুপ্ত ইচ্ছেকে পুঁজি করেই রোদ্দুর রায়দের (Roddur Roy) রমরমা।
‘কুকথার চ্যাম্পিয়ন’ রোদ্দুর রায় ওরফে অনির্বাণ রায়ের গ্রেপ্তারি ঘিরে এই মুহূর্তে নেটদুনিয়া তোলপাড়। তাঁর অনুরাগীরা আওয়াজ তুলছেন রোদ্দুর রায়কে ছেড়ে দিতে হবে। এদের একটা বড় অংশই তাঁর ভিডিওর নিয়মিত দর্শক। দেখতেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কুৎসিত খিস্তি, নজরুলকে নিয়ে নোংরা কথা, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে অশালীন ভাষার ছররা। সমালোচনার অছিলায় যেখানে এমন সমস্ত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা শুনলে কানের পোকা নড়ে যায়।
[আরও পড়ুন: অভিষেকের দুবাই সফরে কোনও বেনিয়ম নেই, ইডি’র তথ্যে মুখ পুড়ল বিজেপির]
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির ডিরেক্টর ডা. প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, গালিগালাজ দিয়ে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন রোদ্দুর রায়। আকষর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার নেশাতেই খিস্তিখেউড়। অশ্রাব্য ভাষার ভিডিও মানুষ হুমড়ি খেয়ে দেখতেনও। কিন্তু কেন? চিকিৎসকের কথায়, এটা হিউম্যান সাইকোলজির অন্ধকার দিক। যা পড়ে ফেলেছিলেন রোদ্দুর ওরফে অনির্বাণ রায়। রাস্তায় কেউ কলার খোসায় আছাড় খেলে ভিড় জমে যায়। ট্রেনে কাটা পড়া দেহ দেখতে ধাক্কাধাক্কি পড়ে যায়। এই ভিড় থেকে কেউ সাহায্য করেন না। সবাই হাঁ করে দৃশ্যটা গেলেন।” যেমনটা গিলতেন রোদ্দুর রায়ের ভিডিওতে। দু’আড়াই লক্ষ জনতা শুনতেন বিখ্যাত লোকেদের সম্বন্ধে তাঁর অশ্রাব্য খিস্তি।
বহুকাল আগে মার্ক টোয়েন জানিয়েছিলেন, যে কোনও নিষিদ্ধ জিনিসের একটা ‘চার্ম’ আছে, যা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে অদম্য করে তোলে। রোদ্দুরের মুখে গালাগাল শুনে পরম তৃপ্তি পেতেন যাঁরা তাঁদের সুস্থ স্বাভাবিক বলতে নারাজ মনোবিদরা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষের কথায়, “অন্যকে অপমানিত, দুঃখিত হতে দেখে আনন্দ পান অনেকে। একে বলা হয় ‘স্যাডিস্টিক প্লেজার’। রোদ্দুর রায়ের ভিডিওর দর্শকরাও অন্যকে অপমানিত হতে দেখে স্যাডিস্টিক প্লেজার অনুভব করতেন।” রোদ্দুর রায় যখন বিখ্যাত মানুষদের সম্বন্ধে নোংরা ভাষা ব্যবহার করছেন, মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করেন দর্শকরা। যদিও বিশিষ্টরা বলছেন, রোদ্দুর রায়ের এই জনপ্রিয়তা অত্যন্ত ঠুনকো। আয়ু বড়জোড় তিন-চার বছর।