ডেট ফান্ডের গুরুত্ব লগ্নিকারীদের কাছে আজ আর নতুন করে তুলে ধরা অর্থহীন। তবে নয়া ফিসক্যাল ইয়ার গোড়ার দিকে এবং যেহেতু দিন কয়েক আগে সরকার ইনডেক্সেশন বেনিফিট সংক্রান্ত ধারাতেও বদল এনেছেন, তাই সুযোগ-সুবিধাতেও এসেছে বৈচিত্র্য। সেগুলি কী কী, সতর্কতাই বা কোন কোন ক্ষেত্রে নেওয়া অত্যাবশ্যক, বিনিয়োগকারীদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলেন নীলাঞ্জন দে।
নতুন অর্থবর্ষ এসে পড়েছে। এই কয়েকদিন আগে সরকার ইনডেক্সেশন বেনিফিট সংক্রান্ত নিয়ম বদলে দিয়েছেন, ডেট ফান্ড ইনভেস্টরদের আর আয়কর-জনিত বিশেষ সুবিধা থাকবে না। তাহলে কেবল রিটার্নই ঋণভিত্তিক লগ্নির মূল আকর্ষণ হবে আগামিদিনে। এক ঝলকে এবার অামরা দেখে নিই, ডেট ফান্ডে কী পেতে পারেন সাধারণ ইনভেস্টর? এই শ্রেণীর ফান্ডে বিনিয়োগ করলে আরও কোন বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে তাঁদের? প্রথমেই বলে রাখি যে, সেবির শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী, বেশ কিছু ধরনের ডেট ফান্ড এই মুহূর্তে পেতে পারেন ইনভেস্টর। শর্ট টার্ম, লং টার্ম এবং এই দুইয়ের মাঝে মধ্যমেয়াদী লগ্নির পক্ষে আদর্শ, এমন ফান্ডও আছে বাজারে। সবেতেই রিস্ক থাকে কমবেশি, তবে দুই জাতের রিস্ক নিয়ে বিশেষভাবে সজাগ থাকতে হবে বিনিয়োগকারীদের।
ইন্টারেস্ট রেট রিস্ক : সুদের হারে যখন পরিবর্তন আসে, যেমন ইদানীং ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণের পলিসির কারণে হচ্ছে, তখন ডেট ফান্ডের সামনে নতুন ঝুঁকি চলে আসতে পারে। ফলত, রিটার্নের উপর চাপ আসে, এবং ফান্ড ম্যানেজারের দায়িত্বও বাড়ে।
ক্রেডিট রিস্ক : ডেট মার্কেটে যদি কোন ইস্যুয়ার (অর্থাৎ ঋণপত্র বাজারে ছেড়েছে এমন সংস্থা) ডিফল্ট করে (বা তেমন সম্ভাবনা থাকে) তখন বিনিয়োগকারী সময়মতো সুদ পান না অথবা প্রিন্সিপাল (মূলধন) ফেরৎ পান না। এর জন্যও রিটার্ন কমে আর ইনভেস্টরের জন্য ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে।
[আরও পড়ুন: মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সামান্য স্বস্তি মধ্যবিত্তর, একাধিক স্বল্প সঞ্চয় স্কিমে বাড়ল সুদের হার]
এই দুই রিস্ক মেনে নিয়েই লগ্নিকারীকে ডেট ফান্ডে অ্যালোকেশন করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রকের নির্দেশিকা (যেমন নির্দিষ্ট স্কিমের ‘রিস্কোমিটার’) ভাল করে জেনে নিয়েই যেন আগামিদিনে তাঁরা লগ্নি করেন। এবার আসি বিভিন্ন ডেট ফান্ডের শ্রেণিগুলির বিষয়ে। এই প্রসঙ্গে আলোচনার খাতিরে আমরা বেছে নিয়েছি Franklin Templeton Mutual Fund-এর কথা। কোনও পক্ষপাত ছাড়াই।
এছাড়াও মনে রাখতে হবে যে মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী শ্রেণির ফান্ড আছে, আলাদাভাবে সেগুলির কথা আর সঙ্গের তালিকায় দেওয়া হল না। সব মিলিয়ে নেই ফান্ডের জগৎ বেশ বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিনিয়োগ করার সময় কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে। মেয়াদ বুঝে লগ্নি করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী ফান্ডে যেন স্বল্পমেয়াদী টাকার অ্যালোকেশন না হয়ে যায়। আবার স্বল্পমেয়াদী ফান্ডে যেন দীর্ঘমেয়াদী টাকাও না চলে যায়।
প্রতিটি ডেট ফান্ডের নিজস্ব ‘ইনভেস্টমেন্ট অবজেক্টিভ’ আছে, সেটি জেনে নিতে হবে। ভাল ইনকাম জেনারেশন চাইছেন না ইক্য়ুইটির তুলনায় কেবল কম রিস্ক চাইছেন, তাও বুঝে নিয়ে অ্যালোকেশন করুন।
পোর্টফোলিওর দিকে নজর দিন। নিজের পছন্দসই ফান্ডে কী জাতীয় সিকিউরিটিজ আছে, তা জানা দরকার। বিশেষত, পরখ করে নিন পোর্টফোলিওর অ্যাভারেজ ম্যাচুরিটি এবং ডিউরেশন। রিস্ক প্রোফাইলের সঙ্গে যথাযথ মিল না হলে ফান্ডটি আপনার জন্য উপযোগী হবে না। উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে আমরা Sundaram Mutual Fund-এর দুটি স্কিমের তুলনা টেনেছি। সঙ্গের চার্টে নজর রাখুন।
সুন্দরমের এই দুই ফান্ডের সাহায্যে আমরা ডেট ফান্ডের দুনিয়ার বৈচিত্র্যর একটা ধারণা পেতে পারি। ম্যাচুরিটি, ডিউরেশন, ইল্ড ইত্যাদির কথা অামরা ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের আগে একাধিক বার জানিয়েছি। এখন তাই পুনরাবৃত্তি না করে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি হোল্ডিংগুলির বৈচিত্র্যের দিকে। উদাহরণ হিসাবে বেছে নিচ্ছি বিড়লা সানলাইফ মিউচুয়াল ফান্ডের Banking and PSU Debt Fund-কে। সঙ্গের ক্রেডিট রেটিং প্রোফাইল দেখুন।
বিঃদ্রঃ – এছাড়াও পোর্টফোলিওর মধ্যে রেটিং ছাড়া (Unrated) বা অন্য রেটিংযুক্ত কিছু সিকিউরিটিজ আছে। ফান্ডটির চরিত্র ক্রেডিট রেটিং প্রোফাইল দেখলে অনেকাংশে জানা যাবে।
‘সঞ্চয়’-এর বক্তব্য : মনে রাখতে হবে যে, সরকারিভাবে ইনডেক্সেশন বেনিফিট সংক্রান্ত নিয়ম বদলে গেছে। তাই ডেট ফান্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের তুলনা অারও জোরদার হতে চলেছে। রক্ষণশীল বিনিয়োগকারী হয়তো উচ্চ হারে ইন্টারেস্ট পেতে এবার বেশি আগ্রহী হবেন, বিশেষত যেখানে ট্যাক্সের নীতির পরিবর্তন করা হয়েছে (যার ফলে ডেট ফান্ডের আকর্ষণ অন্তত আংশিকভাবে কমেছে)। লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা।