‘কারেকশন’ কি শুরু হয়েছে? না কি বাজার আজও ‘বুলিশ’? আর তাই যদি হয়, তাহলে কী ধরনের পদক্ষেপ করা বাঞ্ছনীয়? অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের বাজারেও কি আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে? প্রশ্ন একাধিক। উত্তরও তাই। লগ্নিকারীদের যাবতীয় কৌতূহলের নিরসন এই লেখায় করলেন বিশিষ্ট লগ্নি পরামর্শদাতা প্রসূনজিৎ মুখার্জি
চলতি হাওয়ার পন্থী হয়ে অনেক নতুন ইনভেস্টররা তো বটেই, বহু পোড়-খাওয়া লগ্নিকারীরাও দেখছি 'বুল মার্কেট' নিয়ে নিশ্চিন্ত। বা তাদের ভাবভঙ্গি দেখে এমনও মনে হয়েছে যে আরও বেশ কিছু কাল ধরে যে 'বুলিশ' থাকবেই পরিস্থিতি, সে বিষয়ে তাঁরা একদম নিশ্চিত। তা সত্ত্বেও আমার প্রশ্ন – বাজারের এই ইতিবাচক চিন্তাধারা উল্টে দিয়ে কি কোন কারণে “বুল রান” থেমে যেতে পারে? দায়িত্ববান ইনভেস্টররা নিশ্চয় এই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাবেন না। কয়েকটি চলতি বিষয় তাঁদের মনে করিয়ে দিই আজকের লেখায়।
প্রথমে বলি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অবস্থা সমগ্র বাজারের ক্ষেত্রে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। বিশ্বের নানান কোণে তার অভিঘাত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট, সকলেই উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি খুব সহজে এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা দুস্তর হবে, তাই রাজনীতির গতিবিধির উপর নজর রাখা দরকার। বোঝাই যাচ্ছে ক্রড অয়েলের যোগান এবং দাম, দুই-ই এই মুহুর্তে খুব স্পর্শকাতর ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেলের যোগানের উপর বহু কিছু নির্ভর করে বর্হিবিশ্বের জন্য। ক্রুডের দাম যদি বাড়তে থাকে, এবং তার সঙ্গে শিপিং ফ্রেটের কস্টও যদি উঁচুর দিকে ওঠে, তাহলে আমাদের মতো দেশের জন্য তা সুবিধাজনক হবে না। ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য দাম-বাড়ার পরিস্থিতি বড়-সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তাতে প্রফিট কমে আসার সম্ভাবনা থাকে কারণ র’ মেটেরিয়ালের দাম বাড়তে থাকে। এমন অবস্থা আগেও দেখেছি আমরা। বিশেষত “সুপার পাওয়ার” বলে চিহ্নিত দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে যে পদক্ষেপ নেয়, তা খুব ইঙ্গিতবাহী হয়ে যায়। বিশ্বের তামাম সিকিউরিটিজ মার্কেটের জন্য অবশ্যই তা প্রাসঙ্গিক।
এবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ভারতীয় বাজার কি “এক্সপেন্সিভ”? হ্যাঁ অবশ্যই। আর এরই সঙ্গে বলতে চাই পৃথিবীর নানা প্রান্তে অন্য দেশে অাকর্ষণীয় ভ্যালুয়েশন (পড়ুন : তুলনায় সস্তা) পাওয়া সম্ভব। এই মুহূর্তে লিখতে বসে দেখছি চিনে ইতিমধে্যই গত দুবছরের লো ভ্যালুয়েশনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। চিনের মার্কেট এখন প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট টানতে চলেছে। অতএব পরের সম্ভাব্য প্রশ্ন হল, আমাদের বাজারেও কি বড় মাপের কারেকশন আসতে পারে? এখানে আমি “টাইম কারেকশন” সম্বন্ধে বলছি। একই অবস্থা তো হতেই পারে। মনে করা যাক, নিফটি ফিফটি আগামী পাঁচ বছরই পঁচিশ হাজার পয়েন্টের আসেপাশেই ঘোরাফেরা করবে। তাই আজকের লগ্নিকারীরা কিছু হারাবেন না – মানে “অ্যাবসোলিউট” হিসাবে কোনও লস হবে না তাঁদের, কিন্তু এক অর্থে তাতে ক্ষতি হবেই। গ্রোথ নেই, কেবলই “সাইডওয়েজ মুভমেন্ট” হলে ইনভেস্টরদের অসুবিধা হবে।
তাহলে কি সোনা বা অন্য অ্যাসেট ক্লাস আমাদের জন্য ভালো বিকল্প? আমরা বিগত অনেক বছর ধরেই গোল্ডের দাম বাড়তে দেখছি, প্রতি ধাপেই বিনিয়োগকারীরা এই ধাতুটি নিয়ে উত্তেজিত থাকেন। স্বাভাবিক, কারণ সোনার দাম তো উত্তরোত্তর চড়ছেই। গত বছর খানেক ধরেই এই চড়ার ধারাটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে–আমার মনে হয় সোনার প্রসঙ্গে ইনভেস্টরদের কৌতুহল থাকবেই আগামিদিনে। ইক্যুইটিতে যেতে পারতো, কিন্তু তা না গিয়ে গোল্ডে গিয়েছে–এই সূত্রটি আরও স্ফীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এই সন্ধিক্ষণে। ইদানীং রুপোও বেশ বড় গ্রোথের ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, এখানেই উঠে আসে ফিক্সড ইনকাম তথা ডেটের কথা। অনেকের কাছে এটি আর তেমন প্রয়োজনীয় অ্যাসেট ক্লাস নয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে কয়েকটি বিষয় :
১. ইক্যুইটির ক্ষেত্রে “ওভার ভ্যালুয়েশন” বেশ পরিষ্কার।
২. গোল্ড বা রিয়েল এস্টেট অবশ্যই বিকল্প হিসাবে গ্রহণযোগ্য, তবু অন্য অ্যাসেটের সন্ধানে থাকবেন ইনভেস্টরদের এক বড় অংশ।
৩. ডেট (যা নিশ্চিতভাবে সুদ দিয়ে সক্ষম) অবশ্যই কম রিস্ক বহন করে – বিশেষত ইক্যুইটির তুলনায়।
৪. যদি ইন্টারেস্ট রেট কমে আসে, তাহলে দামের সঙ্গে inverse relationship থাকার দরুণ, ডেট সিকুইরিটিজের দাম চড়বে। দীর্ঘ মেয়াদী ডেটের স্বপক্ষে যাঁরা যুক্তি দেন তাঁরা নিশ্চয় এই সম্ভাবনার প্রতি অবস্থা রাখছেন।
৫. সব মিলিয়ে মিশিয়ে অ্যাসেট অ্যালোকেশন যদি করতে পারেন, তাহলে আপনার পোর্টফোলিও যথেষ্ট ডাইভারসিফায়েড হবে।