২৩ জুলাই, মঙ্গলবার ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এবারের বাজেটে কী কী দিকে খেয়াল রাখা উচিত হবে? অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া তথা এএমএফআই-এর তরফে আসন্ন বাজেট উপলক্ষে ডেট ফান্ডের জন্য করছাড়, পেনশন স্কিম প্রভৃতি নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, এর প্রতিফলন কি বাজেটে দেখা যাবে? ‘সঞ্চয়’-এর জন্য বিশেষ বিশ্লেষণধর্মী লেখায় লগ্নি পরামর্শদাতা নীলাঞ্জন দে।
ডেট ফান্ডের জন্য বিশেষ ট্যাক্স ছাড়, লং টার্ম ক্যাপিটাল গেনস এবং পেনশন-সম্বন্ধীয় স্কিম নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব এনেছে অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া (AMFI)। আসন্ন বাজেটের দিকে তাকিয়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলোর প্রাথমিক চিন্তাভাবনার হদিশ দিতে পারে এই প্রস্তাবগুলো। সংক্ষেপে তারই আলোচনা। ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট ট্যাক্স, এই দুই অংশে ভাগ করে এগিয়েছে বিশ্লেষণ।
মূল বিষয়গুলো–
১. ডেট ফান্ডের ইউনিট যদি তিন বছর পরে রিডিম করা হয়, তাহলে ক্যাপিটাল গেনসের উপর কেবল ১০% হারে ট্যাক্স বসানো যেতে পারে (ইনডেক্সেশন সুবিধা ছাড়া)। তাহলে ডেবেঞ্চারের সঙ্গে সমতূল্য হবে ডেট ফান্ডও।
২. পেনশন-ওরিয়েন্টেড স্কিম দরকার। একটি বিশেষ শ্রেণি – Mutual Fund Linked Retirement Scheme (MFLRS) – তাই প্রস্থাবের মধ্যে রাখা হয়েছে। এগুলোর জন্য ট্যাক্স বেনিফিট যেন থাকে, যেগুলি NPS (National Pension System)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
৩. ইনকাম ট্যাক্স আইনের Section 54 EC-র আওতায় আসে ‘Specified Long-Term Assets’। অ্যামফি কর্তৃপক্ষ চান, মিউচুয়াল ফান্ডও যেন এই আইনের জন্য একইভাবে চিহ্নিত করা হয়। এই ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে তিন বছরের লক-ইন থাকতে পারে– যেমন আলাদাভাবে চিহ্নিত করা স্পেসিফায়েড স্কিমের ক্ষেত্রে থাকে।
[আরও পড়ুন: বহুমুখী বিনিয়োগেই সম্ভব অভীষ্ট লক্ষ্যপূরণ, মাথায় রাখুন মাল্টি অ্যাসেটের বিষয়]
এখানে কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে লংটার্ম গেনসের (Section112A) কথা বলেছেন। ইক্যুইটির ক্ষেত্রে লংটার্ম লাভের উপর ১০% ট্যাক্স দিতে হয়। এবং বছরে এক লক্ষ টাকার বেশি হলেই তা দিতে হয়। AMFI এখানে দুটি প্রস্তাবের কথা তুলেছে :
(ক) এক বছরের বেশি (তিন বছর পর্যন্ত) যদি ইউনিট ধরে রাখা হয়, তাহলে ১০% ট্যাক্স দিতে হবে যদি মোট ক্যাপিটাল গেনস বছরে দুই লক্ষ টাকার বেশি হয়।
(খ) যদি ইউনিট তিন বছরের পর বিক্রি করা হয়, তাহলে ট্যাক্স সম্পূর্ণভাবে মকুব করা দরকার। এর জন্য Section 112A-র যথাযথ পরিবর্তন করতে হবে।
এর মূলে রয়েছে যে ধারণা, তা বছরে এক লক্ষ টাকার সীমারেখা সম্বন্ধীয়। বলা হচ্ছে, এই সীমা খুবই কম। এখনকার দিনে বিশেষত এর প্রাসঙ্গিকতা কমে এসেছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদের জন্য হোল্ডিং যাতে থাকে, সাধারণ লগ্নিকারীরা যাতে অনেকদিন ধরে রাখেন তাঁদের ইউনিট এই পরিবর্তন আনা খুব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
AMFI-এর মতে :
১. সক্রিয় বন্ড মার্কেট থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। সেখানে লিকুইডিটিও যেন যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। তাহলে প্রাইভেট সেক্টর থেকে ভাল লগ্নি হবে, এমন আশা করা যেতে পারে।
২. রিটেল বিনিয়োগকারী তেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইনভেস্ট করেন না ডেট মার্কেটে। এই দূরত্ব কমিয়ে আনা দরকার। তাই ছোট লগ্নিকারীর সাহায্য খুব প্রয়োজন।
৩. ডেবেঞ্চারের ক্ষেত্রে লংটার্ম ক্যাপিটাল গেনস (LTCG) যেমনভাবে দেখা হয় (অায়করের নিয়মে) ডেট ফান্ডের জন্যও একইভাবে তা দেখতে হবে।
৪. NPS-এর জন্য আয়কর আইনের Section 80CCD (1) এবং Section 80CCD (1B) খুবই জরুরি। পেনশন ওরিয়েন্টেড স্কিমের জন্যও যেন এগুলি গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য, সেবি ইতিমধে্যই Long Term Policy for Mutual Funds নামক নীতির কথা জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত 401(K) প্ল্যানের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। পেনশন সংক্রান্ত সুবিধা বেশিরভাগ ভারতীয় কর্মীরই নেই। যথাযথ ট্যাক্স ইনসেনটিভ যদি দেওয়া হয়, তাহলে বহু লগ্নিকারী সুরাহা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদী সেভিংসও এইভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: QIP বাবদ ৮০০ কোটি উপার্জন জুপিটার ওয়াগনসের, হাসি ফুটল লগ্নিকারীদের মুখে]
ডেট-লিঙ্কড সেভিংস স্কিম
১. DLSS বা ডেট-লিঙ্কড সেভিংস স্কিম দরকার, যাতে ELSS-এর (অথবা ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম) মতোই এখানে ট্যাক্স ছাড় পাওয়া যায়।
২. ভারতী বন্ড মার্কেটের জন্য এই প্রস্তাব জরুরি। DLSS-এর মাধ্যমে যা কালেকশন হবে তার সিংহভাগই বিনিয়োগ করা হবে বিভিন্ন বন্ড/ডেবেঞ্চার বা অনুরূপ সিকুইরিটিজে।
৩. প্রতিবছর অন্তত ১,৫০,০০০ টাকা যেন DLSS-এ লগ্নি করা যায়। এর জন্য আলাদা লক-ইন থাকতে পারে। অ্যামফি কর্তৃপক্ষ পাঁচ বছরের কথা বলেছেন।
৪. ট্যাক্স সেভিং ফিক্সড ডিপোজিট, যা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কিনতে পারেন গ্রাহক, পাঁচ বছরের জন্য লক-ইন থাকে। অতএব প্রস্তাবিত DLSS -ও এই শ্রেণির ডিপোজিটের সমতূল্য হয়ে যাবে, কর্তৃপক্ষের অভিমত।