ব্যাংককর্মী কিংবা সরকারি আধিকারিকের ভেক ধরে প্রথমে আসবে একটা ফোন কিংবা মেল, অথবা টেক্সট ম্যাসেজ। এর যে কোনও একটিকে হাতিয়ার করে আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে একটি লিংক। পরবর্তী নির্দেশ–তাতে ক্লিক করে, নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, লগ ইন তথ্য কিংবা পিন, ওটিপি দিয়ে দিন। শুধু তাই নয়! আপনার আস্থা অর্জনের জন্য ওই ফোন/মেলে দেওয়া হতে পারে, অকস্মাৎ জরুরি কোনও পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসার অজুহাতও। সাবধান! ওইটিই কিন্তু ফাঁদ। মস্ত বড় প্রতারণাচক্রের ফাঁদ। সেকেন্ড খানেকের ভুলে তাতে পা দিয়ে দিলেই, হারাতে পারেন সর্বস্ব। বিপর্যয় রুখতে গ্রাহকদের সতর্ক করলেন এইচডিএফসি ব্যাংকের হেড ক্রেডিট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল, মণীশ আগরওয়াল।
গ্রাহকরা সাবধান! আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার নতুন, নতুন পথ বের করেছে প্রতারক-জালিয়াতরা। সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর নানাবিধ কৌশল প্রয়োগ করে, নিশানায় থাকা গ্রাহকদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলছে প্রতারকরা। আর এভাবেই হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত এবং ব্যাংকিং সংক্রান্ত যাবতীয় গোপন তথ্য। প্রতারকরা নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করছে, কখনও গ্রাহকদের সামনে অবিশ্বাস্য এবং অভিনব সমস্ত ‘অফার’ রেখে তাদের প্রলুব্ধ করে, কখনও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার কখনও স্রেফ হুমকি দিয়ে। অতিমারীর সূচনাকাল থেকেই ডিজিটাল প্রতারকরা নিজেদের চিরাচরিত কৌশলে বদল এনেছে। তারা প্রতারণার এমন উপায় খুঁজে বের করেছে যার মাধ্যমে সহজেই মানুষের আস্থা অর্জন করা যায়।প্রতারকরা সাধারণত বড় তথা মেট্রোপলিটন শহর লাগোয়া এলাকা তথা মফস্বলগুলিতেই সক্রিয়, যাতে সেখানকার পুলিশ এবং আইন-কানুন বজায় রাখার দায়িত্বে থাকা সংস্থার হাত থেকে সহজেই বাঁচতে পারে।
[আরও পড়ুন: রুপোয় লগ্নি করতে চান? অবশ্যই জেনে নিন এই বিষয়গুলি]
এগুলি সবই ‘ভিশিং অ্যাটাক’ (ভয়েস বা VoIP phishing) এর ঘটনা। এই ক্ষেত্রে প্রতারকরা কোনও ভুয়ো পরিচয়ে বিশেষত ব্যাংক কর্মী/বিমা এজেন্ট/স্বাস্থ্যকর্মী বা সরকারি আধিকারিকের ছদ্মবেশে গ্রাহককে ফোন করে। তারা গ্রাহকের নাম, জন্মতারিখের মতো সাধারণ কিছু তথ্য জিজ্ঞাসা করে সেগুলি নিশ্চিত করে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে কথার চাতুরিতে গ্রাহকের আস্থা অর্জনের পর, তাদের নানা জরুরি পরিষেবা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তাদের কাছ থেকে গোপনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য বের করে নেয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার, জরুরি পরিস্থিতির অজুহাত দিয়ে (যেমন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যাওয়া প্রভৃতি) প্রতারকরা গ্রাহকের উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাদের ভয় দেখিয়ে, ব্যক্তিগত তথ্য জানার চেষ্টা করে। এই সব তথ্য দিয়েই পরে গ্রাহকদের প্রতারণা করা হয়।
এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনও রকম টাকা জমা দেওয়ার বা প্রাপ্তির জন্য ওটিপি বা পিন দিয়ে যাচাইকরণের কোনও দরকার হয় না। তাই, এই ধরনের যে কোনও অনুরোধ এলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
এই প্রতারকরা বর্তমানে অনেক সময় সপ্তাহব্যপী কাজের দিন (শনি, রবিবার বাদে) এবং অফিসের কাজের সময় গ্রাহকদের ফোন করে, এটা বোঝানোর জন্য যে, তাদের ফোন বৈধ এবং অফারগুলিও আইনসঙ্গত।
[আরও পড়ুন: প্রপার্টির বাজারে লগ্নির সুযোগ, তবে মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়গুলি]
HDFC ব্যাঙ্কের ‘ফ্রড ডিসপুট টাইম’ বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে ৬৫-৭০ শতাংশ সাইবার প্রতারণা ঘটেছে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে। এই বিশ্লেষণে আরও জানা গিয়েছে যে, ৮০-৮৫ শতাংশ প্রতারিত গ্রাহকের বয়স ২২ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে, যাদের প্রযুক্তির বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষ বলেই মনে করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, সাইবার প্রতারণার ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে ২০২১ সালের ১৭ই জুন একটি কেন্দ্রীয় সহায়তা নম্বর, ১৫৫২৬০ চালু করেছে, যেখানে গ্রাহকরা, সাইবার জালিয়াতির অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারেন। হেল্পলাইনটি সংশ্লিষ্ট রাজ্য পুলিশ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং রিপোর্ট করা ঘটনাগুলির সিটিজেন ফিনান্সিয়াল সাইবার ফ্রড রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বিহিত করা হয়, যা আইনরক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থা, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে সংযুক্ত।
এর সঙ্গেই HDFC ব্যাঙ্ক তার গ্রাহকদের সামাজিক মাধ্যম, টেক্সট বার্তা, ইমেল এবং পর্যায়ক্রমিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিরাপদ ব্যাংকিং-এরও প্রচার করছে, যেখানে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে জালিয়াতির সাম্প্রতিকতম পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে গ্রাহকদের সতর্ক করে দেওয়া এবং কী কী করণীয়, তা-ও বাতলে দেওয়ার উপর।
‘সঞ্চয়’ এর পাঠকদের জন্য বিশেষভাবে লেখা