ইনভেস্টরদের কাছে লগ্নির আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠছে কনজিউমার সেক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার আয় বাড়লে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় এই কনজিউমার সেক্টরই। কেন এখানে লগ্নি করলে সাধারণ বিনিয়োগকারী লাভবান হতে পারেন, আলোচনা করলেন পেরেন্টস ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়।
ভোট-পর্ব পেরিয়ে নতুন বাজেট ইতিমধ্যেই পেশ হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নীতি (মূলত অপরিবর্তিত)। বাজার বেশ জোরাল, ইক্যুইটি মার্কেটে নতুন লগ্নিকারীরা পা রাখছেন, পুরনোরাও পিছিয়ে নেই। একদিকে এক দল বাজার বিশেষজ্ঞের কাছে স্টক ভ্যালুয়েশন যথেষ্ট উঁচুর দিকে। আবার অন্যদিকে আর এক শ্রেণির পেশাদাররা বলছেন, নতুন বড় লগ্নি এলেও গ্রোথ পেতে অসুবিধা হবে না। সুতরাং ‘পিকচার তো আভি বাকি হ্যায় মেরি দোস্ত’ ধরনেরই যাবতীয় মতামত। এদিকে ‘আনারকলির’ মতো অবস্থা সাধারণ লগ্নিকারীদের। বাজারে থাকব? না, লাভের অঙ্ক ঘরে তুলে নেব?–সেই নিয়ে তাঁরা পুরোপুরি বিভ্রান্ত। কিন্তু কিছু কিছু সেক্টর আছে, যা বাজারের এই উচ্চ P/E তে যথেষ্ট আকর্ষণীয়। আগামী দিনগুলোতে এই সব সেক্টর হবে লগ্নিকারীদের কাছে বিনিয়োগের মুক্তাঞ্চল। তেমনই একটি সেক্টর হল কনজিউমার সেক্টর।
এখন জেনে নেওয়া যাক, কী এই কনজিউমার সেক্টর এবং কেন এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়? সোজাভাবে বলতে গেলে, যা আপনি ভোগ করেন তাই কনজিউমার সেক্টরের মধ্যে পড়ে। সাধারণভাবে ধরা হয়, আপনার আয় বাড়লে সবচেয়ে সুবিধা পায় কনজিউমার সেক্টর। একটি সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছে, ভারতীয়দের আয় বাড়লে Marginal Propensity to Consume (MPC) বাড়ে অনেকটাই। সুতরাং ভোগ্য পণ্যের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে।
[আরও পড়ুন: রিটার্নের সাতকাহন, লগ্নির আগে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো]
জনগণের ‘মহা রায়’-এ একক রাজনৈতিক দলের কাছে ‘দিল্লি বহুদূর’ রয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সকলেই চায়, ‘জনতা জনার্দন’কে হাতে রাখতে। সুতরাং কেন্দ্র সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভরতুকি প্রদানের প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবং ‘প্রো-পিপল’ পলিসি এই সেক্টরে বিনিয়োগ টানার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারতবর্ষের MPC বাড়ার জন্য এই সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়। সুতরাং অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পটভূমিকায় বিনিয়োগকারীও এই সেক্টরে বিনিয়োগ করে লাভের কড়ি ঘরে তুলবে বলে আশা করা যায়।
এখন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে আপনিও এই কনজিউমার সেক্টরে বিনিয়োগের মহোৎসবে অংশগ্রহণ করবেন। সবচেয়ে সহজ এবং আকর্ষণীয় উপায় হল, কনজিউমার সেক্টরের ইটিএফ-এ বিনিয়োগ করা। এর জন্য আপনাকে কোনও শেয়ার ব্রোকারের কাছে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এছাড়াও কনজিউমার সেক্টরের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারেও আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে যদি আপনার বিনিয়োগের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে বা আপনি নবাগত (নিউকামার) হন, তা হলে আপনার জন্য ইটিএফ-ই শ্রেয়।
বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমেও আপনি এই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। কম ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারী সিপ এবং এসটিপি-র মাধ্যমে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই আপনার বিনিয়োগ পরামর্শদাতার সাহায্য নেবেন। ভারতবর্ষের ‘জনতা জনার্দন’ যেখানে ভোগের জন্য খরচ করছেন, সেখানে আপনিও আপনার ‘বিনিয়োগের হালখাতা’ খুলতে পারেন। ভোগ্য পণ্য নির্ভরশীল ভারতবর্ষের নতুন প্রজন্ম আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে আপনার বিনিয়োগের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অমৃতকালে।