গতিকে বুঝে চলতে হয়। এর সামান্য হেরফের হলেই বাড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। শুধু ব্যক্তিজীবনে নয়, অর্থনীতির ময়দানেও নিয়মটা একই। তাই ইকোনমি যতই দ্রুতগতিতে এগোক না কেন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পাঠ অত্যন্ত জরুরি। বিশ্লেষণে লগ্নি বিশেষজ্ঞ সোমকান্তি সরকার।
GDP কথাটা আমাদের ইনভেস্টারদের মধ্যে গত বেশ কিছু কাল ধরে চর্চা ও আলোচনার মধ্যে থাকলেও এখন এর আগে যুক্ত হয়েছে ‘ট্রিলিয়ন’ কথাটি। মানে কত GDP কত ট্রিলিয়ন। এটা একটা ট্রানজিশন ফেজ, আমরা এখন ‘ডেভলপিং’ থেকে ‘ডেভলপড’ দিকে যাচ্ছি। আর এই সময়ই অর্থনীতির গতি হয় সব থেকে বেশি। তবে সাবধান! সাধারণত যে কোন গতিই আবার দুর্ঘটনারও কারণ।
চলুন আজ আলোচনা করি, এই গতির সঙ্গে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের আর ঠিক কোথায় এবং কীভাবে নির্বাচন করতে হবে স্টক। ‘সোচ কর, সমঝ কর, ইনভেস্ট কর’ – পাবলিক ইন্টারেস্টে এই কথাটি কিন্তু খুব জরুরি।
এই Graph থেকেই পরিষ্কার, কতটা ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের এই অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। আমরা সকলেই জানি, স্টকের ক্ষেত্রে মূলত লার্জ ক্যাপ, মিডক্যাপ আর স্মল ক্যাপ–এই শ্রেণীগুলি থাকে।
আর জানার বিষয় হল, এই রকেট গতির সব থেকে বড় কন্ট্রিবিউটর কারা? কোনও সন্দেহ নেই, লার্জ ক্যাপের সঙ্গে সঙ্গে মিড ও স্মল ক্যাপ, দুই শ্রেণীই সমান তালে তাল মিলিয়ে চলছে। আর এখন থেকে আগামিদিনে দিনে মিড ও স্মল ক্যাপের ভূমিকা হবে আরও বেশি।
[আরও পড়ুন: মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে শুধু আয় নয়, ঝুঁকির কথাও মাথায় রাখুন]
নানা ধরনের মতামত থাকলেও এটা দেখা গিয়েছে যে, লার্জ ক্যাপের তুলনায় মিড আর স্মল ক্যাপই বেশি ঝুঁকির। তাহলে স্টক বাছাই করার নিয়ামকগুলো কী কী হওয়া উচিত।
(১) ডেট-ফ্রি কোম্পানি : এইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও লোন বা ধার ছাড়া ব্যবসা বিশেষ হয় না। তবে সেই কোম্পানির কত তাড়াতাড়ি বা দক্ষতার সঙ্গে ধার মিটিয়ে ডেট-ফ্রি হতে পেরেছে, তাই
বিচার্য হয়।
(২) স্কিন ইন দ্য গেম : এর মানে কোম্পানির প্রোমোটারদের কত ইনভেস্টমেন্ট আছে সেই কোম্পানির শেয়ারে। কোনও নিয়ম না থাকলেও ৫০% বা তার বেশিকে পজিটিভ বলে ধরা হয়।
(৩) লিডারশিপ কোয়ালিটি : কোম্পানির শীর্ষ থেকে মধ্য মানে টপ টু মিড ম্যানেজমেন্ট এবং কোম্পানিতে তাদের স্থায়িত্ব, পূর্বের কর্ম দক্ষতা এবং কোম্পানিতে তাদের অবদান অন্যতম বড় ফ্যাক্টর।
(৪) আরওই (রিটার্ন অন ইক্যুইটি) : কম্পাউন্ডেড গ্রোথ @10% দশ বছরের জন্য। কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকলেও অন্ততপক্ষে গত পাঁচ বছরের রিটার্ন অন ইক্যুইটি আর তাদের কম্পাউন্ডেড গ্রোথ খুব জরুরি।
[আরও পড়ুন: চড়া ডিভিডেন্ডে ইনভেস্টরদের স্বস্তি, লগ্নির আগে বিশদে জেনে নিন]
এছাড়াও কোম্পানির ইতিহাস, বিজনেস মডেল, ভলিউম গ্রোথ ম্যানেজমেন্ট, গোলস অ্যান্ড ভ্যালুয়েশন–এই সবও খুব জরুরি।
ভাবছেন, কোথায় পাবেন এত তথ্য? মাত্র পাঁচ মিনিটেই সম্ভব। কোম্পানির নাম আর টপিক দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করলেই কয়েক সেকেন্ডে পাবেন সব বৃত্তান্ত।
ভবিষ্যতের ব্যবসা : গত ১০ থেকে ১২ বছরে নিশ্চয়ই খেয়াল করে দেখেছেন যে, এমন এমন স্টকের নাম শুনছেন যা আগে কখনও শোনেনি। যেগুলি অভাবনীয় রিটার্ন দিয়েছে বা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলোই ভবিষ্যতের ব্যবসা। অর্থাৎ আমাদের চাহিদা আর বিশ্বের চাহিদা মেটাতে নানা ধরনের সেক্টর যারা এতদিন কোনও র্যাডারেই আসেনি, তারাই আজ মার্কেট লিডার।
উপরের উল্লেখ করা সেক্টরগুলিই ভবিষ্যতে বিজনেস লিডার হবে। তাই যে সমস্ত কোম্পানি এই সব ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি বা কোনওভাবে জড়িত আছে, তারা আজ অত্যন্ত ছোট হলেও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অপরিসীম।
অর্থাৎ ভবিষ্যতের কথা ভেবে আগে সেক্টর বা ইন্ডাস্ট্রি ঠিক করুন। সেই সেক্টর বা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিদের যথাযথ মূল্যায়ন করে পুঁজি লগ্নি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তিন থেকে চারটে সেক্টরের একাধিক কোম্পানিতে করা সম্ভব হয় পুঁজি লগ্নি।
ইন্ডিয়া স্টোরি : ভোট চলছে। এই সময়ে রাজনৈতিক কারণে অর্থনীতিরও টানাপোড়েন একটু বেশিই থাকে। আবার আমরা এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থানে আছি। আগামীতে চতুর্থ আর তৃতীয় স্থানে উন্নীত হওয়া আমাদের লক্ষ্য। গোটা বিশ্ব আজ মেনে নিয়েছে, আমরাই ‘নেক্সট লিডার’।
দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের নজর রাখা উচিত এই সেক্টরগুলোতে :
অভ্যেস করুন, রোজ খানিকটা সময় ইন্টারনেটে একটু করে আজ যা যা আলোচনা করলাম, তা নিয়ে চর্চা করতে। সাক্ষী থাকুন সাফল্যের এই কাহিনীর আর নিজের পোর্টফোলিওকে করুন সমৃদ্ধ।