shono
Advertisement
Investment

হটকারী হলেই পরিশ্রম বিফলে! বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিন পরিকল্পনা করে

কোথাও লগ্নি করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাটি বোঝা দরকার।
Published By: Biswadip DeyPosted: 02:36 PM Nov 18, 2025Updated: 02:36 PM Nov 18, 2025

বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যত পরিকল্পিত এবং আলোচনা করে নেওয়া যায়, ততই ভালো। হঠাৎ সিদ্ধান্তে যাবতীয় পরিশ্রম বিফলে যেতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে, তলিয়ে ভেবে তবেই এগোন। পরামর্শ দিচ্ছেন রজত বোস

Advertisement

স্টক মার্কেটে লগ্নিকারীদের উদ্দেশে বলছি। বিনিয়োগের আগে একবার দাঁড়ান, একটু জেনে নিন কোথায় আপনাদের টাকা ইনভেস্ট করা যাবে, আর কোথায় তা না করে থামতে হবে। আমি বলতে চাই, কোথাও লগ্নি করার আগে, সংশ্লিষ্ট ব্যবসাটি বোঝা দরকার। কীভাবে তা করবেন? একটি ব্যবসাকে বোঝা মানে হল তার কার্যপ্রণালী, কৌশল, বাজারে অবস্থান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা— এই সমস্ত বিষয়ের সম্পর্কে নির্দিষ্ট ধারণা তৈরি করা।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি বিশেষ পয়েন্ট:

ব্যবসার মডেল
প্রথমেই বুঝতে হবে এর সঙ্গে জড়িত কোম্পানিটি কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে আয় করে। সেটির পণ্য বা পরিষেবা কী, প্রধান গ্রাহক বা ক্রেতা কারা, পণ্য বা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে সংগঠিত হয়। এখানে distribution channel সম্বন্ধে বলছি। এছাড়াও, মূল্য নির্ধারণের কৌশল কী–এই প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি। সব মিলিয়ে এগুলিই নির্ধারণ করে কোম্পানিটি কীভাবে মূল্য (value) তৈরি করে।

শিল্প ও বাজারের গতিবিধি
এর সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। সংক্ষেপে বলি।

এক, যে শিল্পে মানে সেক্টরে কোম্পানিটি কাজ করছে, সেই শিল্পটি বিশ্লেষণ করুন। বাজারের প্রবণতা, প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি, নিয়ন্ত্রকের নীতি এবং শিল্পের বৃদ্ধি ও লাভজনকতাকে প্রভাবিত করা অন্যান্য বিষয়গুলোও বুঝুন। এর মাধ্যমে আপনি কোম্পানির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে (বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের কথা ভাবুন) ধারণা পাবেন।

দুই, আর্থিক কর্মক্ষমতা বুঝুন। কোম্পানির আর্থিক বিবরণী (income statement, balance sheet, cash flow statement) দেখুন, যাতে সেটির আর্থিক অবস্থা বোঝা যায়। কোম্পানির আয় বাড়ানোর বিষয়ে প্রচেষ্টা কেমন, আর তা কতই বা ফলপ্রসূ হয়েছে এযাবৎকালে।

তিন, আর্নিংসের প্রবণতা, প্রফিটের হার, ক্যাশ ফ্লো, ঋণের মাত্রা ইত্যাদি খতিয়ে দেখুন।
একই শিল্পের অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করেও দেখে নিন, কোম্পানির আপেক্ষিক অবস্থান কেমন।

চার, ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব। অর্থাৎ, ম্যানেজমেন্ট। ব্যবস্থাপনার মান ও কাজের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করুন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও কৌশলগত সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়নের দক্ষতাও এখানে উল্লেখ করতে চাই।

আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, এই পরিবর্তনশীল বাজারে ব্যবসাগুলি বোঝার সব থেকে ভালো উপায় কি, তাহলে আমি বলব, তাদের নানা চ্যালেঞ্জের কথা। প্রতিকুলতার মুখে তারা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। কোম্পানিগুলির দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রসঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের কথা উল্লেখ করতে চাই। যে কথা বার বার উঠে আসে তা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বা competitive advantage। অনেকে "moat" বলে চিহ্নিত করেন বিশ্লেষণ করার সময়। কীভাবে কোন ব্যবসা অন্যদের থেকে আলাদা তা জানতে হবে। যেমন উন্নত প্রযুক্তি, ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি, খরচে দক্ষতা ইত্যাদি সবই তফাত গড়ে দিতে পারে।
এখানে আর একটি প্রসঙ্গ চলে আসে। গ্রাহক ধরে রাখার হারের কথা বলছি। এই retention rate খুব জরুরি আজকের দিনে। এর মাধ্যমে বোঝা যায় কোম্পানির বাজারে সুনাম ও গ্রাহক বিশ্বস্ততা কতটা দৃঢ়।

বাজারে ঝুঁকি থাকবেই। কোনো ব্যবসার কার্যক্রম ও আর্থিক পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে এমন ঝুঁকিগুলো শনাক্ত করতে হবে। এসব মূল্যায়নও করা দরকার।

ঝুঁকির ধরনধারণ অনেক রকম হতে পারে। শিল্প-ভিত্তিক ঝুঁকি তো আছেই। এর সঙ্গে দেখে নিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিয়ন্ত্রকের নীতি পরিবর্তন, পরিচালনাগত ঝুঁকি ইত্যাদি।

এই বিষয় নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন:
এক, আপনার পছন্দের কোম্পানি ঝুঁকির বাতাবরনে যথাযথ কৌশলগত পদক্ষেপ
নিতে পারছে?

দুই, এর মধ্যে কি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা, পণ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টা, সংযুক্তি ও অধিগ্রহণ (Merger & Acquisition), এবং অন্যান্য উদ্যোগ?

তিন, এই পদক্ষেপগুলো কি কোম্পানির সার্বিক ব্যবসার মডেল ও বাজার সুযোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

চার, শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্ন্যান্স রয়েছে কি? যে ব্যবস্থাপনা চলছে, তাতে কি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষা পাবে?

এছাড়াও বাহ্যিক পরিবেশ দেখুন। নানা মাইক্রোইকোনমিক ইসু‌্য জরুরি ভূমিকা নিতে পারে। ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা বা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্বন্ধে সচেতন থাকুন।

শেয়ারহোল্ডার হিসাবে আপনার নানাবিধ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। তার ভিত্তিতেই বিনিয়োগ, অংশীদারিত্ব বা কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যত পরিকল্পিত এবং আলোচনা করে নেওয়া যায়, ততই ভালো।
  • হঠাৎ সিদ্ধান্তে যাবতীয় পরিশ্রম বিফলে যেতে পারে।
  • তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে, তলিয়ে ভেবে তবেই এগোন।
Advertisement