লাভ সুনিশ্চিত করতে ঝুঁকি নেওয়া যে অনিবার্য, সে সম্পর্কে আগের সংখ্যায় বিশদে আলোচনা হয়েছে। এবার তাই ব্যাখ্যা, ভালো শেয়ার বেছে নেওয়ার পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে। দুটি রেশিও এখানে বিশ্লেষণ করা হল, যার মাধ্যমে লগ্নিকারীর চাহিদা বুঝে উপযুক্ত শেয়ার বা ইক্যুইটি এমএফ নির্বাচনের কাজ সহজসাধ্য হবে। লিখলেন এমিনেন্ট কলেজ অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ড. সৌরভ মজুমদার।
আজকের লেখা ঝুঁকি বা ফিনান্সিয়াল রিস্কের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে। শেয়ার বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের সিস্টেম্যাটিক রিস্কের পরিমাপককে বলা হয় Beta (β)। β একটি গাণিতিক সংখ্যা। ধরা যাক কোনও শেয়ারের β ১.৩। এটি নির্দেশ করবে এই শেয়ারের অতীতের আয় বা হিস্টোরিকাল রিটার্ন মার্কেট রিটার্নের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত। মার্কেট রিটার্ন বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে যে কোনও বেঞ্চমার্ক রিটার্ন, যেমন Nifty 50 বা BSE Sensex-এর যে কোনও একটি।
যদি কোনও এক সময়ে বেঞ্চমার্ক +১০% আয় দেয়, তবে এই শেয়ারটি +১৩% আয় দেবে, আশা করা যায়। একইভাবে যদি কোনও সময়ে বেঞ্চমার্ক যদি -১০% রিটার্ন দেয় তবে শেয়ারটি -১৩% রিটার্ন দেবে। অর্থাৎ β ১-এর বেশি হলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১-এর কম হলে কম ঝুঁকিপূর্ণ। পক্ষান্তরে, কোনও শেয়ারের β ০.৭ হলে, বেঞ্চমার্ক যদি +১০% রিটার্ন দেয় তবে শেয়ারটির +৭% রিটার্ন আশা করা যেতে পারে। যদি বেঞ্চমার্ক -১০% রিটার্ন দেয়, শেয়ারটি -৭% রিটার্ন দেবে, অর্থাৎ কম ঝুঁকিপূর্ণ। এই β শুধু একটি শেয়ারের ক্ষেত্রেই পরিমাপ করা হয় না, ইক্যুইটি এমএফ অর্থাৎ যেখানে অনেকগুলো শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয় তার ক্ষেত্রেও β পরিমাপ করা হয়। এই ইক্যুইটি এমএফ বা ইক্যুইটি পোর্টফোলিও β পরিমাপ করা হয় পোর্টফোলিওর প্রত্যেকটি শেয়ার এর β-র ওয়েটেড অ্যাভারেজ বা গড় পরিমাপ নিয়ে।
[আরও পড়ুন: বিমায় কুলিং অফ বা ফ্রি লুক কাকে বলে? বিস্তারিত জানুন পর্যবেক্ষকের থেকে]
এবার প্রশ্ন, কীভাবে ভালো শেয়ার বা ভালো ইক্যুইটি এমএফ বাছব? খুব সহজে আমরা দুটি গাণিতিক সূত্রে ভালো খারাপ শেয়ার বা ইক্যুইটি এমএফ বেছে নেওয়ার নিয়ম শেখার চেষ্টা করি। তার আগে আমরা রিস্ক ফ্রি রেটের সংজ্ঞা জেনে নিই। সকল বিনিয়োগেই রিস্ক আছে। কিন্তু কিছু বিনিয়োগ ঝুঁকিবিহীন। যেমন সরকারী ঋণপত্র। এই ঋণপত্রে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীর আসল সুরক্ষিত থাকে এবং সুদ প্রাপ্তি থাকে ঝুঁকিবিহীন। যেহেতু এই বিনিয়োগ সরকার দ্বারা গ্যারান্টিপ্রাপ্ত। ঝুঁকিবিহীন আয়কে আমরা Rf দ্বারা নির্দেশ করে থাকি।
Sharpe’s Ratio
Sharpe’s Ratio = R-Rf/Sigma (σ)
Sharpe’s Ratio নির্দেশ করে, আপনি যে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করলেন, তার লাভের পরিমাণ।
অর্থাৎ প্রতি একক সামগ্রিক ঝুঁকি (Total Risk) এর পরিবর্তে বিনিয়োগকারীর অতিরিক্ত আয় এবং এই অতিরিক্ত আয়ের পরিমাপ তার বিনিয়োগের আয় এবং ঝুঁকিহীন আয়ের ব্যবধান।
[এখানে R দ্বারা বিনিয়োগের আয় এবং ঝুঁকিবিহীন আয় Rf দ্বারা ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের আয় নির্দেশ করা হয়েছে।]
Treynor’s Ratio
Treynor’s Ratio = R-Rf/Beta (β )
Treynor’s Ratio দ্বারা প্রতি একক সিস্টেম্যাটিক রিস্কের জন্য অতিরিক্ত আয়ের পরিমাপ নির্দেশ করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, কখন Sharpe’s Ratio এবং কোনও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে Treynor’s Ratio পরিমাপ গ্রহণযোগ্য হবে?
[আরও পড়ুন: কেবলমাত্র লার্জ ক্যাপে লগ্নি করতে চান? জেনে নিন সঠিক পন্থা]
যদি আমরা একটি শেয়ারে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করি তার শার্পস রেশিও পরিমাপ করা উচিত। কারণ একটি শেয়ারের ক্ষেত্রে সিস্টেম্যাটিক রিস্ক এবং আন-সিস্টেম্যাটিক রিস্ক দুই-ই বিদ্যমান, অতএব টোটাল রিস্ক তথা সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচ্য।
অপরদিকে ইক্যুইটি এমএফ-এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, যেটি কি না একটি ডাইভারসিফায়েড ইক্যুইটি পোর্টফোলিও, এখানে আমরা ডাইভারসিফিকেশন দ্বারা আন-সিস্টেম্যাটিক রিস্ক যথেষ্ট কমিয়ে ফেলেছি। এক্ষেত্রে Treynor’s Ratio ব্যবহার যুক্তিযুক্ত হবে। অতএব বিনিয়োগকারীরা শেয়ারে বিনিয়োগ করার সময়ে Sharpe’s Ratio বিচার করে স্টক বাছবেন। এবং ইক্যুইটি এমএফ-এ বিনিয়োগের সময়ে ফান্ড বাছবেন Treynor’s Ratio অনুযায়ী।