একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কনসাম্পশন থিমেরই রমরমা। ভারতের নাগরিকও এই খাতে খরচ বাড়িয়ে চলেছেন। শুধু তাই নয়। এই নিয়ে আগ্রহ এতটাই তুঙ্গে যে বর্তমানে ১৫টি মিউচুয়াল ফান্ড হাউস এই থিমের উপরই নিয়ে এসেছে ফান্ড। বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিনিয়োগ পরামর্শদাতা সুরজিৎ দাস
এখন বলিউডের কোনও সিনেমার হিরো বা হিরোইনকে কিন্তু বড় একটা সাধারণ বাস বা ট্রেনে চলাফেরা করতে দেখা যায় না! বেশিরভাগ সময়েই তারা ডিজাইনার ড্রেস পরে থাকেন। প্রায় মোটামুটি প্রত্যেক মফঃস্বল বা শহরাঞ্চলে মাসে বেশ কিছু নতুন ফুড জয়েন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইত্যাদি চালু হচ্ছে। এ কথা বলাই যেতে পারে বর্তমানে মানুষ ‘খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান’-এর ধারণা অতিক্রম করে লাইফস্টাইলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সেবি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) ভারতবর্ষে এমএফ-এর সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা মোট ১৩ ধরনের ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড শ্রেণিবদ্ধ করেছে। তার মধ্যে একটি হল সেক্টোরাল ও থিম্যাটিক ফান্ড। এখানে ফান্ড ম্যানেজার কোনও একটি বিশেষ সেক্টর যেমন ফার্মা, ফিনান্সিয়াল, টেকনোলজি ইত্যাদিতে ইনভেস্টরের টাকা ইনভেস্ট করবেন বা কোনও একটি বিশেষ বিষয়কে (থিম) ভিত্তি করে যেমন কনসাম্পশন, এনার্জি অপরচুনিটি, সার্ভিস ইত্যাদিতে টাকা ইনভেস্ট করে থাকেন। সেবির গাইডলাইন অনুযায়ী এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে মোট সংগৃহীত ফান্ডের সর্বনিম্ন ৮০ শতাংশ সেই সেক্টর বা থিমের সম্পর্কিত কোম্পানির শেয়ারে ইনভেস্ট করতে হবে।
আজ আমরা একটি বিশেষ থিম্যাটিক ফান্ডের উপর আলোচনা করব। সেটি হল কনসাম্পশন থিম্যাটিক ফান্ড। এই মুহূর্তে ভারতবর্ষ পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ, ভারতবাসীর গড় বয়স মাত্র ২৮ বছর। ভারতবর্ষ এই মুহূর্তে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষ দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে (পিডব্লুসি গ্লোবালের রিপোর্ট)। একে তো বিপুল জনসংখ্যা। তায় বেশিরভাগই তরুণ। তাই কমসাম্পশন থিম কিন্তু বলা যায় খুবই বিশেষ ব্যাপার!
২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষ পৃথিবীর মধ্যে অষ্টম দেশ যারা রপ্তানি করে এবং দশম দেশ যারা আমদানি করে। ভারতবর্ষ ২০২৬ সালের মধ্যে কনসাম্পশনের নিরিখে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হয়ে উঠতে চলেছে (ইউবিএস গ্লোবালের রিপার্ট)। গত ১০ বছরে ভারতবর্ষের হাউসহোল্ড কনসাম্পশন দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। প্রতি বছর ৭.২ শতাংশ কম্পাউন্ডিং হারে হাউসহোল্ড কনসাম্পশন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। প্রিমিয়াম সেগমেন্ট গাড়ির চাহিদা গতবছর থেকে ৩৪ শতাংশ বেড়েছে যেখানে এন্ট্রি লেভেল গাড়ির চাহিদা ১৬ শতাংশ কমেছে। প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের (৪০,০০০ টাকা মূল্যের সেগমেন্ট) চাহিদা বেড়েছে ৫৫ শতাংশ হারে, সেমি প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের (২৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা মূল্যের সেগমেন্ট) চাহিদা বেড়েছে ২৭ শতাংশ হারে আর বাজেট স্মার্টফোনের (দাম ২৫,০০০ টাকার নিচে) চাহিদা কমেছে ১২ শতাংশ।
বিভিন্ন ধরনের কনজিউমার লোনের গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ হারে গত বছরের থেকে, ক্রেডিট কার্ড গত বছরের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি মানুষ ব্যবহার করছেন। ই কমার্স ব্যবসার পরিমাণ ২০১৯ সাল থেকে ৫৬.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে। গত ১০ বছরে এয়ার ট্রাভেলারের সংখ্যা ১৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মূহূর্তে ভারতবর্ষ গাড়ি ব্যবহারের নিরিখে পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এই তথ্যগুলো এটাই ইঙ্গিত করে, ভারতবাসী কনসাম্পশন খাতে ক্রমাগত খরচ বাড়িয়েই চলেছে। আশা করা যায়, এই থিম্যাটিক ফান্ডে ইনভেস্টরের টাকা ভালোই বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই থিমটিতে ফান্ড ম্যানেজার সাধারণত নিফটি কনসাম্পশন টোটাল রিটার্ন বেঞ্চমার্ক অনুসরণ করেন। বর্তমানে ১৫টি মিউচুয়াল ফান্ড হাউস এই থিমের উপর ফান্ড নিয়ে এসেছে। গত ৫ বছর, ৩ বছর আর ১ বছরে গড় রিটার্ন যথাক্রমে মোটামুটি ৩০ শতাংশ, ৩১ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এখানে ঝুঁকির পরিমাণ সাধারণ ডাইভারসিফায়েড মিউচুয়াল ফান্ডের থেকে বেশি। সুতরাং ইনভেস্ট করার আগে অবশ্যই আর্থিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে, তবেই ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত।