ক্ষেত্র নির্বিশেষে ভুগতে হয় দেরির মূল্য। ইংরেজি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘কস্ট অফ ডিলে’। বাজার অর্থনীতিতেও এই ‘কস্ট অফ ডিলে’ একইভাবে প্রযোজ্য। দেরি করার খেসারত বড়সড়ভাবেই মেটাতে হয় লগ্নিকারীকে। তা কীভাবে, বিশেষ এই লেখায় তুলে ধরল টিম সঞ্চয়
ইলেকশন এবং তার পরবর্তী অধ্যায় খুব অনিশ্চিত। এমনই মত প্রকাশ করেন অনেকে। তাঁদের সন্দেহ হয়তো অমূলক নয়, তবে তা নিয়ে বিশদে পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখা পেশ করা হচ্ছে না। সন্দেহের বশে লগ্নি করা থেকে বিরত থাকতে চান যাঁরা, যাঁরা পরে আসবেন বাজারে বলে মনস্থ করেছেন, মূলত তাঁদের জন্যই আজকের এই বিষয়টি বেছে নিয়েছি। ‘কস্ট অফ ডিলে’ অর্থাৎ দেরি করার জন্য যে খেসারত দিতে হবে সাধারণ লগ্নিকারীকে, তা নিয়ে সতর্কতা বাড়ানোই আমাদের উদ্দেশ্য। কয়েকটি বিষয় খেয়াল করুন।
১. এক, সকলেই জানেন মার্কেটে দেরি করে ঢুকলে তার মূল্য চোকাতে হয়। যত বেশি সময় দিতে পারবেন, ততই ভালো। বেশিরভাগ অ্যাসেট ক্লাসের জন্যই এই কথাটি প্রযোজ্য।
২. দুই, সময় বেশি দিলে কম্পাউন্ডিংয়ের সুবিধা বেশি পাবেন আপনি। তাই ‘ডিলে’ বা কাল-বিলম্ব যাতে না হয়, সেই ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
৩. তিন, যত দ্রুত শুরু করতে পারবেন এবং যত ঘন ঘন লগ্নি করবেন, আপনার ‘কর্পাস’ ততই বড় মাপের হওয়ার সম্ভাবনা। সেই জন্যই ‘আর্লি স্টার্ট’-এর উপর জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
যাঁরা শীঘ্র শুরু করে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট করতে আগ্রহী, তাঁরা এই প্রসঙ্গটি ভালো বুঝবেন।
৪. যথাসম্ভব আগে এলে আপনার কর্পাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন বেশি পাবেন। বহুবার এমন দেখা গিয়েছে বিগত দিনে।
[আরও পড়ুন: দুরন্ত ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর, লগ্নির প্রস্তুতি শুরু করুন এখনই]
এবার আসুন, একটি ‘ডিলে কস্ট ক্যালকুলেটর’ আপনার জন্য তৈরি করে দিই। আমাদের লক্ষ্য, সিপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে যদি দেরি হয়, তার অভিঘাত কী, জেনে নেওয়া। তার মানে আমরা প্রধানত ‘ইমপ্যাক্ট কস্ট’ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে এক বছর দেরি হয়েছে সেখানে দেরির কারণে (ডিলেইড ইনভেস্টমেন্ট) লগ্নির পরিমাণ ৯,৩৪,৩০২ টাকা। সম্ভাব্য লস ১,৭৫,৩৪৯ টাকা। কারণ দেরি না করলে আপনার লগ্নি বেড়ে হত ১১,০৯,৬৫০ টাকা। এর মানে, ১২ মাস দেরি হলে আপনাকে প্রতি মাসে ৫,৬৯৬ টাকা বেশি দিতে হবে সিপের মাধ্যমে আপনার আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছতে।
দ্বিতীয় পরিস্থিতি দেখুন। এখানে তিন বছর দেরি হওয়ার কারণে (একই হারে রিটার্ন পেতে) আপনাকে ৮,৪০৮ টাকা বেশি আনতে হবে প্রতি মাসে।
এখানে যা হবে :
১. ইনভেস্টমেন্ট উইথআউট ডিলে – ১১,০৯,৬৫০ টাকা
২. ডিলেইড ইনভেস্টমেন্ট –৬,৩৭,৯৫৩ টাকা
৩. পোটেনশিয়াল লস ডিউ টু ডিলে – ৪,৭১,৬৯৭ টাকা
খেয়াল করে দেখুন, দুই সম্ভাব্য পরিস্থিতিতেই ১২ শতাংশ রিটার্ন ধরে নেওয়া হয়েছে। এবং সিপের অঙ্কও একই, ৫,০০০ টাকা। দুই ক্ষেত্রেই দশ বছরের কথা ভাবা হয়েছে। এই ধরনের হিসাব কষে নেওয়ার থেকে অবশ্য আরও অন্যভাবে নিজের পরিস্থিতির আলোচনা করতে পারেন আপনি। নিজস্ব আর্থিক লক্ষ্যগুলোর কথা ভাবুন। নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য স্থির করতে হবে, জেনে রাখুন। এখানে ‘গোল ক্যালেকুলেটর’ ব্যবহার করাই ভালো। সঙ্গের চার্ট দেখুন।
৪. আপনার লক্ষ্য : ৫০ লক্ষ টাকা
৫. কত দিন সময় আছে : দশ বছর
৬. কত রিটার্ন হতে পারে : ১৪ শতাংশ (অ্যানুয়াল রেট)
৭. হিসাবমতো আপনাকে প্রতি মাসে বিনিয়োগ করতে হবে ২২,৫৩৫ টাকা। নতুন বড় অঙ্কের এককালীন লগ্নি করে রাখতে হবে একেবারে প্রথমেই।
নিজের লক্ষ্য বুঝে নিয়ে লগ্নির পরিমাণ ঠিক করুন এবং প্রয়োজনমতো বাড়ানোর চেষ্টা করুন। যদি সম্ভব হয় ‘টপ আপ’ করুন, তাতে উপকৃত হবেন আপনিও।