Advertisement
কাঁকল পড়ে কঙ্কালীতলায়, নলাটেশ্বরীতে কণ্ঠনালী! জানুন বীরভূমের ৫ সতীপীঠের মাহাত্ম্য
পাঁচটি সতীপীঠ ছাড়াও বীরভূমে রয়েছে সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ।
৫১টি সতীপীঠের পাঁচটি পীঠ রয়েছে বাংলার বীরভূমে। পুরাণ অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন দেবী সতী। তা জানার পর দেবীর দেহ নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন শিব। তাতে জগৎ সংসার ধ্বংসের উপক্রম হয়। মহাদেবকে থামাতে ভগবান বিষ্ণু সুদর্শনচক্রের মাধ্যমে দেবী সতীর দেহ খন্ডিত করেন। যেখানে যেখানে সতীর দেহাংশ পড়ে তৈরি হয় এক একটি পীঠ। তেমনই রয়েছে বীরভূমেও। সারাবছর পুজো তো হয়ই, কালীপুজোর সময়ে যেন আরও জাগ্রত হয়ে ওঠে এই পীঠগুলি। বীরভূমে যে পাঁচটি পীঠ রয়েছে সেগুলি হল-কঙ্কালীতলা, নলাটেশ্বরী, নন্দিকেশ্বরী, বক্রেশ্বর, ফুল্লরা। এছাড়াও এই বীরভূমেই রয়েছে আরও একটি সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ।
সতীপীঠের অন্যতম বীরভূমের কঙ্কালীতলা। ধর্মীয় বিশ্বাস, সুদর্শনচক্রের আঘাতে দেবী সতীর কাঁকল অর্থাৎ কোমরের অংশ পড়েছিল বোলপুর শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে বোলপুর-লাভপুর রোড এলাকায়। সে থেকেই নাম কঙ্কালীতলা। এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে পাড় বাঁধানো ছোট পুকুর। মনে করা হয়, এটাই আসল সতীকুণ্ড।
কথিত আছে, এখানে দেবী সতীর অস্থি এত জোড়ে এসে পড়ে যে কুণ্ডের সৃষ্টি হয়। কুণ্ড ৩টি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটের সঙ্গে। তাতে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে সারাবছর জল আসে। তাই কখনও কঙ্কালীতলার কুণ্ড শুকনো থাকে না।
৫১ পীঠের একটি পীঠ নলাটেশ্বরী। বীরভূমের নলহাটি স্টেশনের নিকটবর্তী স্থানে দেবী পার্বতীর কণ্ঠনালী পড়েছিল বলে বিশ্বাস। এই পীঠের নাম নলাটেশ্বরী। দেবী এখানে ত্রিনয়নী কালিকা রূপে পূজিত হন। এই সতীপীঠের নাম অনুসারে জায়গাটির নাম হয় নলহাটি। এই মন্দিরে বছরের ৩৬৫ দিনই দেবীকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়।
সাঁইথিয়ার নন্দিকেশ্বরী মন্দির। ধর্মীয় মত অনুসারে, দেবী সতীর কণ্ঠহার এখানে পড়ে। দেবী নন্দিকেশ্বরীতে পূজিত হন নন্দিনী রূপে। মন্দিরে অবস্থান করেন ভৈরব। তিনি এখানে নন্দীকেশ্বর রূপে পূজিত।
এই নন্দিকেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে সাধক বামাখ্যাপার সিদ্ধিলাভের কাহিনি। বিশ্বাস করা হয়, বামাখ্যাপা যখন তারাপীঠে গভীর সাধনায় মগ্ন, তখন মা তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন নন্দিকেশ্বরীতে তপস্যা করতে। একমাত্র এই রূপে মাকে পুজো করলেই সিদ্ধিলাভ করবেন।
৫১ সতীপীঠের আরও একটি পীঠ বক্রেশ্বর। ঋষি অষ্টবক্র মুনির নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয়। মনে করা হয়, সতীর দুই ভ্রু-র মধ্যস্থল এখানে পড়েছিল। দেবী এখানে কালী নন, মহিষমর্দিনী দুর্গা রূপে পূজিত হন।
ফুল্লরাপীঠ লাভপুরে। এখানে সতীর অধঃওষ্ঠ অর্থাৎ নিচের ঠোঁট পড়েছিল বলে বিশ্বাস। এখানে দেবী ফুল্লরা রূপে ও ভৈরব বিশ্বেশ্বর রূপে পূজিত হন। মন্দিরে নেই কোনও প্রতিমা। ভিতরে রয়েছে লাল রঙের বড় একটি পাথরের খণ্ড। এই রূপেই নিত্যপূজিত হন দেবী।
এই পাঁচটি সতীপীঠ ছাড়াও বীরভূমে রয়েছে সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ। যা মা তারার মন্দির। এই মন্দিরের পাশের শ্মশান তন্ত্রসাধনার জন্য পরিচিত। বামাখ্যাপা দেবীর মূর্তিকে রক্ত মাংসের মায়ের মতো দেখতেন। তারাপীঠ মন্দির চত্বরেই তাঁর আশ্রম ও সমাধি রয়েছে।
যাদবপুরের শ্যামা পল্লি শ্যামা সংঘও প্রস্তুত দর্শনার্থীদের জন্য। এবার তাদের থিম '১৯৩৪ স্বদেশে তৈরি স্বদেশের জন্য। থিংকার্স গ্রুপের ভাবনায় সেজেছে এবারের পুজো মণ্ডপ।
স্বদেশী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল কলকাতার তৈরি সুলেখার কালির। দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তার। ব্রিটিশ আমলে এই কালির ব্যবহারেই স্বদেশি পণ্যের ডাক দিয়েছিলেন বিপ্লবীরা। সেই টুকরো ইতিহাসই এবার এই মণ্ডপের আকর্ষণ। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমাও এখানে প্রতিবাদী। তাঁর হাতে ব্রিটিশ আমলের তেরঙ্গা। পুজো পরিক্রমায় এই মণ্ডপগুলি মিস করবেন না।
Published By: Subhankar PatraPosted: 06:31 PM Oct 18, 2025Updated: 05:26 PM Oct 19, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
