Advertisement
ফিরে দেখা ২০২৫: পহেলগাঁও বিভীষিকা, গর্বের সিঁদুর, দেশজুড়ে সাড়া জাগানো ঘটনার ঘনঘটা
কোনও ঘটনা চোখে জল এনেছে, কোনওটা গর্বিত করেছে দেশকে।
পহেলগাঁও হামলা: ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে হত্যা, হাহাকার, কান্নার রোল। ২০২৫ সালের সালতামামি লিখতে বসলে শুরুতেই মনে পড়ে যায় উপত্যকার বুকে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অতীতের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি হামলার কথা। পহেলগাঁওয়ে পাক জঙ্গিদের হামলায় ২৬ নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু ভারতের ইতিহাসে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে ফেলেছে। গোটা দেশকে কাঁদিয়েছে পহেলগাঁও।
অপারেশন সিঁদুর: পহেলগাঁওয়ের বদলা। শুধু মুখের কথা নয়। একেবারে পাকিস্তানে ঢুকে পাক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানের অন্তত ১১টি একধিক বায়ু সেনাঘাঁটি। ভারতীয় সেনার অভিযানে নিহত হয় ১০০ জনের বেশি জঙ্গি ও ৩৫-৪০ জন পাক সেনা। শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদের আর্জিতে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় নয়াদিল্লি। ভারতীয় সেনার এই সাফল্য বন্দিত হয় বিশ্বমঞ্চে। যদিও পাকিস্তানের দাবি, ওই ওপারেশনে তারা সাফল্য পেয়েছে। বেশ কিছু ভারতীয় যুদ্ধবিমান তারা ধ্বংস করেছে।
মহাকুম্ভ মেলা ও পদপিষ্ট দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট: ১৪৪ বছর পরে প্রয়াগরাজে আয়োজিত হল মহাকুম্ভ। যাকে ‘পুণ্যযজ্ঞ’ও বলা যায়। তার মধ্যে মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়। উত্তরপ্রদেশ সরকারের দাবি, এবারের মহাকুম্ভে এক কোটিরও বেশি মানুষ পুণ্যস্নান করেছেন। যদিও এবারের কুম্ভমেলা অব্যবস্থার জন্যও শিরোনামে এসেছে বারবার। মেলা চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অন্তত জনা পঞ্চাশের। এছাড়াও সব মিলিয়ে কুম্ভ মেলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। কুম্ভের পথেও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বহু মানুষ। এর মধ্যে দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। যদিও সব মিলিয়ে কুম্ভের জন্য কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেটার কোনও সরকারি তথ্য দেয়নি কেন্দ্র সরকার।
বেঙ্গালুরুতে আইপিএল বিজয়োৎসবে পদপিষ্ট ও বিজয়ের জনসভায় পদপিষ্ট: ১৮ বছরের অপেক্ষার পর এ বছর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। কিন্তু সেই সাফল্যের বিজয়োৎসব পরিণত হয় বিষাদের মঞ্চে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আহত হন ৪৭ জন। যার অবধারিত ফল হিসাবে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বছর শেষে তামিলনাড়ুতে আরও একটি ভয়ংকর পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। এবার অভিনেতা বিজয়ের রাজনৈতিক সভায়। তাতে ৪১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৫০ জন।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: চলতি বছরের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আহমেদাবাদে বিমান ভেঙে পড়া। ১১ জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমান আকাশে ওড়ার কয়েক সেকেন্ড পর ভেঙে পড়ে একটি মেডিক্যাল কলেজের উপর। দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় ২৬০ জনের। ঘটনার তদন্তে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করা হয়, আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে বিমানটি যখন উপরে ওঠার জন্য গতি পাচ্ছে, তখনই দু’টি ইঞ্জিনের জ্বালানি ‘কাটঅফ’ মুডে চলে যায়। ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিমান বিপর্যয় আরও হয়েছে। কেন্দ্রের নয়া নীতি মানতে গিয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের বৃহত্তম ডোমেস্টিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ইন্ডিগো। পাঁচ দিনে বাতিল করে দিতে হয় কয়েক হাজার ফ্লাইট। ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার যাত্রী। যা রীতিমতো বিভীষিকার শামিল। শাস্তিস্বরূপ কেন্দ্র ইন্ডিগোকে বড় অঙ্কের জরিমানা করে। তাঁদের পরিষেবা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়।
দিল্লি বিস্ফোরণ: আরও এক নভেম্বর। আরও এক জঙ্গি হামলা। এবার খাস রাজধানী দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে। একটি গাড়িতে করে বিস্ফোরক এনে ফিদায়ে হামলার ধাঁচে রাজধানীর বুকে হামলা চালায় জঙ্গিরা। মৃত্যু হয় ৯ জনের। রাজধানীর বুকে এত বড় বিস্ফোরণ একদিকে যেমন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তেমনই আঘাত দিয়েছে দেশের ভাবমূর্তিতে।
ট্রাম্প ট্যারিফ: ২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক কেটেছে নরমে-গরমে। বছরের শুরুর দিকে মোদি-ট্রাম্পের সখ্য শিরোনাম কুড়োলেও অপারেশন সিঁদুরের পর পরিস্থিতি পুরো বদলে যায়। যুদ্ধবিরতিতে তাঁর কৃতিত্ব মানতে না চাওয়ায় এবং রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ার অপরাধে ভারতের উপর দু'দফায় শুল্ক চাপায় আমেরিকা। প্রথম দফায় ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশের শুল্কবোঝা চাপান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে ভারতের উপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। মার্কিন শুল্কবাণের ভালো প্রভাব পড়ে দেশীয় বাজারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের পোশাক উৎপাদন ক্ষেত্রগুলি।
ওয়াকফ আইন: এ বছর পুরনো ওয়াকফ আইন বদলে নতুন করে ওয়াকফ আইন পাশ করায় কেন্দ্র। যাতে স্পষ্ট বলা হয়, সব ওয়াকফ আইনের হিসাব দিতে হবে ওয়াকফ বোর্ডকে। যে কোনও সম্পত্তিতে ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্রাধিপত্য ছিল, সেটা আর থাকবে না। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের কিনা ঠিক করার অধিকার থাকবে আদালতের। এই আইনকে ইসলাম বিরোধী বলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে মুসলিম সম্প্রদায়। একাধিক জায়গায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতিরও তৈরি হয়।
পথকুকুর নিয়ে সুপ্রিম রায়: রাজপথ থেকে সরাতে হবে সব পথকুকুর। আগস্টে চাঞ্চল্যকর রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। যার জেরে রাজপথে নেমে আন্দোলন শুরু করেন পশুপ্রেমীরা। পরে সেই রায় সামান্য বদল করে সুপ্রিম কোর্ট। এবার শীর্ষ আদালত জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, খেলার মাঠের মতো জায়গাগুলি একেবারে পথকুকুরমুক্ত করতে হবে। ডগ শেল্টারে পাঠিয়ে দিতে হবে পথকুকুরগুলিকে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যে এলাকা থেকে পথকুকুরদের শেল্টারে পাঠানো হবে, ওই এলাকায় আর ফেরানো যাবে না। কেবল পথকুকুর নয়, জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকা থেকে যাবতীয় গবাদি পশুকেও সরানোরও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এসআইআর: ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন। বৈধ ভোটার শনাক্তকরণ এবং অবৈধ ভোটার দূরীকরণের উদ্দেশ্যে দু'দশকের বেশি সময় পর এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে এমনকী পথে নেমে আন্দোলনও হয়েছে। যদিও শেষমেশ বিহারের SIR প্রক্রিয়া শেষ করেছে কমিশন। বাংলা-সহ আরও ১২ রাজ্যে প্রক্রিয়া চলছে।
Published By: Subhajit MandalPosted: 04:44 PM Dec 22, 2025Updated: 04:44 PM Dec 22, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
