Advertisement
বিশ্বজয়ী ঘরের মেয়েকে অনন্য সম্মান শিলিগুড়ির, উন্মাদনার মাঝেই পরবর্তী লক্ষ্য ঘোষণা রিচার
রিচার নামে ইন্ডোর স্টেডিয়াম একটি স্ট্যান্ড করার কথা ঘোষণা করেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব।
বিশ্বজয় করে ঘরে ফিরলেন বঙ্গতনয়া। তাঁকে নিয়ে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে শিলিগুড়িতে। যেন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আট থেকে আশি সকলেই নেমে পড়ে রাস্তায়। কারও হাতে ভারতের পতাকা, কারও হাতে ব্যাট। কেউ ফুল নিয়ে, কেউ দাঁড়িয়ে মালা নিয়ে। তাঁরা সোনার মেয়েকে একবার দেখতে চান। চান উপহারের ডালায় সাজিয়ে দিতে।
পুরনিগম সোনার মেয়েকে সোনা দিয়েই বরণ করে নেয়। দেওয়া হয় সোনার ব্রেসলেট, দামি ব্র্যান্ডের স্মার্ট ঘড়ি, ট্রলি এবং মানপত্র। শুধু তাই নয়, রিচার নামে ইন্ডোর স্টেডিয়াম একটি স্ট্যান্ড করার কথা ঘোষণা করেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। বাঘাযতীন পার্কেও তিলধারণের জায়গা ছিল না।
শুরুতে অবশ্য ছন্দপতন ঘটে দিল্লি থেকে বিমান দেরিতে ওড়ায়। সকাল সাড়ে ৯টায় আসার কথা থাকলেও তাঁর বিমান আসে বেলা ১২টা নাগাদ। ভোর থেকেই শিলিগুড়িতে ছিল উৎসবের মেজাজ। অনুরাগীরা ব্র্যান্ড পার্টি নিয়ে হাজির হয়ে যান। রাস্তার দু'ধারে ছিল মানুষের ঢল। তাঁরা কিন্তু ধৈর্য হারাননি। নীল ব্লেজার গায়ে চোখে সানগ্লাস পরে রিচা যখন বিমানবন্দর থেকে বের হন, 'রিচা রিচা' জয়ধ্বনি দিতে থাকেন তাঁরা।
হুড খোলা জিপে সামনের সিটে বসেন রিচা। পিছনের সিটে ছিলেন মেয়র গৌতম দেব, বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ-সহ ডেপুটি মেয়র ও সভাধিপতি। তাঁদের নিয়েই আগুয়ান গাড়ি। হাজারো অনুরাগীর ভিড়ে বাগডোগরা থেকে সুভাষপল্লি আসতে কালঘাম ছোটে চালকের। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আঁটসাঁট। মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। এর মাঝেও দেদার অটোগ্রাফ বিলিয়ে গেলেন রিচা। বাড়ি পৌঁছানোর পর বরণডালা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মা স্বপ্না ঘোষ। তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বরণ করে পায়েস, মিষ্টি খাইয়ে দিলেন। তারপর বাড়ি ঢুকে তার প্রিয় ফ্রায়েড রাইস, চিলি পনির, মিক্সড তরকারি দিয়ে খাওয়াদাওয়া সারেন রিচা। রিচার বাড়িও দারুণভাবে সাজানো হয়েছে।
এরপর লাল কার্পেটে পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বাঘাযতীন পার্কের মঞ্চে আসেন রিচা। তাকে খুদে খেলোয়াড়েরা ব্যাট দিয়ে গার্ড অফ অনার দেয়। সেখানেই তাকে বরণ করে নেয় শিলিগুড়ি পুরনিগম। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ দুর্গার একটি সুদৃশ্য মূর্তি উপহার দেয় তাঁকে। আতশবাজি ফাঁটিয়ে রিচাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাঁর বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, "এভাবে আমার মেয়েকে বরণ করে নেওয়ায় আমি দারুণ খুশি। কিছু বলার মত অবস্থায় নেই।"
এমন অভ্যর্থনায় আপ্লুত রিচা বলেন, "ভাবতেই পারছি না আমার জন্য এত মানুষ এসেছে। আপনারা যেভাবে আমাকে ভালোবাসা দিলেন, তাতে আমি অভিভূত। সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার পরিবার আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। মা-বাবার অবদান অনস্বীকার্য। শিলিগুড়িবাসীর ভালোবাসায় আপ্লুত। স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে ট্রফি জেতা। ভারতের ঝুলন গোস্বামী ভারতীয় দলের হিরো। সব সময় সাপোর্ট করেছে আমাকে। আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না, এই বিশ্বাসটা ছিল। কোচেরা পাশে থেকেছেন। এরজন্য অনেক হার্ডওয়ার্ক করতে হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাই লক্ষ্য। যে কোনও খেলায় আরও বেশি করে আসুক মেয়েরা। ছোটবেলা থেকে আমার আইকন ধোনি। দলগত পারফরম্যান্সেই জয়। আগে অনেকবার কাছে গিয়েও বিশ্বকাপ জিততে পারিনি। এবার পেরেছি। আশা করি, এবার অনেক কিছু পরিবর্তন হবে।
শুক্রবার প্রায় ১২০টি সংগঠন তাঁকে অভ্যর্থনা দেয়। তবে এর মাঝেও রিচা বাঘাযতীন পার্কে উপস্থিত খুদে ক্রিকেটারদের ডেকে তাদের অটোগ্রাফ দেন। রাতে তিনি ছোটবেলার বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবে যান। সেখানেও তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রিচা আরও বলেন, "মহিলা ক্রিকেটে দারুণ সহযোগিতা করছে বিসিসিআই। তারা ডব্লিউপিএল চালু করায় অনেক নতুন মহিলা ক্রিকেটার উঠে এসেছে। তাই যারা এখন ক্রিকেট খেলছ, তাদের বলব, আরও বেশি করে প্র্যাক্টিস করে যাও। ধৈর্য রাখো একদিন সফল হবেই।"
শিলিগুড়ি শহরে ঋদ্ধিমান সাহা, রিচা ঘোষের মতো খেলোয়াড়েরা ভারতীয় দলে খেললেও এখানে নেই কোনও ক্রিকেট স্টেডিয়াম৷ এমনকী পরিকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বসে রিচা ঘোষ বলেন, "ছোটবেলায় খেলা যখন শুরু করি, তখন ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম। তেমন কিছু বুঝতাম না। যখন প্রথম জেলা দলে সুযোগ পাই, তখন থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করি ভারতের হয়ে খেলার। এরপর অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়, ডব্লিউপিএল জয় আর এখন সিনিয়র বিশ্বকাপ জয়। সত্যি দারুণ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমরা প্রতিযোগিতার প্রথম থেকেই নিশ্চিত ছিলাম চ্যাম্পিয়ন হব। কারণ আমরা যেভাবে প্র্যাক্টিস করেছি, যেভাবে গোটা দল একসঙ্গে ছিলাম, তাতে পরপর তিনটি ম্যাচ হেরেও আমরা হার মানিনি। তাই শেষ অবধি আমরা ট্রফি পেয়েছি।"
রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে আপ্লুত তিনি। এ বিষয়ে বলেন, "ওটা দারুণ মুহূর্ত৷ খুব ভালো লেগেছে। তাঁদের পরামর্শ আগামীতে ভালো খেলার উৎসাহ দেবে।" সব মিলিয়ে গোটা শিলিগুড়ি রিচাময় হয়ে থাকল। আপামর শহরবাসী রিচার সাফল্যে শামিল হলেন।
৫২ বছর পর প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করেছে ভারতীয় মহিলা দল। এই জয়ের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রিচা। ক্রিকেটের মঞ্চে প্রথম বাঙালি বিশ্বজয়ী রিচা ঘোষ। ভারতের বিশ্বস্ত ফিনিশার তিনি। শেষবেলায় শিলিগুড়ির ২২ বছর বয়সি তরুণীর ব্যাটের ঝড় ছাড়া ভারতের ইনিংস অসম্পূর্ণ। বিশ্বকাপে তিনি মোট ২৩৫ রান করেছেন। যার মধ্যে লিগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর সর্বোচ্চ ৯৪ রান ছিল। ফাইনালে ২৪ বলে ৩৪ রান করেন। গোটা প্রতিযোগিতায় তিনি মোট ১২ ছক্কাও হাঁকিয়েছেন।
Published By: Prasenjit DuttaPosted: 07:58 PM Nov 07, 2025Updated: 07:58 PM Nov 07, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
