Advertisement
বাবার রক্তাক্ত দেহ থেকে গ্রেনেড হামলা, হাসিনার জীবনের পাঁচ দশক হার মানায় চিত্রনাট্যকেও
হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মানবতা-বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে সেদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। কিন্তু গত পাঁচ দশকে তাঁর জীবন যে চড়াই-উতরাই-এর মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে, তা হার মানায় চিত্রনাট্যকেও।
বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে হত্যা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডিতে সপরিবারে হত্যা করা হয় মুজিবরকে। কিন্তু বরাত জোরে বেঁচে যান মুজিবের দুই কন্যা হাসিনা এবং রেহানা। ঘটনার একমাস আগেই তাঁরা জার্মানিতে চলে যান। একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেছিলেন, “আমি বাবা-মা-পরিবারের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতাম। তবে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমি আমার স্বামীর কাছে গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে আমাকে বিদায় জানাতে সবাই এসেছিলেন। আমার বাবা, মা, আমার তিন ভাই, দুই নববিবাহিতা ভগ্নিপতি।
হাসিনাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর উত্তরসূরি হাসিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে ২৩ বার চেষ্টা চালিয়েছে পাকপন্থী জঙ্গিরা। তার মধ্যে অন্যতম বড় হামলা হল ২০০৪ সালে ঢাকায় গ্রেনেড হামলা। ঘটনায় তাঁর বেশ কয়েকজন সঙ্গী প্রাণ হারালেও কোনওক্রমে রক্ষা পান মুজিবকন্যা।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামি লিগের ‘সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালানো হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে উঠেছিল মৃত্যুপুরী। শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে শত শত কর্মীর আর্তনাদ। চরম আতঙ্ক। তবে কঠিন সময়েও তাঁরা ভুলে যাননি প্রিয় নেত্রী হাসিনাকে। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের মধ্যেও আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাঁকে আগলে রাখেন। এভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গেলেও কানে আঘাত পান বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন মুজিবকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হয় গুলিও। হাসিনার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা যায়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মতোই ২১ আগস্টের হামলার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের কিছু সামরিক আধিকারিক ও জঙ্গি নেতাদের নিয়ে খালেদা জিয়ার ভবনে বসে ক্ষমতায় থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা খালেদাপুত্র তারেক রহমানের নির্দেশে এটা চূড়ান্ত করা হয়। হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের পাকিস্তানে ট্রেনিং দেওয়া হয়। ট্রেনিংয়ের পর তাদের গ্রেনেড সরবরাহ করে পাকিস্তান। আর হামলা শেষে পাকিস্তান ঘাতকদের আশ্রয়ও দেয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হাসিনা। বোন রেহানাকে নিয়ে তড়িঘড়ি চলে আসেন ভারতে। দেশ ছাড়ার পর থেকে দিল্লিতে বসেই একাধিকবার বার্তা দিতেও দেখা গিয়েছে হাসিনাকে। এরকমই একটি বার্তায় তিনি জানিয়েছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁকে এবং তাঁর বোন রেহানা দু’জনকেই হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল বাংলাদেশে।
হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “মাত্র ২০-২৫ মিনিটের ব্যবধানে আমি আর আমার বোন রেহানা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসি। না হলে ওরা আমাদের হত্যা করত। এর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমার উপর গ্রেনেড হামলা হয়। কিন্তু আল্লা আমাকে রক্ষা করেন। আমার হয়তো অনেক কিছু করার বাকি ছিল তাই আমি ফিরে আসি। এরপর কোটালিপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণের ছক কষা হয়েছিল। সেখান থেকেও আমি বেঁচে ফিরি। তারপর আমাকে মেরে ফেলার বহু চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু আল্লার দয়ায় আজ আমি জীবিত।”
জুলাই অভ্যুত্থানে দেশছাড়া হওয়ার পর থেকে মহম্মদ ইউনুসের বাংলাদেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে প্রধান হল পাঁচটি। প্রথম অভিযোগ: গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি’ হিসাবে আখ্যা দেন হাসিনা। আন্দোলনকারীদের উপর প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি-সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামি লিগ সদস্যদের হামলা। দ্বিতীয় অভিযোগ: শেখ হাসিনার আন্দোলনকারীদের হত্যা ও নির্মূলের নির্দেশ দেন। হেলিকপ্টার, ড্রোন এমনকী তাঁদের উপর প্রাণঘাতী অস্ত্র হামলার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশে ফলে হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারীর প্রাণ যায়।
তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা কাণ্ডে শেখ হাসিনা-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ। চতুর্থ অভিযোগ: ৫ আগস্ট, ২০২৪ সালে ঢাকার চাঁনখারপুলে হাসিনার নির্দেশে ৬ জনকে গুলি করে খুন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পঞ্চম অভিযোগ: ঢাকার আশুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ৫ এবং একজন জীবিতকে পুলিশের গাড়িতে পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দান।
সোমবার হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সেদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। যদিও এই রায়কে মানছেন না হাসিনা এবং তাঁর দল। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হতেই সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, একটি মৌলবাদী এবং অনির্বাচিত সরকারের রায় অর্থহীন। এদের সাজা দেওয়ার এক্তিয়ারই নেই। মানুষকে বোকা বানাতে নাটক চলছে। বাংলাদেশের ইতিহাস পালটে ফেলতে ষড়যন্ত্র চলছে।
Published By: Subhodeep MullickPosted: 09:45 PM Nov 17, 2025Updated: 01:36 PM Nov 18, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
