অবসর মানেই কি জীবন-সায়াহ্নে এসে দঁাড়ানো? মোটেই না। এটাই সময় জীবন-অধ্যায়ের নতুন পৃষ্ঠা খোলার। তবে অবসর জীবনকে চেটেপুটে উপভোগ করতে সময় থাকতে থাকতেই পরিকল্পনা করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নচেৎ পরবর্তীতে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দঁাড়াতে হতে পারে। কীভাবে এগোতে পারেন, রোডম্যাপ দিলেন মহেশ কুমার শর্মা (এমডি ও সিইও, এসবিআই লাইফ ইনসিওরেন্স )
নিজের রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং যদি নিজে না করেন, এখন থেকেই যদি তা শুরু না করেন, তবে ভবিষ্যতে বড়সড় আর্থিক সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ইনসিওরেন্স সংস্থার কাছে যান অ্যানুইটি কিনতে বা গ্রোথের জন্য লগ্নি করুন ক্যাপিটাল মার্কেটের অন্যত্র, সূচনায় যেন দেরি না হয়। ‘সঞ্চয়’-কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানালেন মহেশ।
সাধারণ মানুষ কীভাবে শুরু করবেন অবসর সংক্রান্ত প্ল্যানিং?
দেখুন, বুঝতেই পারছেন যত আগে শুরু করতে পারবেন, ততই ভাল। সময় হাতে থাকার সুবিধা আছে, বোঝেনই তো! প্ল্যানিং করার সময় মনে রাখবেন দীর্ঘমেয়াদী লগ্নির কোনও বিকল্প হয় না। দুই দশকের বেশি সময় যঁারা দিতে পারবেন, এবং যঁারা অবসরের বিষয়ে সচেতন, তঁারা এটা জানবেন, তঁাদের অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। মার্কেটে সুযোগ আসবে, তবে তা ধরতে জানা সোজা নয়। তাই ‘টাইমিং’ করার চেষ্টা না করে বেশি টাইম দেওয়ার কৌশল আয়ত্ত করুন। সব ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে ভাবুন, কিন্তু জেনে রাখুন ক্যাপিটাল অ্যাপ্রিসিয়েশন যেমন দরকার, তেমনই প্রয়োজন জীবন এবং স্বাস্থ্য বিমা। বস্তুত, এই শেষ দুই পরিষেবার খেঁাজ রাখতেই হবে, কারণ যে কোনও অবসরমুখী মানুষের সহায় হবে এগুলি। যত শীঘ্র পারেন, আরম্ভ করুন। আর ধাপে ধাপে নিজের অ্যাসেট এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়ার পরিধি বাড়িয়ে তুলুন। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ যথেষ্ট সচেতনভাবে নির্দিষ্ট কিছু সেভিংস-এর পদ্ধতি মেনে চলেন, সেই রাস্তা থেকে বিচ্যুত যেন না হন তঁারা। তবে পরামর্শ নেওয়া দরকার প্রফেশনাল সহায়কের কাছেই।
[আরও পড়ুন: ব্যাঘ্র উন্নয়নের ১.১ কোটি টাকা খরচ রামনাথ কোবিন্দের সফরে! প্রশ্নের মুখে কাজিরাঙা]
ইনসিওরেন্স সেক্টরের কী ভূমিকা অবসরপ্রাপ্ত লগ্নিকারীর ক্ষেত্রে?
আমি আশা করি, অবসরপ্রাপ্ত লগ্নিকারী মহিলা হোন বা পুরুষ, অ্যানুইটির প্রাসঙ্গিকতা তিনি অবশ্যই বুঝবেন। এবং এই ব্যাপারে অবসর গ্রহণ করার অনেক আগে থেকেই ভাবনাচিন্তা যেন চলে। সঠিক অ্যানুইটি বেছে নিলে, অবসরকালীন জীবনে, যখন অ্যাক্টিভ ইনকাম বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ধারাবাহিকভাবে হাতে টাকা আসতে পারে। এই মুহূর্তে বেশ কিছু উপযোগী প্রোডাক্ট আছে, বিমা সংস্থাগুলি এখন নানা ধরনের বিকল্পের সন্ধান দিচ্ছে। নিজের পছন্দমতো ভাল প্রোডাক্ট চিহ্নিত করুন। একটু ভুল হল, কারণ পছন্দের থেকেও আরও বড় শর্ত হল প্রয়োজন। বলা উচিত, সঠিক প্রোডাক্ট যা একেবারেই প্রয়োজনীয়, যেখানে কোনও সন্দেহ নেই, সেটিই নিতে হবে। প্রসঙ্গটা এবার একটু ঘুরিয়ে বলি। অবসরের আগে, যখন কর্মজীবনে আপনি ব্যস্ত রয়েছেন, তখন নিশ্চয় অন্য ইনসিওরেন্স প্ল্যানও পরীক্ষা করে দেখেছেন। রোজগার এবং দায়-দায়িত্ব অনুযায়ী কি নিজের বিমা বাড়িয়েছেন? আশা করি, এই প্রশ্নের উত্তর আপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচকই হবে। কারণ জীবনে যত এগিয়ে যাবেন, আপনার অগ্রাধিকারে বদল আসবে।
কেবল রিটায়ারমেন্ট সেগমেন্টের বাইরেও তো এক বিশাল বিমার জগৎ…
হ্য়াঁ, অবশ্যই। অল্পবয়সিই হোন বা মধ্যবয়সি, বিমার বিষয়ে আপনাকে সজাগ থাকতে হবে, নিজের এবং পরিবারের কথা ভেবে। এই দেশে ইনসিওরেন্স ডেনসিটি, অর্থাৎ প্রিমিয়াম যা সংগ্রহ করা হয় দেশের জনসংখ্যার নিরিখে, বেশ নিচুর দিকে। পৃথিবীর অন্য কয়েকটি প্রান্তের পরিসংখ্যান দেখুন, বেশ এগিয়ে আছে এক শ্রেণির গ্রাহক। আমাদের অনেক কাজ করা বাকি। তবে ভারতবর্ষেও যে পরিবর্তন আসছে তা ইতিমধ্যেই বোঝা যাচ্ছে। বাজারে চাহিদা আছে, বিমার উপযোগিতা নিয়ে নতুন প্রজন্মের মনে কোনও সন্দেহ নেই। একইসঙ্গে এ-ও দেখছি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলগুলিও শক্তিশালী হচ্ছে, আখেরে তাতে গ্রাহকদেরই লাভ।
[আরও পড়ুন: গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ, রাহুল গান্ধীর প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর অধ্যাপককে ই-মেল অমর্ত্য সেনের]
ভবিষ্যতে ইনসিওরেন্স সেক্টর থেকে কী পাব আমরা?
প্ল্যানে আরও বৈচিত্র্য আসবে, পরিষেবার ধরন-ধারণও আরও গ্রাহক-কেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। বিমা নিয়ে শিক্ষাদীক্ষার প্রসার যে অনেক অংশে বেশি হবে আগামিদিনে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ইনসিওরেন্স পেনিট্রেশন, মানে দেশের জিডিপির তুলনায় মোট প্রিমিয়ামের অংশ নিয়ে যঁারা প্রশ্ন তোলেন, তঁারাও হয়তো পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী হবেন। ইনসিওরেন্স থেকে দীর্ঘমেয়াদী টাকার লগ্নি হওয়া সম্ভব, তাই দেশ গঠনে এই সেক্টরের ভূমিকা সন্দেহাতীতভাবে প্রয়োজনীয়। মনে রাখুন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নতমানের করার জন্য লং টার্ম ক্যাপিটাল থাকা জরুরি। সেই প্রয়োজন পূরণ করার করবে ইনসিওরেন্স বলে আমি বিশ্বাস করি।