সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “মায়ের পায়ে জবা হয়ে…।” কালীপুজোর রাতে শ্যামার গলায় লাল টকটকে জবার মালা দিতে রাজ্যজুড়ে এই ফুলের প্রায় দুকোটি চাহিদা থাকে। মা দুর্গার আরাধনায় মহাষ্টমীতে পদ্মের জোগাড় দিতে যেমন হিমশিম খেতে হয় পুজো উদ্যোক্তাদের। তেমনই মা কালীর আরাধনাতেও জবার জন্য হা-পিত্যেশ করতে হয় পুজো আয়োজকদের। এদিকে কালীপুজোর দুদিন আগেই ১০০০ পিস জবার দাম হয়ে গিয়েছে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ এক একটি জবার দাম ৫০ পয়সা। ফলে বিকল্প হিসাবে লাল টকটকে প্লাস্টিকের জবার মালায় ছেয়ে গিয়েছে বাজার। দশকর্মা ভাণ্ডারে এই জবার মালা কিনতেই এখন যেন হিড়িক পড়েছে ক্ষুদ্র পুজো আয়োজকদের। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্রই প্রায় দেখা যাচ্ছে এই ছবিটা।
তবে জানা গিয়েছে, এই বিপুল সংখ্যক জবার চাহিদা মেটাতে দুর্গাপুজোর পর থেকেই এই ফুল জেলায় জেলায় হিমঘরে রাখা শুরু হয়। সেখান থেকে কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজার-সহ জেলার বিভিন্ন ফুল বাজারে যায়। বাংলায় ব্যাপকহারে জবা ফুলের চাষ হয় পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ২, হাওড়ার বাগনান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা শিরাকোলে। এছাড়া প্রায় সব জেলাতেই এই ফুলের কম-বেশি চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু তাতেও কি মিটবে চাহিদা? সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, “কালীপুজোর রাতে রাজ্যজুড়ে প্রায় আড়াই কোটি জবার প্রয়োজন হয়। বিপুল চাহিদা মেটাতে বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষ করে লক্ষ্মীপুজোর পর থেকেই ব্যবসায়ীরা ফুল চাষিদের কাছ থেকে তা কিনে হিমঘরে মজুত করে রাখেন। পুজোর দিন দুয়েক আগে থেকে তা বের করে বিক্রি শুরু হয়। তাতেও চাহিদা মেটে না। সেই কারণেই লাল টকটকে কৃত্রিম প্লাস্টিকের জবার মালা বাজারে এসেছে।”
কিন্তু কালীপুজোয় লাল জবাই প্রয়োজন হয় কেন? লাল অর্থাৎ শক্তির প্রতীক। এছাড়া আরও নানান কারণ রয়েছে। কথিত আছে, জবার কোনও গন্ধ না থাকায় ও এর স্থায়িত্ব কম হওয়ায় মা কালীর কাছে কান্নাকাটি শুরু করেছিল এই ফুল। বলেছিল তার কোনও সম্মান নেই। কোনও পুজোয় লাগে না। এর পরই শ্যামা মায়ের জবাব ছিল, যাদের কেউ নেই তাদের মা আছে। সেই থেকেই মা কালীর পুজোয় জবা অপরিহার্য। এছাড়া মায়ের জিভের রং লাল। লাল জিভের প্রতীক জবা। এছাড়া লাল রং ঋতুচক্রের প্রতীক। তাই লাল রঙের মাধ্যমে সৃজনকে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। এই কারণেই লাল জবা কালীপুজোয় প্রয়োজন হয়। তাছাড়া এই রং ভালবাসারও প্রতীক। তাই মাকে ভালোবেসে, প্রণাম জানিয়ে মায়ের চরণে লাল টকটকে জবা দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: কাঁকসায় তিনজনের দেহ উদ্ধারের আগে বাড়িতে আসে হেলমেটধারী! কে সে?]
এগুলো নিয়ে নানা মত থাকলেও কালীপুজোর বাজারে প্লাস্টিকের লাল জবার চাহিদা কিন্তু ব্যাপক। পুরুলিয়া শহরের একটি দশকর্মা ভাণ্ডারে দোকানের মালিক চন্দন দত্ত বলেন, “প্রাকৃতিক টাটকা জবা কালীপুজোয় পাওয়া বড়ই চাপের। ভীষণ দাম। তাই বিকল্প হিসাবে এই লাল টকটকে প্লাস্টিকের জবার মালার চাহিদা বেড়েছে। যা শুক্রবার ধনতেরাসের দিন থেকেই কেনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই জবার মালাগুলো আমরা কলকাতা ও আসানসোল থেকে এনে বিক্রি করি।” তিনি আরও জানান, কোনও মালায় ১০৮টা , আবার কোনও মালায় ৫০টা প্লাস্টিকের জবা ফুল থাকে। ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত এগুলো বিক্রি হয়।