সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইজরায়েল সফরে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ, তাঁর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ হোটেলে থাকার বন্দোবস্ত করেছেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইজরায়েলে ‘কিং ডেভিড হোটেল’ নামের যে হোটেলে মোদি থাকবেন, সেটি এই গ্রহের সবচেয়ে নিরাপদ হোটেল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ইজরায়েল সফরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শেলডন রিৎজ।
কোনও বোমার আঘাতেই এই হোটেলের ক্ষতি হবে না, এতটাই শক্ত এর কাঠামো। প্রধানমন্ত্রী মোদি যে ঘরে থাকবেন, সেখানেও রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শুধু বোমা নয়, মোদি যে ঘরে থাকবেন সেখানে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করলেও কোনও ক্ষতি হবে না। হোটেলের ১১০টি ঘর মোদি ও ভারতীয় কূটনীতিবিদদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রিৎজ বলছেন, “এর আগে আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন, বুশ, ওবামা ও ট্রাম্পের জন্য এখানে থাকার বন্দোবস্ত করেছি। মোদিজি নিরামিষ খান জেনে আমরা হোটেলের সমস্ত খাবার থেকে ডিম ও চিনি বাদ দিয়েছি।”
[রাজ্যপাল ক্যাডারসুলভ আচরণ করছেন, অভিযোগ পার্থর]
প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনদিনের সফরে ইজরায়েল পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। প্রোটোকল ভেঙে বর্ণাঢ্য স্বাগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তেল আভিভ বিমানবন্দরে তাঁকে বরণ করে নেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা পোপের জন্য যে ধরনের অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তারই প্রতিচ্ছবি ছিল ওই অনুষ্ঠান। লক্ষ্যণীয় যে, নেতানিয়াহুর সঙ্গে হিব্রুতে সম্ভাষণ শুরু করেন মোদি। ছিল ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও। অন্যদিকে, হিন্দিতে ‘আপকা স্বাগত হ্যায় মেরে দোস্ত’ বলে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান নেতানিয়াহু। দুই নেতার ঘনিষ্ঠতা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন মোদি নিজেই।
১৯৭৬—এর ৪ জুলাই উগান্ডার এনটেবে বিমানবন্দরে আরব জঙ্গিদের হাতে ছিনতাই হওয়া বিমান থেকে ৯০জন ইজরায়েলি যাত্রীকে মুক্ত করার অভিযানে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন নেতানিয়াহু। সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বড় ভাই। ঠিক ৪১ বছর পর এই দিনটাতে দাঁড়িয়ে সে কথা স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করেন মোদি। তিনি বলেন, “আপনাদের এই সমস্ত বীররা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা।” হিব্রুতে ‘হ্যালো’ বলে মোদি জানান, প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ইজরায়েল সফর বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।” তিনদিনের সফরে সমস্ত অনুষ্ঠানেই মোদির পাশে থাকবেন নেতানিয়াহু। যেমনটি হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে। সেই সুরেই নেতানিয়াহু এদিন বলেন, “দীর্ঘদিন আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি। ৭০ বছর। এই সফর ঐতিহাসিক। আমরা ভারতকে, আপনাদের সংস্কৃতি, গণতন্ত্র ভালবাসি।” রাতে নেতানিয়াহুর বাড়িতে নৈশভোজ সারেন মোদি।
[এবার বাড়তে চলেছে মেট্রো রেলের ভাড়া!]
তিনদিনের সফরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনা করবেন মোদি। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের মতো ইজরায়েলও আরব জঙ্গিদের সন্ত্রাসের শিকার। তাই ইজরায়েল সফরে তিনি মূলত সন্ত্রাস নিয়েই কথা বলবেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। একই সঙ্গে উঠে আসবে আর্থিক সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রসঙ্গও। ৬ জুলাই পর্যন্ত মোদি ইজরায়েলে থাকবেন। সেখান থেকেই জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন তিনি। ইজরায়েলে মোদি সে দেশের প্রেসিডেন্ট রভেন রুবি রিভলিনের সঙ্গেও কথা বলবেন। ইহুদি-নিধন কাণ্ডে মৃতদের স্মৃতিসৌধ ইয়াদ ভসেম মেমোরিয়াল মিউজিয়ামেও গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯১৮-য় হাইফা শহরের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ভারতীয় সেনাদের উদ্দেশেও তিনি শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। চলতি বছর ভারত-কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই উপলক্ষে মোদির এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদিরা মোদির সফরের দিকে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে উদগ্রীব মোদিও।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের অবস্থানকে ইজরায়েল সমর্থন করায় আশ্বস্ত নয়াদিল্লি। তেল আভিভ জানিয়েছে, নিজেদের রক্ষা করার পুরো অধিকার রয়েছে ভারতের। দু’দেশই সন্ত্রাসের ‘দুষ্ট শয়তানের শিকার’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মার্ক সাফার। এদিকে, মঙ্গলবার রাতে নরেন্দ্র মোদি ও নেতানিয়াহু যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাস, হিংসা দমনের বিরুদ্ধে দুই দেশ একযোগে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
The post ইজরায়েল সফরে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত হোটেলে রাত কাটাবেন মোদি appeared first on Sangbad Pratidin.