অর্ণব আইচ:সিবিআই (CBI) সেজে অপহরণ ও টাকা আদায়ের ঘটনায় এবার লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) এক সিভিক ভলান্টিয়ার। আগেই এই ঘটনায় এক সাংবাদিক-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ ঠিকাদার, কেউ সিন্ডিকেট চালায়, আবার কেউ বা প্রোমোটারের দালাল, যে নিজেকে সিনেমার প্রযোজক বলেই পরিচয় দেয়!
পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার দক্ষিণ কলকাতার কসবা (Kasba) থেকে সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজিরার নাম করে অপহরণ করা হয় ব্যবসায়ী অজিত রায়কে। এরপর প্রথমে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে দু’কোটি টাকা দাবি করা হয়। পরে ১৫ লক্ষ টাকায় রফা হয়। মুক্তিপণ নিয়ে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। গোটা ঘটনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল তিনটি গাড়ি। সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয় সৈকত চট্টোপাধ্যায় নামে এক যুবককে। সৈকত পেশায় গাড়ির চালক। পুলিশের দাবি জেরার মুখে সৈকত স্বীকার করেছে, সে কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ব্যাটালিয়নের সিভিক ভলান্টিয়ার। ওই পদে থেকেই কমব্যাট ব্যাটালিয়নের গাড়ি চালাত সে। এর আগে মোট দশজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
[আরও পড়ুন:‘আমার শরীর যেন করোনা গবেষণার কাজে লাগে’, দেহদান করে গেলেন বাম নেত্রী]
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছে যে, অপহরণ ও তোলাবাজি কাণ্ডে ধৃত ব্যক্তিরা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। দু’একজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও অপহরণের মতো দাগী অপরাধী কেউ নয়। যদিও পুলিশের মতে, ধৃত অনির্বাণ কাঞ্জিলাল ও স্বরূপ রায়ের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। স্বরূপের পরিচিত ছিলেন ব্যবসায়ী অজিত রায়। স্বরূপই অনির্বাণকে জানিয়েছিলেন, অজিতকে অপহরণ করলে মোটা টাকা পাওয়া যেতে পারে। এরপর অনির্বাণ, অভিষেক (Abhishek Sengupta) ও অন্য কয়েকজন কীভাবে সিবিআই পরিচয় দিয়ে অপহরণ করা হবে ও নিজাম প্যালেসের ক্যান্টিনে লুকিয়ে রাখা হবে, সেই ছক কষে।
সূত্রের খবর, ধৃত অনির্বাণ নিজেকে সিবিআই আধিকারিক পরিচয় দিয়ে নিজাম প্যালেসে ঘোরাঘুরি করলেও প্রোমোটারের হয়ে জমি, বাড়ির দালালি করত। অনির্বাণকে অনেকেই সিবিআই অফিসার হিসাবেই চিনতেন। সিবিআই আধিকারিকদের চলাফেরাও রপ্ত করেছিল সে। তার সঙ্গী প্রতীক সরকার দালালির কাজই করে। যদিও সে নিজেকে সিনেমার প্রযোজক বলেই পরিচয় দেয়। এই তথ্যও গোয়েন্দা পুলিশ যাচাই করছে। এ ছাড়াও রাজপুরের অর্ঘ্য সেনগুপ্ত আইটি সেক্টরে প্লেসমেন্টের ব্যবসা করে। নেতাজি নগরের রাজু মণ্ডল নির্মাণের সামগ্রীর সিন্ডিকেট চালায়। উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের বাসিন্দা জুলফিকর রাজারহাটের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মাছের ব্যবসা করে। শাসনের বাসিন্দা আসরফ একটি গাড়ির চালক। রাজেশ অধিকারী অন্য গাড়ির চালক। স্বরূপ রায় জাহাজে রং করার ঠিকাদারির ব্যবসা করে। যেহেতু বেশিরভাগ ধৃতই বিভিন্ন পেশার, তাই কীভাবে একে অন্যের পরিচিত হল, তা জানতে তাদের জেরা করা হচ্ছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসাবে পাওয়া ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।