অর্ণব আইচ: বাক্সটির রং আসলে কালোই। তাই এটিএম জালিয়াতদের কাছে তার পরিচিতি ‘ব্ল্যাক বক্স’ (Black Box) নামেই। এই ব্ল্যাক বক্স হাতে আসার পর তা পরীক্ষা করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। দেখা হয়েছে তার সার্কিটও। কিন্তু কোন দেশে এই কালো বাক্সটি তৈরি, তা নিয়ে এখনও রয়ে গিয়েছে রহস্য।
পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লির এটিএম জালিয়াতরা এটিএমে একটি ডিভাইস বসিয়ে এটিএমের সঙ্গে সার্ভারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর পর ম্যালওয়্যারের সাহায্যে এটিএমের (ATM) কম্পিউটার ফের নতুন করে চালু করে। ওই ম্যালওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো এটিএম থেকে টাকা তুলে নেয়। কলকাতা ও বিধাননগরের ১১টি এটিএম থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা তুলে নেয় তারা। যে ডিভাইস ব্যবহার করে এই জালিয়াতি করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি উদ্ধার হয়েছে জলন্ধর থেকে। সেটি হাতে পান লালবাজারের গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, ধরা পড়ার পর এটিএম জালিয়াতরা স্বীকার করেছিল যে, তারা যে ডিভাইসটি ব্যবহার করছে, তা ‘ব্ল্যাক বক্স’ নামেই পরিচিত। এবার ডিভাইসটি হাতে পেয়েও গোয়েন্দারা দেখেন যে, তার রং কালো। হাতের মুঠোর মধ্যেই ধরে যায় বাক্সটি। বরং হার্ড ডিস্কের একটি ছোট সংস্করণও বলা যেতে পারে। তার একপাশে পোর্টের সঙ্গে এটিএমের কেবল যোগ করা যায়। ওই ব্ল্যাক বক্সের ভিতর থাকে সার্কিট। তার মাধ্যমেই ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে দেওয়া হয় এটিএমে।
[আরও পড়ুন: জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন দুর্ঘটনায় ‘মৃত’ অমৃতাভ সাত বছর কোথায় ছিলেন? উত্তরের সন্ধানে সিবিআই]
জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মনোজ গুপ্তা ও নবীন গুপ্তাকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, তাদের উজবেকিস্তানের ‘গুরু’রা তাদের পদ্ধতি শেখানোর পর জানিয়েছিল যে, ডার্ক ওয়েব থেকে কিনতে হয় এই ডিভাইস। তাই মনোজ ডার্ক ওয়েবের সার্চ ইঞ্জিন ‘টর’-এ গিয়ে এই ব্ল্যাক বক্সের সন্ধান চালায়। ডার্ক ওয়েবে অর্ডার দিয়ে বিট কয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির সাহায্যে তার দামও মেটায় তারা। যদিও ওই ডিভাইসটি বানানো অবস্থায় পাঠানো হয়নি। সেগুলি কয়েকটি অংশে কুরিয়ারে পাঠানো হয়। মনোজ ডার্ক ওয়েবেই শিখে নিয়েছিল অংশগুলি কীভাবে জুড়তে হয়। সে তার ভাই নবীন ও সঙ্গী অমিত ও ওয়াকিলের সাহায্য নিয়ে অংশগুলি জুড়ে তৈরি করে ব্ল্যাক বক্স। লালবাজারের গোয়েন্দাদের সামনেই মনোজ ওই ব্ল্যাক বক্স খুলে ফেলে। তার সার্কিটও পরীক্ষা করেছেন গোয়েন্দারা। ডিভাইসটি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তবে অন্তত তিনটি ব্ল্যাক বক্স নিয়ে এসে জালিয়াতি করে তারা। এর মধ্যে একটি ছিল জলন্ধরে তাদের সঙ্গী নীতীশ সোমানির কাছে। জলন্ধরের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর তার কাছ থেকে একটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করে। নীতীশকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার সময় ওই ডিভাইসটিও আটক করে কলকাতায় নিয়ে আসেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, কোন দেশে এই ব্ল্যাক বক্স তৈরি হয়, তা জানতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, ওই ব্ল্যাক বক্সের কোথাও লেখা নেই কোনও দেশ বা জায়গার নাম। প্রাথমিকভাবে ওই ডিভাইসটি চিনে তৈরি হয়, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারণ, এর আগেও মনোজ রোমানীয়দের জালিয়াতির জন্য যে স্কিমার কলকাতায় নিয়ে এসেছিল, তা চিনে তৈরি হয়েছিল।