অর্ণব আইচ: যাদবপুরের বাংলা বিভাগে ক্লাসের মধ্যেই কি লুকিয়ে রয়েছে স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর ‘আমি সমকামী নই’ কথাটির রহস্য? বুধবার হস্টেলে গিয়ে এই কথাটি বলতে বলতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন স্বপ্নদীপ। হস্টেলের বেশ কয়েকজন ছাত্রের বয়ানে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসেই র্যাগিংয়ের তত্ত্ব। তাঁদের দাবি, র্যাগিং চলাকালীন এক সহপাঠিনীকে ‘প্রেম নিবেদন’ করতে না পারায় তাঁকে সমকামী বলা হয়, যা ছাত্রটি মেনে নিতে পারেননি। সেদিন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের আরও কয়েকজন ছাত্র তার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলে পুলিশের কাছে খবর। সেদিন কী হয়েছিল, তা জানতে বৃহস্পতিবার বাংলার প্রথম বর্ষেরই পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
যদিও বাংলা বিভাগের ছাত্রদের পালটা অভিযোগ, স্বপ্নদীপ হস্টেলের ‘সিনিয়র’ আবাসিকদের র্যাগিংয়ের শিকার। দুই পক্ষের দু’রকম দাবিই যাচাই করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। হস্টেলের আবাসিকদের দাবি, গত মঙ্গলবার থেকেই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন স্বপ্নদীপ। জিজ্ঞাসা করা হলে আবাসিকদের ছাত্রটি জানান, বাংলা বিভাগে ক্লাসেই কয়েকজন ‘সিনিয়র’ তাঁকে র্যাগিং শুরু করেন। প্রথম বর্ষেরই এক ছাত্রীকে বলেন প্রেম নিবেদন করতে। ছাত্রীও সংকোচে পড়ে যান। ওই অবস্থায় কিছুতেই সহপাঠিনীকে প্রেম নিবেদন করতে পারছিলেন না স্বপ্নদীপ। তখনই তাঁকে ঘিরে শুরু হয় সিনিয়রদের মশকরা। কয়েকজন স্বপ্নদীপকে ‘সমকামী’ বলতে থাকেন। কয়েকজন বলেন, হস্টেলে গেলে সমকামীদেরই শিকার হতে হবে তাঁকে।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুতে কড়া প্রশাসন, পুলিশের জালে প্রাক্তনী]
ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় জানান, তাঁকে ফোন করে এক ছাত্র জানান, স্বপ্নদীপকে কেউ বলেছেন, হস্টেলে থাকলে ছাদ থেকে ঝাঁপাতে হয়। হস্টেলে ফিরে আসার পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বলতে থাকেন, তিনি সমকামী নন। প্রথমে চারতলার একটি ঘরে গিয়ে অন্য সিনিয়র আবাসিকদের এই কথা বলেন। এর পর প্রথমে নিজের ঘরে গিয়ে ফের দুই রুমমেটকে বলেন একই কথা। এর পর ৬৫ নম্বর রুমে গিয়ে দরজা লক করার চেষ্টা করেন। তাঁকে বাধা দিতে গেলে অন্যদের সঙ্গে তাঁর ধাক্কাধাক্কি হয়। ফের নিজের ঘর ৬৮ নম্বর রুমে ফিরে আসেন স্বপ্নদীপ। অস্বাভাবিক আচরণ করতে করতে খুলে ফেলেন জামাকাপড়। একটি গামছা পরে বারান্দা দিয়ে দৌড়তে থাকেন। ঘন ঘন বাথরুমে যান। আবার কখনও বা বিবস্ত্র হয়ে সিনিয়রদের বলেন, তিনি সমকামী নন।
রজত রায় জানান, বুধবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে তাঁকে এক ছাত্র ফোন করে স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক আচরণের কথা বলতে তিনি ঘটনাটি হস্টেলের সুপারকে জানাতে বলেন। ১০টা ৮ মিনিটে রজতবাবু সুপারকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তাঁর দাবি, রাত ১২টা ৮ মিনিটে সুপার ফোন করে জানান, ওই ছাত্র বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন অন্য ছাত্ররা। রাতে পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর পরই আবাসিক ছাত্ররা তাঁকে ট্যাক্সি করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হস্টেলে আরও কয়েকজন অন্যান্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আবার বিভাগের ছাত্রদের অভিযোগ, হস্টেলের ছাত্ররা তাঁকে বিবস্ত্র করে র্যাগিং করেন। তাঁকে ওই অবস্থায় বারান্দায় দৌড়তে বলে হয়। এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।