সৈকত মাইতি, তমলুক: ছেলের চাকরি সহ মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে প্রতারণার শিকার হয়ে খুইয়ে ছিলেন প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা। ঘটনার তদন্তে নেমে প্রায় ৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হল পূর্ব মেদিনীপুর (Purba Medinipur) জেলা সাইবার সেল। এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইম (Cyber Crime)থানার তরুণ অফিসার সৌরভ মিত্রকেই কৃতিত্ব দিচ্ছে পুলিশ। তাঁর চেষ্টাতেই এই টাকা উদ্ধার করে ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে প্রতারিত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। প্রতারণার অর্থ উদ্ধার বড়সড় সাফল্য বলেই মনে করছে পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিষাদলের অমৃতবেরিয়া এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুমার মাল। বর্তমানে উত্তমবাবু একটি বিমা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। গত ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে প্রতারণা (Fraud) চক্রের ফাঁদে পড়েন। অভিযোগ, একটি অজানা নম্বর থেকে বাড়িতে মোবাইলের টাওয়ার বসানো এবং ছেলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে শুরু হয় এই প্রতারণা। বিভিন্ন চার্জের নামে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করে প্রতারকরা।
[আরও পড়ুন: মহিলার স্নানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে ব্ল্যাকমেল! অপমানে আত্মঘাতী বধূ]
এভাবেই প্রায় বছর দুয়েক কেটে গেলেও ছেলের কোনও চাকরি না হওয়ায় হুঁশ ফেরে উত্তমবাবুর। প্রতারিত হয়েছেন বুঝে উত্তমবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণা দেবী এই চক্রের মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে সুবিচার চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। গত ২২ সালের জুন মাসে এমনই অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর (FIR) দায়ের হয়। এমন অবস্থায় ঘটনার তদন্তে নেমে একে একে মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে প্রতারণা চক্রের হদিস পায় পুলিশ। জেলা সাইবার থানার পুলিশের সহায়তায় কলকাতার সল্টলেকে একাধিকবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাফল্য আসে। কয়েকটি ঘটনায় গ্রেপ্তারও হয় বেশ কয়েকজন। অবশেষে কৃষ্ণা দেবীর এই অভিযোগের তদন্তে নেমে সম্প্রতি প্রতারকদের কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ফেরাতে সক্ষম হন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। স্বভাবতই প্রতারকদের খপ্পর থেকে বিপুল অংকের এই টাকার সামান্য কিছু অংশ হলেও ফেরাতে সক্ষম হওয়ায় বেশ কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে পুলিশ মহলেও।
তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে কলকাতাতেই একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অতর্কিতে অভিযান চালিয়ে সাফল্য এসেছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষজনের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচার চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে প্রতারণার একটি ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ে ৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।
[আরও পড়ুন: কামদুনি কাণ্ড: নিঃশর্ত নয়, মুক্তিপ্রাপ্তদের উপর একাধিক শর্ত চাপাল সুপ্রিম কোর্ট]
বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ”সাইবার ক্রাইম থানার তরুণ অফিসার সৌরভ মিত্রের ঐকান্তিক চেষ্টায় একজন প্রতারিত ব্যক্তি ফিরে পেয়েছেন খোয়া যাওয়া ৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সেই টাকার বেশিরভাগ, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়েছেন। সেই টাকারই একটি অংশ, বেসরকারি ব্যাঙ্ক ডিমান্ড ড্রাফট করে পাঠায় প্রতারিত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। ওঁর হাতে সেই ডিমান্ড ড্রাফট তুলে দিলেন সৌরভবাবু। বিগত এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা উদ্ধার করে প্রতারিত ব্যক্তিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।”