সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ‘ডানহাত’ অভিজিৎ মণ্ডলকে জালে তুলেছে। এবার পুলিশের নজরে নারায়ণ ওরফে নরেন্দ্র খেরকা (নারায়ণ নন্দা নামেও পরিচিত)। রাজেশ ওরফে রাজু ঝা হত্যা কাণ্ডে একসময়ের সহযোগী নারায়ণের যুক্ত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ এসেছে এই মামলায় গঠিত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিটের হাতে। অভিজিৎ ধরা পড়তেই গা ঢাকা দিয়েছে নারায়ণ। তাতে পুলিশের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুরের অম্বুজা কলোনিতে হানা দেয় পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের সিট। একদম ভরা বাজার থেকে অভিজিৎকে পাকড়াও করে পুলিশ। সেই সময় নারায়ণ অম্বুজা কলোনিতে তার অফিসেই ছিল। অভিজিৎকে পুলিশ ধরার সঙ্গে সঙ্গেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল অফিসে। কালো রংয়ের স্করপিও গাড়িতে করে চম্পট দেয় ‘মাফিয়া’ নারায়ণ। মোবাইলও সুইচড অফ করে দিয়েছে।
বুধবার সংবাদ প্রতিদিনের তরফে নারায়ণের মোবাইলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল সুইচড অফ থাকায় কথা বলা যায়নি। নারায়ণকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তরফে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। নারায়ণ যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে তার জন্য সড়কপথে রাজ্যের সীমানাবর্তী এলাকায় বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্ডাল ও কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে যাতে নারায়ণ পালাতে না পারে তার জন্যও নজরদারি করছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: রায়সাহেবের মতিভ্রম, আমাদের নয়! মুকুলের সঙ্গে তৃণমূল ছাড়তে নারাজ অনুগামীরা]
সূত্রের খবর, একসময় রাজুর সঙ্গে কয়লার কারবারে যুক্ত ছিল নারায়ণ। পরে জুটি ভেঙে যায়। কারবারের দ্বন্দ্ব চরম শত্রুতার পর্যায়ে চলে যায়। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল-দুর্গাপুর খনি অঞ্চলে ইসিএলের কয়লা পরিবহণের ‘ডিস্ট্রিবিউশন অর্ডার’ পাওয়া সংস্থার উপর ‘ডান্ডা ট্যাক্স’ বা তোলা আদায় করার কারবার শুরু করেছিল রাজু। প্রতি টন কয়লার জন্য ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা ডান্ডা ট্যাক্স চালু করেছিল। এই নিয়ে নারায়ণের সঙ্গে শত্রুতা বাড়তে থাকে রাজুর। আবার বেআইনিভাবে বালি পাচারে ‘প্যাড’ চালু করতে চেয়েছিল রাজু ও তার সঙ্গীরা। তাতে মোটা টাকা বিনিয়োগ ছিল নারায়ণের। কিন্তু বালির ওই কারবার চালুর দেড়দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নারায়ণ টাকা ফেরত পায়নি। এই নিয়ে মন কষাকষি বাড়ছিল রাজুর সঙ্গে।
আবার ইসিএলের কয়লা নিলাম হলে কোনও সংস্থা তা কিনত। সেখানেও থাবা বসিয়েছিল রাজু অ্যান্ড কোম্পানি। তার জেরেও অনেকেরই সঙ্গে শত্রুতা বাড়ছিল রাজুবাহিনীর। নারায়ণ তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘অপারেশন রাজু’ চালিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন সিটের আধিকারিকরা। অভিজিতের ‘বস’ নারায়ণ। বসের নির্দেশ ছাড়া অভিজিৎ কোনও কাজ করে না। তাই রাজু হত্যাকাণ্ডের পিছনে নারায়ণের হাত রয়েছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। অভিজিৎ ধরা পড়তেই নারায়ণের গা ঢাকা দেওয়াটাও তাৎপর্যপূর্ণ। পুলিশের তদন্ত ঠিকপথে এগোচ্ছে বুঝতে পেরেই নারায়ণ ধরা পড়ার ভয়ে লুকিয়েছে। নারায়ণকে জালে তুলতে সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।