সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বরাবরই তিনি ছকভাঙা। কখনও সমকামকে সমর্থন, কখনও রাজপথে এইচআইভি আক্রান্ত শিশুকে চুম্বন। ভ্যাটিকানের কড়া নিয়মশৃঙ্খলা প্রথম থেকেই মানেননি পোপ ফ্রান্সিস, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার ব্যক্তি। এমনকী তিনি ধর্ম নিয়েও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে। সকলেই বলেন, এমন উদারপন্থী পোপ খ্রিস্ট ধর্মের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম।
কিন্তু হঠাৎ কেন পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে এত কথা? কারণ, এবারও তিনি করলেন এক যুগান্তকারী কাজ। মিশরের গ্র্যান্ড ইমাম আল-আলজহার-শেখ-আহমেদ-আল-তায়েব পবিত্র চুম্বন করে শপথ নিলেন যুদ্ধবিধ্বস্তদের জন্য। আবুধাবিতে দুই সম্প্রদায়ের দুই শীর্ষ ব্যক্তির মিলনে ধরা দিল বিশ্বশান্তির আরেক চিত্র। পোপ ফ্রান্সিস এবং ইমাম আল তায়েব যৌথভাবে একটি চুক্তিতে সই করলেন। যাতে লেখা – ‘যুদ্ধ, অরাজকতা, অবিচারের শিকার সব মানুষ এক। তাঁদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। সকলের জন্য সমান সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করতে হবে।আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছি যে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যে কোনওরকমভাবে অত্যাচারিত মানুষের মধ্যে বিভাজন করা হবে না। কোথাও সন্ত্রাস, রক্তপাত বা হিংসা হতে দেব না।’
[দূষণের কবলে ব্যাঙ্কক, চোখে-নাকে জ্বালা নিয়ে বাড়ছে অসুস্থতা]
সম্প্রতি পশ্চিম এশিয়ার অস্থির পরিস্থিতিতে ধর্মযুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বিশেষত ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনে দ্বন্দ্বে প্রতিবেশী বিভিন্ন ধর্মের মানুষজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। আবুধাবিতে সেই সংক্রান্ত আলোচনাতেই শান্তির বার্তা পৌঁছে দিলেন পোপ, ইমাম। সুন্নি সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ইমাম আল তায়েবের কথায়, ‘আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনেরা আমাদের সহনাগরিক, সহকর্মী। তাঁদের সঙ্গে অন্তরের যোগ বাড়াতে হবে। আর পোপ ফ্রান্সিসের মতে, ‘বিশ্বের কোনও জায়গা আলাদা করে কোনও সম্প্রদায়ের জন্য নয়। সর্বত্র সকলের অবাধ বিচরণ হওয়া উচিত। সেই শান্তিই প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য।’ অবশ্য এক্ষেত্রে ধর্মীয় উদারতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে একই বন্ধনীতে উচ্চারিত হবেই ইমাম আল তায়েবের নামও। প্রায় এক দশক আগে মিশরের সেনা অভ্যুত্থানের সময় বহু সমালোচিত হন তায়েব। এমনকী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলানো ব্যক্তির মুখে এই হুঁশিয়ারিও শোনা গিয়েছিল – ‘হয় ইসলাম, নয় মৃত্যু।’ কিন্তু সময় বদলেছে। হয়তো নিজের দেশের আধুনিক প্রজন্মের গড়ে তোলা বিপ্লব থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন। ইদানিং তিনি এক ধর্মের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। কিন্তু কট্টরপন্থা থেকে সরে এসেছেন। তাই তো পোপ ফ্রান্সিসের সুরে সুর মিলিয়ে সাম্যের গান গাইলেন।