রাহুল চক্রবর্তী: শীতের পর যেমন বসন্ত আসে, সেভাবেই তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর যেন বসন্ত এসে গিয়েছে কংগ্রেসে। গোটা দেশের মতোই এ রাজ্যেও কংগ্রেসের সাফল্যে বসন্তের ছোঁয়া। বুধবার বহুদিন পর ‘ঐক্যবদ্ধ’ প্রদেশ কংগ্রেসকে দেখা গেল। ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভেনিউয়ে এক মঞ্চে হাজির ছিলেন সোমেন-অধীর-ডালু-দীপা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর এদিনই প্রথম শহরে বড় সমাবেশ করলেন সোমেন। এবং প্রথম বলেই ছয় মারার মতো একমঞ্চে গোটা কংগ্রেস নেতৃত্বকে হাজির করতে সক্ষম হলেন ‘ছোড়দা’। দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি সবার একটাই বার্তা, সংঘবদ্ধ থাকুন। সংগঠিত থেকেই ২০১৯-এর মতো এ রাজ্যেও পরিবর্তন করার ডাক দিল প্রদেশ নেতৃত্ব।
[রথযাত্রা নিয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গ বিজেপিকে চিঠি রাজ্যের]
ধর্মতলায় এদিন কংগ্রেস কর্মীদের উচ্ছ্বাস, বাজি পোড়ানো দেখেই স্পষ্ট, রাজস্থান-ছত্তিশগড়-মধ্যপ্রদেশে জয় দেখে এ রাজ্যেও কংগ্রেস উজ্জীবিত। নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ার লক্ষ্যণ দেখা গেল সবার মধ্যে। প্রচুর লোক সমাগম হয় এদিনের জনসভায়। এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক তরুণ নেতা গৌরব গগৈ, প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি, দীপা দাশমুন্সি, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান, সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি, মৌসম বেনজির নূর-সহ প্রত্যেক বড় মাপের কংগ্রেস নেতারাই এদিন উপস্থিত ছিলেন সমাবেশে। তিন রাজ্যে জয় থেকেই আশার আলোর সন্ধান পেয়ে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে কর্মী-সমর্থকরা। অধীর যেমন বললেন, ‘শীতের পর যেমন বসন্ত আসে, কংগ্রেসেও তেমন বসন্ত এসেছে।’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাসকদল তৃণমূলকে খোঁচা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তিন রাজ্যের ফল থেকে পরিষ্কার, দিল্লির মসনদে রাহুল গান্ধীই যোগ্য উত্তরাধিকারী। ওই গদি আর খালি নেই। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিন।’ একই সুরে গৌরব গগৈয়ের বক্তব্য, ‘২০১৯-এর মতো এ রাজ্যেও কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। আপনারা সংঘবদ্ধ থাকুন। বুথস্তরে সংগঠনে জোর দিয়ে আঘাত হানতে হবে।’
[লোকসভার রণকৌশল তৈরি করতে রাজ্য সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে মোদি-শাহ]
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ নবজাগরণের দিন। যাঁরা ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁরা দলে ফিরে আসুন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করে কংগ্রেসের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সোমেন মিত্র বলেন, ‘যাঁরা বলেছিলেন এদিনের সভায় চারটে লোক আসবে কিনা সন্দেহ, তাঁরা এসে আজ এই উচ্ছ্বাস দেখে যাক। কংগ্রেস সাইনবোর্ড নয়। লোকসভায় এ রাজ্য থেকে ৬টি আসন হল এখন প্রধান লক্ষ্য। মালদার দুটি, বহরমপুর এবং জঙ্গিপুর তো ধরে রাখতেই হবে। পাশাপাশি রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসনও আমাদের ফিরে পেতে হবে। তার জন্য কারও সঙ্গ দরকার নেই। একক প্রচেষ্টায় দলকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে সাফল্য পেতে হবে।’
[প্রয়াত বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার হায়দার আজিজ সফি]
বছরের শেষ লগ্নে দলীয় সমাবেশ থেকে নতুন বছরের জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচির ঘোষণাও হল এদিন। নতুন বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে ৭দিনে আলাদা আলাদা জেলায় জেল ভরো আন্দোলনে নামবে কংগ্রেস। যাতে প্রত্যেক জায়গায় থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন তার জন্য আলাদা আলাদা দিনে সবকটি জেলায় আন্দোলন হবে। জেলাশাসক, মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি, জেল ভরো আন্দোলন, প্রয়োজনে পুলিশের লাঠির আঘাত খেতেও যাতে কেউ পিছপা না হয় সেই বার্তাই দিলেন প্রদেশ সভাপতি ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা। সবমিলিয়ে আগামিদিনে সংগঠিত আন্দোলনে বাংলায় নিজেদের সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে মরিয়া কংগ্রেস, তা এদিনের সমাবেশ থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেল।
ছবি: অরিজিৎ সাহা
The post বহুদিন পর ‘ঐক্যবদ্ধ’ প্রদেশ কংগ্রেসের জনসভা, এক মঞ্চে সোমেন-অধীর-দীপা appeared first on Sangbad Pratidin.