সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেখবে গোটা দুনিয়া, গোটা দেশ, দেখবে গোটা গ্রাম ভারত। অযোধ্যার রামমন্দিরে যখন বেজে উঠবে শঙ্খধ্বনি, তখন অযোধ্যা থেকে কয়েশ শত মাইল দূরে কোনও এক প্রত্যন্ত গ্রামেও শোনা যাবে সেই শাঁকের আওয়াজ। যখন রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উৎসব শুরু হবে, তার সাক্ষী থাকবে গোটা গ্রাম-ভারত। হ্যাঁ, এমনই ব্যবস্থা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা যেন দেশের প্রত্যেকটি মানুষ দেখতে পারে সেই বন্দোবস্ত করার জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তেলেঙ্গানার বিজেপি সভাপতি জি কিশন রেড্ডি জানান, ”দেশের কোনও গ্রামই বাদ যাবে না। প্রতিটি গ্রামেই লাইভ দেখানো হবে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা।” রেড্ডিও আরও জানান, ”শুধু হিন্দুরা নয়, গোটা দুনিয়া অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা দেখার জন্য। এটা তো আমাদের সবার জন্য খুব আনন্দের মুহূর্তে। এই আনন্দেই ছড়িয়ে দেওয়া হবে দেশের প্রত্যেকটি গ্রামগঞ্জে। টাইমস্কোয়্যার থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে একসঙ্গে উচ্চারিত হবে রাম নাম। গোটা দুনিয়া লাইভ দেখবে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা।”
আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় নবনির্মিত রাম জন্মভূমি মন্দিরের (Ram Mandir) উদ্বোধন। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। ওইদিনই মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। উৎসাহীদের মধ্যে এখন প্রবল কৌতূহল রয়েছে মন্দিরের রামলালা মূর্তি নিয়ে। রাম জন্মভূমি মন্দির ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই জানিয়েছেন, রামলালার মূর্তিটি কৃষ্ণবর্ণের পাথরের তৈরি। মূর্তিটি দণ্ডায়মান। এবং পায়ের আঙুল থেকে ভ্রু পর্যন্ত মূর্তিটির উচ্চতা ৫১ ইঞ্চি।
[আরও পড়ুন: রামমন্দির উদ্বোধনের দিনই কোলে আসুক রামলালা! আবদার যোগীরাজ্যের অন্তঃসত্ত্বাদের]
প্রসঙ্গত, চম্পত রাই রামমন্দির জন্মভূমি আন্দোলনের পুরোধা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সহ-সভাপতি। এই প্রথম মন্দিরের গর্ভগৃহের রামলালার (Ramlala) মূর্তি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মন্দির ট্রাস্টের কোনও উচ্চস্তরের নেতা। তিনি আরও জানিয়েছেন, কর্নাটকের ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ বা গণেশ ভাটের গড়া দু’টি মূর্তির একটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেওয়া হতে পারে। গত ২৯ ডিসেম্বর ট্রাস্টের ১১ জন সদস্য মোট তিনটি মূর্তির মধ্যে একটি নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছিলেন। এরমধ্যে একটি ভাস্কর সত্যনারায়ণ পাণ্ডের গড়া রাজস্থানের শ্বেত মার্বেলের মূর্তি এবং অন্য দু’টি কর্নাটকের কালো গ্রানাইটের।
রাই জানান, মন্দিরে যে মূর্তি বসবে তা জল ও দুধ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাছাড়া, কোনও ভক্ত যদি সেই জল বা দুধ পান করেন, তবে তাতে ব্যক্তির শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। চম্পত রাই একটি বিবৃতিতে নবনির্মিত মন্দির প্রসঙ্গে বলেছেন, স্থাপত্যবিদদের মতে, গত ৩০০ বছরে উত্তর ভারতে এমন আর কোনও মন্দির নির্মাণ হয়নি। মন্দিরের বয়স হাজার বছর পার করার পরেও সূর্যের তাপ, বাতাস এবং জল এর কোনও ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। কারণ, মন্দিরের নিচে গ্রানাইটের একটি স্তর রয়েছে, যা আর্দ্রতা শোষণ প্রতিরোধ করে।
মন্দিরে কোনও লোহা ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর লোহা স্থাপত্যের কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। মন্দিরের স্থাপত্যের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে এর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটির নিচে একটি অতি শক্তিশালী শিলা তৈরি হবে। মাটির উপরে কোনও ধরনের কংক্রিটের ব্যবহার হয়নি, কারণ কংক্রিটের বয়স ১৫০ বছরের বেশি নয়। রাই জানিয়েছেন, প্রতি বছর চৈত্র শুক্লা নবমীতে (রাম নবমী) সূর্যের রশ্মি মূর্তির ললাটে সূর্যতিলক এঁকে দেবে। মূল গর্ভগৃহে কোনও একটি মূর্তি প্রতিষ্ঠা হলেও, অন্য দুটি মূর্তিও যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে। একটি দীর্ঘ উপাচার মেনে মন্দিরের গর্ভগৃহে মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে একটি নগর যাত্রার। অযোধ্যার চারপাশে রথ ভ্রমণের পর ১৮ জানুয়ারি মন্দিরের গর্ভগৃহে মূর্তিটি স্থাপন করা হবে।