shono
Advertisement
Pranab Roy

বাবার পরিণতি দেখে অবিচার গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল, সিএবির জীবনকৃতি প্রাপ্তির আগে বলছেন প্রণব

ক্রিকেটার জীবন মোটেও সহজ ছিল না প্রণবের। চোট ভুগিয়েছে বারবার। পায়ের চোট। কোমরের চোট। তার উপর তিনি তারকা-পুত্র। পঙ্কজ রায় নামক এক দীর্ঘ ছায়ার সঙ্গে তাঁকে যুঝতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।
Published By: Subhajit MandalPosted: 04:05 PM Sep 14, 2024Updated: 04:05 PM Sep 14, 2024

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: প্রণব রায়ের সময়-সময় আক্ষেপ হয়। সময়-সময় আবার হয় না! ভেতরে-ভেতরে দ্বৈত সত্ত্বা তখন কাজ করে যেন। কখনও মনে হয়, দেশের হয়ে দু’টো টেস্টের বেশি এগোতেও পারত কেরিয়ার, যদি কেউ একটু আস্থার হাত রাখত পিঠে। কখনও আবার মনে হয়, যা পেয়েছেন, তা-ও বা পায় ক’জন? ক’জন পারে জীবনের পঞ্চান্নটা বছর ক্রিকেটের সেবায় দিয়ে দিতে? প্রকৃত সেবায়েতের মতো!

Advertisement

প্রণব রায় এটাও ঠিক করে রেখেছেন যে, শনিবার সিএবি প্রদত্ত জীবনকৃতি সম্মান হাতে নেওয়ার সময়, সময়-সরণি ধরে একটু হাঁটবেন। বলবেন, পঞ্চান্ন বছরের ক্রিকেট-সফরের কথা। যে সফরে কখনও তিনি প্লেয়ার, কখনও তিনি কোচ, কখনও জাতীয় নির্বাচক। বলবেন, সেই সফরে পাশে পেয়েছেন যাঁদের। বলবেন, তাঁদের কথা ও কাহিনি। ‘‘না বললে ঘোর অন‌্যায় হবে। ক্রিকেট যদি মহাসাগর হয়, তা হলে আমি তার সাঁতারু। পঞ্চান্ন বছর ধরে যে সমুদ্রে সাঁতার কাটার চেষ্টা করেছি আমি। চেষ্টা করেছি, সাধ‌্যমতো কিছু মণি-মুক্তো তুলে আনতে। এবার সেই সফরে আমার সঙ্গে ছিলেন যাঁরা, আমার বাবা (পঙ্কজ রায়) থেকে শুরু করে আরও অনেকে, বলব না তাঁদের কথা?’’ শুক্রবার সন্ধেয় ফোনে কথা বলার সময় স্মিত হাসেন প্রণব। যে কথা প্রসঙ্গে তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের প্রসঙ্গ আসে। দু’টো, মাত্র দু’টো টেস্ট খেলার পর যে শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রণবের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার।

খারাপ লাগে না ভাবলে?
‘‘যদি বলি লাগে না, তা হলে মিথ্যে বলা হবে। আরে, কেউ তো বলবে না দেশের হয়ে মাত্র দু’টো টেস্ট খেলা আমার লক্ষ‌্য ছিল। কিন্তু এটা ভেবে ভালো লাগে, যে খেলাটাকে ভালোবেসেছি আমি, গোটা জীবন সেই খেলাটাকে নিয়ে কাটিয়ে দিতে পেরেছি। আর অবিচার? বাবাকে দেখেছি তো। দেখেছি, কী ভাবে বাবার টেস্ট অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। অবিচার শব্দটা তাই বহু দিন আগে থেকেই আমার জীবনে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে,’’ এক নিঃশ্বাসে বলে যান বঙ্গ ক্রিকেটের সর্বকালীন ‘মাণিক‌্য’। তবে ভারত না করলেও বাংলা প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছে প্রণবকে। ৭২ প্রথম শ্রেণির ম‌্যাচে চল্লিশের উপর গড় রেখে ৪০৫৬ রান যার প্রমাণ। এবং বাংলা জার্সিতে এক আশ্চর্য ম‌্যাচকে নিজের সেরা বাছেন প্রণব। বাছেন, আটের দশকের শুরুতে এক বিহার ম‌্যাচকে! কারণ? কারণ, সে ম‌্যাচে কিনান স্টেডিয়ামের স‌্যাঁতস‌্যাঁতে পিচে, শূন‌্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেমে দেড়শো করেছিলেন তিনি! ‘জিরো কনফিডেন্স নিয়ে ব‌্যাটিং আর কখনও প্রণব করেননি, তাই।

মানতেই হবে, ক্রিকেটার জীবন মোটেও সহজ ছিল না প্রণবের। চোট ভুগিয়েছে বারবার। পায়ের চোট। কোমরের চোট। তার উপর তিনি তারকা-পুত্র। পঙ্কজ রায় নামক এক দীর্ঘ ছায়ার সঙ্গে তাঁকে যুঝতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। প্রণব রান পেলে লোকে বলত, পঙ্কজ রায়ের ছেলে রান করবে না তো কে করবে? আবার রান না পেলে সেই একই মুখগুলো ঠোঁট উল্টে বলত, পঙ্কজ রায়ের ছেলে হয়েও গোল্লায় গিয়েছে! ‘‘চেষ্টা করতাম, মাঠে নামার সময় বাবার ছায়াকে দূরে সরিয়ে রেখে নামতে। সমালোচনাকে গায়ে না মাখতে,’’ বলতে-বলতে আবার দুঃখের শনশনে বাতাস বয়। ‘‘কী জানেন, এক এক সময় মনে হয়, আমাদের সময় যদি এখনকার মতো প্রচুর খেলা থাকত, নিজেকে প্রমাণের সুযোগটা বেশি পেতাম। তখন ভারতীয় দল থেকে একবার বাদ পড়ে গেলে, ফিরে আসা বড় কঠিন হয়ে যেত। পরে জাতীয় নির্বাচক হই যখন, ঠিক করেছিলাম, যাকেই নিই, হুটহাট বাদ দেব না। পর্যাপ্ত সুযোগ আগে দেব।’’ জীবন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা একই জীবনে প্রয়োগ করে ক’জন?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ক্রিকেটার জীবন মোটেও সহজ ছিল না প্রণবের।
  • পঙ্কজ রায় নামক এক দীর্ঘ ছায়ার সঙ্গে তাঁকে যুঝতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।
Advertisement