গৌতম ব্রহ্ম: বাংলাদেশের জন্যে মনকেমন গঙ্গাসাগরের। ইউনুস জমানায় অত্যাচারিত সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্যে প্রার্থনায় একাধিক আয়োজন। কখনও শ্রীখোল বাজিয়ে নামগান কীর্তন। কখনও আবার পদ্মাপারের সনাতনীদের মনের জোর বাড়াতে পুরোহিতদের সমবেত মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র উচ্চারণ। কোথাও আবার ইউনুস বাহিনীর সুমতি ফেরার প্রার্থনায় লঙ্কাযজ্ঞ।
হ্যাঁ, ১১১ কেজি শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে যজ্ঞ! শান্তি প্রার্থনায় সৈকত স্পন্দিত। সাক্ষী ছিল সকালের কুয়াশামাখা রক্তিম সূর্য, মোহনার অবিরল ঢেউ। আর মিনি ভারতবর্ষ হতে যাওয়া বেলাভূমি। অগণিত সাধু, সন্ত আর পুণ্যার্থী। সবার একটাই বক্তব্য, হিন্দুদের উপর অত্যাচারের খবর তাঁরা পাচ্ছিলেন। কিন্তু সোমবার যেভাবে বাংলার মৎস্যজীবীদের হাত-পা বেঁধে অত্যাচারের ঘটনা সামনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়, তা উদ্বেগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে হিন্দুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো করে অত্যাচারের প্রতিবাদে মিটিং মিছিল করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনকেমনের ছবিটা সামনে আসেনি সেভাবে। যা বুঝিয়ে দিল গঙ্গাসাগরের কুয়াশামাখা বেলাভূমি। ওপার বাংলার হিন্দুদের ভালো থাকার আর্তিতে এপার বাংলাতেও চলছে, কোথাও যজ্ঞ, কোথাও চলছে বাংলাদেশে থাকা হিন্দুদের শান্তি কামনায় নাম সংকীর্তন, কোথাও আবার হয়েছে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ। আর যঁারা করছেন তঁারা কেউ সাধারণ ধর্মপ্রিয় ব্রাহ্মণ, আবার কেউ সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা। ১ নম্বর বিচের বেলাভূমিতে দেখা পুরোহিত নাড়ুগোপাল পন্ডা ও তন্ময় মাইতির সঙ্গে। তাঁরাই জানালেন, ইউনূস বাহিনীর সুমতি ফিরুক। বাংলাদেশ আগের মতো শান্ত হোক। এই প্রার্থনায় রাতভর লঙ্কা পুড়িয়ে যজ্ঞ হয়েছে। সকালে পুজোপাঠের ফাঁকেই গায়ত্রী জপ করে হয় সূর্যপ্রণাম। তারপর সমবেতভাবে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের পুরশ্চরণ।
এদিন তাদের সঙ্গে সাংবাদিক কথা বলতে গেলে, আমাদের প্রথমে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন তঁারা। এর পিছনে কারণ অবশ্য একটা আছে, যেভাবে সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অত্যাচারকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি ময়দানে নেমে পড়েছে তার অংশীদার হতে চাননি তঁারা। যখন শেষ পর্যন্ত তাদের নাম গোপনের আশ্বাস দেওয়া হল তখন বললেন, ওপার বাংলায় ভালো নেই হিন্দুরা। এপার বাংলায় বসে তা মেনে নিতে পারছেন না তঁারা অনেকেই। ভগীরথ মা গঙ্গাকে মর্তে আনতে এই গঙ্গাসাগরকে বেছে নিয়েছিলেন। যে মা গঙ্গা গোটা বিশ্বকে তঁার পবিত্র ধারা দিয়ে শান্তি স্থাপন করেন তিনিই তাদের রক্ষা করুন। তাঁদের বক্তব্য, “দেখুন আমরা সাধারণ পুরোহিত। গঙ্গাসাগরে যঁারা আসেন তঁাদের নিকট আত্মীয়ের আত্মার উদ্ধারের জন্য তর্পণ করি। কখনওবা সাংসারিক শান্তির জন্য মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করি। এর চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই।”
সৈকতে ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়ে গেল এক হরগৌরাঙ্গ সম্প্রদায়ের সঙ্গে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে। সজলকুমার পন্ডা, পূর্ণেন্দু মাইতি ও সনৎ মিশ্র। স্নান সেরে বেলাভূমিতে বসে খোল করতাল বাজিয়ে উচ্চস্বরে হরিনাম করছিলেন। তঁারা বললেন, বাংলাদেশে থাকা হিন্দুদের মঙ্গল কামনায় এই নাম সংকীর্তন করছেন তঁারা। ওই দলের এক সদস্য সনৎ মিশ্র বলছিলেন বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কথা। সবকিছু শেষে তিনিই বললেন, জানেন তো ওই মানুষগুলোর জন্য মন কাঁদছে আমাদের।