রাজকুমার হ্যারির অভিযোগ- তাঁর জীবনের সংবেদনশীল তথ্য সংবাদমাধ্যম ও পাপারাৎজি মহল ছলে-বলে হাতিয়েছে ফোনে আড়ি পেতে।
‘নকল’ সিবিআই সেজে একদল প্রতারক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশ। কোটিপতি নেতা থেকে বড়বাজারের শেঠ- ছাড় পাচ্ছে না কেউই তাদের বিছানো অর্থ-তছরুপের জাল থেকে। ‘প্রকৃত’ সিবিআই অফিসারদের নাজেহাল অবস্থা। অবশেষে ‘ক্লু’ মেলে। একজন প্রতারকের ফোনে আড়ি পাতার ব্যবস্থা করে সিবিআইয়ের ‘প্রকৃত’ তদন্তকারীরা। হাতে আসে জ্যাকপট। ফুলের পাপড়ি ছড়ানোর মতো করে উদ্ভাসিত হয় প্রতারকদের পরের সম্ভাব্য ‘অ্যাকশন প্ল্যান’। এভাবে সাজানো নীরজ পাণ্ডের ‘স্পেশাল ২৬’ সিনেমার প্লট। শেষে সিনেমার গতিপ্রকৃতি আমূল বদলে যাবে যদিও, তা সত্ত্বেও ফোনে আড়ি পাতার ছোট্ট মুহূর্তটি যে মোড়-ঘোরানো, সংশয় নেই।
প্রতারকদের ধরতে সুকৌশলে ‘আড়ি পাতা’ পুলিশি প্রতিরক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ। প্রশ্ন হল, অনুমতি ছাড়া আড়ি পাতার কাজটি কি একপ্রকার স্বতঃপ্রাণিত প্রতারণা নয়? সন্দেহের তালিকায় যে বা যারা আছে, তাদের কর্মকাণ্ডের হদিশ পেতে আড়ি পাতা হয়, অথচ এর সুবাদেই তো নগ্ন হয়ে যায় ব্যক্তিমানুষের একান্ত পরিসর! নিভৃতি হারিয়ে, সম্মান এবং সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিজীবনের আনাচকানাচ প্রতিক্ষণে যে নগ্ন হয়ে যাচ্ছে- আতশ কাচের তলায় থাকা মানুষ তা জানতেও পারে না। এটিই সবচেয়ে বেদনার আখ্যান, দুর্ভাগ্যের দলিল। সভ্যতার আধুনিকীকরণের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার স্বার্থে, নৈরাজ্য ঠেকিয়ে শৃঙ্খলার তালুক বজায় রাখতে আড়ি পাতার ‘বিকল্প’ এখন নেই।
বিশেষত, শাসক-শাসিতের সম্পর্কে যেখানে শাসক মনে করে তার সর্বাঙ্গীন পরিরক্ষণ এবং পরিপোষণের জন্য শাসিতের উপর অষ্টপ্রহর নজরদারি বহাল রাখতেই হবে- সেসব ক্ষেত্রে শাসিতের বেঁচে থাকার প্রতিটি প্রহর দুর্বিষহ হতে বাধ্য। কয়েক বছর আগে ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ঘিরে আড়ি পাতার অভিযোগ চরমে উঠেছিল। তখনও অজুহাত ছিল দেশের আপামর সুরক্ষার প্রশ্নটি। দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের লম্বা-চওড়া ন্যারেটিভকে বলা বাহুল্য জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। মূল ক্ষতের জায়গাটি যদিও অভিন্ন- অন্যের অজ্ঞানে, অন্যকে পরিজ্ঞাত হতে না-দিয়ে তার ব্যক্তি-বলয়ে সিঁধ কাটা।
[আরও পড়ুন: বন্দে ভারতের জৌলুসে অদৃশ্য রেলযাত্রীদের গণলাশ!]
‘আড়ি পাতা’ অর্থে এতক্ষণ আমরা যে ‘নজরদারি’-র কথা আলোচনা করলাম, তা ব্যতিরেকে আরও এক ধরনের আড়ি পাতার ঘটনা ঘটতে পারে। যেখানে অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য জেনে সেগুলিকে বিনোদনের উপায়-স্বরূপ ব্যবহার করে মুনাফা তোলা।
ব্রিটিশ রাজ পরিবারের ১৩০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন কোনও সদস্য। তিনি রাজকুমার হ্যারি। তাঁর অভিযোগের নিশানায় ছিল সংবাদমাধ্যম ও পাপারাৎজি মহল। হ্যারির জবানে, ছলে-বলে-কৌশলে বরাবর এদের সম্মিলিত অক্ষ তাঁর জীবনের গোপন, সংবেদনশীল এবং একান্ত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। তাঁর মা ডায়ানার জীবনও এদের পুচ্ছতাড়নায় বিষময় হয়ে উঠেছিল। ‘খবর’-কে আরও রোচক করতে আড়ি পাতার এহেন রুচি কতখানি সমর্থনযোগ্য?